“Ikigai” বইটা প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে। ইকিগাই শব্দটি জাপানী হলেও বইটা ইংরেজিতে লেখা। বইটি মিলেমিশে লিখেছেন দুইজন। একজনের নাম Héctor García আরেকজনের নাম Francesc Miralles। এই দুইজনের ব্যাপারে সংক্ষেপে ভালো করে জানার জন্য রকমারি ডট কমে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। এই ইকিগাই বইটার মোটামুটি তিনটা বাংলা ভাষায় অনুবাদ সেখানে পাবেন। এই বই মেলায় বের হয়েছে একটা। সেখানে শুরুতেই এই দুইজনের ব্যাপারে বলা আছে। ইংরেজি বইটাতেও বলা আছে। স্বাভাবিক। ঐখানে বাংলায় পাবেন আর কি।আর গুগলে তো আছেই। আপনারা ইংরেজিতে বইটা পড়বেন না তা আমি বলছি না।। যাই হউক, লেখকদের নিয়ে বেশি বলার দরকার নাই। লেখা নিয়ে বলার দরকার আছে।
আমি এই বই থেকে নির্বাচিত পাঁচটি উক্তি নিজের মতো করে অনুবাদ করব বলে মনস্থির করেছি। সে অনুবাদে যাওয়ার আগে ইকিগাই বইটা নিয়ে অনেকে যেসব প্রশংসা করেছে সেটা নিয়ে দুই চারটা কথা বলি। এই বইটা লস এঞ্জেলস টাইমস বেস্ট সেলার বই হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। বিভিন্ন পত্র, পত্রিকা ম্যাগাজিন এই বই নিয়ে অনেক প্রশংসা করেছে। যেমন New York Post বলেছে, “hygge” যদি কিছু না করার বিদ্যা হয়ে থাকে তাহলে ইকিগাই হল কোন কিছু সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আর আনন্দ নিয়ে করার কলাকৌশল”।
এই hygge কি জিনিস তা জানতে হলে ‘The Little Book of Hygge: The Danish Way to Live Well’ এই বইটা পড়তে পারেন। এই বইয়ের অনুবাদ আছে কি না তা আমার জানা নাই। ইকিগাই যেমন জাপানীদের জীবনের একটা দর্শন তেমনি hygge ডেনমার্ক এর মানুষদের একটা জীবন-দর্শনের অনুষঙ্গ। আরো একটা বই আছে। যে বইয়ে আপনি সুইডেনের মানুষদের জীবনের একটা দর্শনের অংশবিশেষ পাবেন। বইটার নাম- ‘Lagom: The Swedish Art of Balanced Living’। এই “লাগম” আর “হিউগি” এর অর্থ কি, তাদের নামের উৎপত্তি কিভাবে তা বিস্তারিত বলার উপায় এখানে নাই। ইকিগাই নিয়ে কথা বলা যাক তার বদলে।
আগেই জেনেছেন ইকিগাই একটি জাপানী শব্দ। এই শব্দের মানে করা যায় “বেঁচে থাকার কারণ” বা “জীবনের অর্থ” বা উদ্দেশ্য হিসেবে। এই শব্দটি দুইটি জাপানী শব্দ নিয়ে গঠিত। একটি হল ‘Iki’ যার অর্থ জীবন বা বেঁচে থাকা, আরেকটি শব্দ হল ‘gai’ বা ‘kai’ যার মানে হল “কারণ” বা “অর্থ”। মোদ্দাকথা, ইকিগাই মানে হল জীবনের মানে বা অর্থ, বেঁচে থাকার কারণ। সবার জীবনের একটা ইকিগাই আছে। একটা কারন আছে। যে কারন তাকে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়, তাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। এলার্ম ঘড়ি ভাববেন না কেউ আবার দয়া করে ইকিগাই কে!
জাপানীরা বেঁচে থাকে সবচেয়ে বেশিদিন আর তারা অনেক সুখীও হয় বলে ধারনা আছে। এই ধারনার বিস্তারিত জানতেই দুইজন লেখক জাপানের কিছু গ্রামের মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে বেড়ায়। এই গ্রামগুলোতে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এই বইটাতে জাপানীদের এত দিন বেঁচে থাকার কারন, তাদের সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। তারা কিভাবে খায়, কিভাবে ঘুমায়, কিভাবে চলাফেরা করে, কিভাবে কাজ করে, কিভাবে মিলেমিশে থাকে এসব কিছু জানা যাবে। আর যেটা জানা যাবে সেটা হল- কিভাবে তারা তাদের জীবনের ইকিগাই খুঁজে পায়, আসল অর্থ খুঁজে পায়, এগিয়ে চলার কারন খুঁজে পায়। এটাই যে আসল ‘কারণ’ জীবনে সুখী হওয়ার তার প্রমাণ পাওয়া যায় কিভাবে? কারণ তারা অনেক দিন বেঁচে থাকে আর সুখে বেঁচে থাকে।
অনেকদিন বেঁচে আছেন মানেই যে আপনি সুখে আছেন তা না সেটা সবাই জানে। আপনার জীবনে ইকিগাই আছে, তার মানে আপনার জীবন অর্থে পূর্ণ, আপনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আর সুখে বেঁচে থাকার রহস্যটি জেনে ফেলেছেন, জীবনের আসল উদ্দেশ্যটি আবিষ্কার করেছেন, সব সময় সক্রিয় আর অর্থপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকার আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন।
এখন এসব কথা না বলে বই থেকে কিছু উক্তি আওড়ানো যাক-
১- ‘আপনি যে কাজে আনন্দ পাননা সেসব কাজে সময় নষ্ট করা বন্ধ করেন’।
২- দীর্ঘ আর সুখী জীবনের রহস্য লুকিয়ে আছে- যথাযথ খাবার দাবার গ্রহণ, অনুশীলন, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা আর শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্ক এবং বন্ধন তৈরী করার মধ্যে।
৩- খাওয়ার আগে পরে “হারা হাছি বু”, “হারা হাছি বু” করেন। এটা জাপানী শব্দগুচ্ছ বুঝতেই পারছেন না বললেও। এটার অর্থ করা যায়- পেটের বিশ ভাগ খালি রেখে খান। আশি ভাগ ভরে খান এই আর কি। আর আস্তে আস্তে খান৷ পেটের শতকরা হিসাব কিভাবে করবেন তা কিন্তু এই বইয়ে বলা নাই!
৪- ‘সুখী হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হল- অর্থপূর্ণ কিছু করা, ভালবাসার কিছু থাকা আর আশায় বুক বেধে থাকা কিছুর জন্য’।
মানে আপনার জীবনে কাজ, ভালবাসা আর আশা থাকতে হবে।
৫- ‘আস্তেধীরে হাঁটেন। তাহলে আপনি অনেক দূর যেতে পারবেন’।
আস্তেআস্তে হেঁটে অনেক দূর কিভাবে যাওয়া যায় আবার! ঐ কথাটা মনে করতে পারেন- slow and steady wins the race। তাড়াহুড়ার দরকার নাই। পবিত্র কোরআনে আছে, “হে মানবজাতি, তোমাদের বড়ই তাড়াহুড়া।“
আরো কি কি বলা আছে তা বইটি পড়ে জেনে নিতে পারেন। ইংরেজি বইটি নীলক্ষেতে পাবেন তো অবশ্যই। অন্য আরো অনেক বইয়ের দোকানে পাবেন। আর বাংলা অনুবাদ পড়ার জন্য রকমারি থেকে অর্ডার করতে পারেন। নীলক্ষেতেও পাওয়া যাওয়ার কথা। ইংরেজি বইয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৮ টি। (এই তথ্য আমি কেন দিলাম জানি না!)