প্রথম পাতা » বিতর্কিত বিষয় » যখন বাচ্চাদের ডাকযোগে পাঠানো হতো

যখন বাচ্চাদের ডাকযোগে পাঠানো হতো

Baby mail

১৯১৩ সালের ১ জানুয়ারী আমেরিকার ডাক বিভাগ প্রথম পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস শুরু করে। পোস্ট অফিসগুলি যখন চার পাউন্ডের বেশি পার্সেল গ্রহণ করা শুরু করে তখন ডাকযোগে আপনি কী পাঠাতে পারবেন এবং কী পাঠাতে পারবেন না সে সম্পর্কিত নিয়ম কানুনগুলি অস্পষ্ট ছিল৷ লোকেরা ডিম, ইট, সাপ এবং অন্যান্য অস্বাভাবিক “প্যাকেজ” পাঠানোর মাধ্যমে এই সেবা পরীক্ষা করতে শুরু করে৷ কিন্তু তাই বলে মানুষ তাদের সন্তানদের পার্সেল করবে? আসলে এর বিরুদ্ধে কোনো পোস্টাল রেগুলেশন ছিল না।

প্রথম বেবি মেইল

১৯১৩ সালের জানুয়ারিতে, আমেরিকার ওহাইওর এক দম্পতি একটি বিশেষ ডেলিভারি করার জন্য মার্কিন ডাক বিভাগের নতুন পার্সেল পরিষেবার সুবিধা নিয়েছিলেন। ডেলিভারিটি হলো তাদের শিশু পুত্র। জেসি এবং ম্যাথিল্ডা বিগল নামে ঐ দম্পতি তাদের ৮ মাস বয়সী ছেলে জেমসকে তার দাদীর কাছে পার্সেল করেছিল, যিনি বাটাভিয়ার কয়েক মাইল দূরে থাকতেন।

১১ পাউন্ড ওজনের জেমসকে পাঠানোর জন্য তার পিতামাতাকে মাত্র ১৫ সেন্ট ডাকমাসুল পরিশোধ করতে হয়েছিল (যদিও তারা এজন্য $৫০ এর বীমা করেছিল)।

বিষয়টি দ্রুতই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তী বেশ কয়েক বছর ধরে আরো অনেক পিতামাতা এমন কাণ্ড করে বসেন।

baby parcel

ওহাইওয়ের ঐ বাচ্চার ঘটনাসহ ১৯১৩ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে বাচ্চাদের ডাকযোগে পাঠানোর সাতটি ঘটনা পাওয়া যায়।

আলোচিত বেবি মেইল

বিষয়টি অস্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ দূরত্বের জন্য, একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে একটি টিকিট কেনার চেয়ে রেলওয়ে ডাকে একটি বাচ্চাকে পাঠানোর জন্য স্ট্যাম্প কেনা অনেক সস্তা ছিল।

উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছে ১৯ ফেব্রুয়ারী ১৯১৪ সালে শার্লট মে পিয়েরস্টরফ নামে একটি চার বছর বয়সী মেয়েকে তার বাড়ি থেকে ৭৩ মাইল দূরে আইডাহোর গ্র্যাঞ্জভিলে তার দাদা-দাদির বাড়িতে রেলওয়ে ডাকে পাঠানো হয়েছিল।

৫৩ সেন্ট দিয়ে একটি স্ট্যাম্প কিনে মেয়েটির গায়ের কাপড়ের সাথে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তার গল্পটি এতটাই পরিচিতি পেয়েছিল যে এটি নিয়ে ‘মেইলিং মে’ নামে একটি বই বেরিয়েছিল।

May Pierstorff
May Pierstorff, যাকে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছিল

অবশ্য যারা তাদের সন্তানদের ডাকযোগে পাঠিয়েছেন তারা তাদের সন্তানদের কোন অপরিচিত ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন নি। গ্রামীণ এলাকায়, অনেক পরিবার তাদের মেইলম্যানকে বেশ ভালোভাবে চিনত।

পোস্টমাস্টার জেনারেল অ্যালবার্ট এস. বার্লেসন এই ঘটনা শোনার পরে বাচ্চাদেরকে পার্সেল হিসেবে গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করেছিলেন।

তবুও, নতুন নিয়ম অবিলম্বে জনগণকে তাদের সন্তানদের ডাকযোগে পাঠানো থেকে বিরত রাখেনি।

সমালোচিত বেবি মেইল

এক বছর পরে, একজন মহিলা তার ছয় বছরের মেয়েকে তার বাড়ি ফ্লোরিডা থেকে ভার্জিনিয়ায় তার বাবার বাড়িতে পার্সেল করেছিলেন। ৭২০ মাইল দূরে পাঠানো এই পার্সেল ছিল সবচেয়ে বেশি দূরত্বে পাঠানো বাচ্চাদের পার্সেল, এবং স্ট্যাম্পে মাত্র ১৫ সেন্ট খরচ হয়। এত বেশি দূরত্বে পাঠানোর জন্য ঘটনাটি অনেক বেশি সমালোচিত হয়।

সর্বশেষ বেবি মেইল

১৯১৫ সালের আগস্টে, তিন বছর বয়সী মাউড স্মিথকে তার দাদা-দাদি কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে ৪০ মাইল দূরত্বে তার অসুস্থ মায়ের কাছে পার্সেল করেছিল, যা বাচ্চাদের ডাকযোগে পাঠানোর সর্বশেষ ঘটনা বলে জানা যায়।

গল্পটি খবর তৈরি করার পরে, রেলওয়ে ডাকের সিনসিনাটি বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট জন ক্লার্ক তদন্ত করেন, কেনটাকির ক্যানেতে পোস্টমাস্টার কেন একটি শিশুকে রেলওয়ে ডাকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন যখন এটি স্পষ্টভাবে নিয়মবিরুদ্ধ।

যদিও মাউডকে সর্বশেষ পার্সেল করা শিশু বলে মনে করা হয়, অন্যরা পরেও তাদের সন্তানদের পার্সেল করার চেষ্টা করেছিল। ১৯২০ সালের জুনে, প্রথম সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল জন সি. কুন শিশুদের পার্সেল করার দুটি আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই বলে যে, পরিবহনে খাবার-পানি লাগে না, তাদেরকে এমন “নিরীহ জীবন্ত প্রাণী” হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যাবে না।

ban baby parcel

বাচ্চাদের পার্সেলের সমাপ্তি

পোস্ট অফিস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৫ সালে বাচ্চাদের পার্সেল বন্ধ করে দেয়।

তবে আমোরিকার ডাক বিভাগ এখনও কিছু শর্তে হাঁস-মুরগি, সরীসৃপ এবং মৌমাছি সহ জীবন্ত প্রাণীদের ডাকে পাঠানোর অনুমতি দেয়।

বিতর্কিত বিষয় থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মোরশেদ আলম
পেশায় একজন শিক্ষক, শখের ভ্রমণকারী এবং অবসরে একজন নেটিজেন।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *