পশ্চিমবঙ্গের অঞ্জন দত্ত বাবুর নামে ফেইসবুকে একটা ফ্যান গ্রুপ আছে। সেখানে তার ভক্তরা ছাড়াও অঞ্জন দত্ত নিজেও আছেন। উনি সেই গ্রুপের বিভিন্ন পোস্টে মাঝে মাঝে কমেন্ট করেন। প্রশংসা করেন, আবার গালিও দেন।
সেই গ্রুপের অলিখিত শর্ত হচ্ছে তাকে অযথা তেল মেরে কোনও পোস্ট বা কমেন্ট করা যাবে না। সেরকম হলে অঞ্জন বাবু তো বটেই, তার ডাইহার্ড ফ্যানেরা এসেও ওই পোস্ট বা কমেন্টকারীকে ধুয়ে দিবে।
যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে সেখানে ওয়েলকাম করা হয়। একটা গান বা মুভিকে আরও ভালো কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়৷ এবং আশ্চর্যজনক ভাবে, সেই সাজেশন গুলো পরবর্তীতে নাকি এপ্লাইও করা হয়৷
ব্যাপারটা চিন্তা করার মত।
অঞ্জন দত্ত নিজে একজন গায়ক, গীতিকার, কবি, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক – মানে মাল্টি ট্যালেন্টেড মানুষ। বেলা বোস বা রঞ্জনা গান দিয়ে তাকে চিনলেও তিনি যে মুভিগুলো বানিয়েছেন সেগুলোর শিল্পমান বিচারে তিনি সমসাময়িক অনেকের চেয়েই এগিয়ে।
ফিল্ম ডিরেক্টর সৃজিত মুখার্জিকেও ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ বানানোর পরে সবাই মিলে অনেক নেগেটিভ সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। তিনি এই ওয়েব সিরিজ নিয়ে কারও প্রশংসামূলক লেখা শেয়ার দেয়ার সাথে সাথে অনেকেই সেখানে গিয়ে তাকে ভবিষ্যতে আরও খেয়াল করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিল। আমি সেখানে পালটা আক্রমণ করতে দেখি নাই কাউকে।
এখন আসেন বাংলাদেশের দিকে তাকাই।
আমাদের লেখক, কবি, চিত্র পরিচালক, গায়কদের দুইটা গান বা সিনেমা হিট হলেই তাদের একটা পাগলা ফ্যানগ্রুপ দাঁড়িয়ে যায়। খেলোয়াড়দের কথা না হয় বাদই দিলাম। তাদের সংশ্লিষ্ট পেইজ বা গ্রুপে কেউ যদি সমালোচনা করে, তবে সেই ব্যক্তিকে পাগলা ভক্তরা এসে তুলোধুনো করে।
এই যে সেলিব্রিটিদের ‘দেবতা পূজা’ করার যেই সংস্কৃতি টা, এটা এখন খোদ কোলকাতা বা পুরো ইন্ডিয়াতেও ধীরে ধীরে চেইঞ্জ হচ্ছে। ইমপ্রুভমেন্ট এর প্রয়োজনেই।
আমাদের সেলিব্রিটিদের আমরাই মাটিতে পা রাখতে না পারা শিখিয়েছি। তাদেরকে বোঝাতে হবে তারাও মানুষ। তাদেরও দায়বদ্ধতা আছে।
নইলে ‘আমি বড় লেখক/বড় খেলোয়াড়/বড়মাপের শিল্পী’ – ধরনের কথাগুলো শুনে হজম করতে শিখে যান। বমি করাও নিষেধ।