পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে আসা কয়েকজনের সাক্ষাতকার নেওয়া হলো। তারা অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। নিঃসন্দেহে ঘটনাটি দুঃখজনক। অত্যন্ত আমোদের সাথে ফেসবুকে সাক্ষাতকারগুলো ভাইরাল হচ্ছে। হাসাহাসি হচ্ছে। কিন্তু এই যে অজ্ঞতা এর জন্য দায়ী কারা? বাংলা বারো মাসের নাম, ছয় ঋতুর নাম, কত বঙ্গাব্দ চলছে কিংবা আরো কয়েকটি ‘জ্বালাময়ী’ প্রশ্নের সঠিক উত্তর ‘ওরা’ দিতে পারেনি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তাঁর জ্ঞানের দীনতা স্বীকার করে বলেছিলেন : ‘বিপুলা পৃথিবীর কতটুকু জানি!’ তবে তাঁর জানার আগ্রহ ছিল। আমাদের অবশ্য তা নেই। আমরা কিছু না জেনেও ‘সবজান্তা!’
সাক্ষাতকারের প্রশ্নগুলো একজন শিক্ষার্থীর জন্য বেসিক জ্ঞান। এগুলো জানা দরকার। তবে অজানার ইতিহাস এদেশে নতুন নয়। ‘আমি এ প্লাস পেয়েছি’র ইংরেজি কিন্তু ‘আই এম জিপিএ ফাইভ’ হয়েছে বহুবার! তখনো এগুলো ভাইরাল হয়েছিল! কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কেউ কথা বললো না। এই অজ্ঞতার পেছনে এদেশের প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। প্রতিটি পরিবার থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত- সকলেই এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য দায়ী। আপনার সন্তানকে শাসন করতে মানা, নকল করতে দিতে হবে, অন্যায় সুযোগ মা-বাবাও হয়েও তো চান- তাহলে বিদ্যাটা হবে কীভাবে? কেউ কি ভাবি আমার সন্তান জ্ঞানী হোক, ভালো মানুষ হোক? আমরা চাই আমাদের সন্তান পাশ করুক, এপ্লাস পাক, গোল্ডেন পাক, ডাক্তার হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক। হচ্ছেই তো! সমস্যা তো নাই! আপনার চারপাশে অসংখ্য বিএ পাশ ছেলেমেয়ে আছে। দেখবেন তারা একদিনও ক্লাস করে নাই, চাকরি করে, ব্যবসা করে, বিয়ে করে আবার বিএ পাশও করে! কেমনে? বিদেশে এ জিনিস সম্ভব? আপনাকে গোপনে বলি: সে যেখান থেকে পাশ করছে সেখানে ফেলের সিস্টেমই নাই!
একদিন জিগাইছেন: ক্লাস না করলে পাশ করলি কেমনে? আজ ঋতুর নাম জানে না বলে হাসেন ক্যান?
একজন ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ার অপরাধে একজন অধ্যাপকের চাকরি যায়, অথচ শিক্ষককে রক্তাক্ত করলে আমরা ছাত্র মহাশয়ের একটা লুম্বাও ছিঁড়তে পারি না এদেশে ! একদিনও চিন্তা করেছেন একজন শিক্ষক কতোটা নিরাপত্তাহীনতায় এদেশে জ্ঞানের আলো ছড়াতে চায়! একজন শিক্ষক তাঁর কতিপয় কুলাঙ্গার ছাত্রের কারণে জেলে গেলেন, বিচার চেয়েছিলেন? সুশিক্ষা আশা করেন কার কাছে? একজন কয়েদি কি শিখা অনির্বাণ হতে পারে? তবু হয়তো কেউ কেউ হয় এদেশে।
বাংলা ভাষার জন্য আমাদের ভাইয়েরা রক্ত দিল। কিন্তু আমরা তো সর্বত্র বাংলাকে চালু করতে পারলাম না। ‘বঙ্গাব্দ দিয়া আমরা কী করিব?’ ঢাকা তো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় নাম্বার ওয়ান টুতে উঠানামা করে! এখানে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরতের পার্থক্য ক্যালেন্ডার ছাড়া আর কোথায়? বাংলার সব কিছুই তো আপনার কাছে হিন্দুয়ানি মনে হয়। মাসের নাম জানার দরকার কী বাহে?
এ ঘটনায় সবচেয়ে মজা পাইছে তাওহিদি ভাইয়েরা! তেনারা দাঁত কেলায়ে হাসতেছে! বৈশাখের সাড়ে সর্বনাশ! সংস্কৃতিওয়ালারা গেলো কনে? কত টিজিং! মিয়া, ৯০ পারসেন্ট মুসলমানের দেশে পাঁচ কলেমা কয়জন জানে জিগাও না! কয়টা হাদিস, কয়টা সুন্নত, কয়টা নফল জানে একবার সাক্ষাতকার নাও না! চার খলিফার নাম, হিজরি সনের আশয় বিষয় একবার জিজ্ঞেস করলেই এদেশের মুসলমানের সংজ্ঞাটা জানবেন। এতো চোর, এতো দুর্নীতিগ্রস্ত, এতো বাটপার মুসলমান পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। একজন দোকানদার কি পারবে কাস্টমারদের জিম্মাদারিতে একটি দোকান রেখে আসরের নামাজে যেতে? যেদেশে মসজিদে প্রবেশের সময় দামি জুতা বগলে চেপে যেতে হয় সেদেশের মুসলমানদের ইমান আমল জান্নাতে যাওয়ার জন্য কতটুকু কাজে আসবে তা আল্লাহ মালুম।
মূলত আমাদের দেশে একটি ‘অজ্ঞ’, ‘নির্দয়’, ‘মোবাইলপ্রিয়’, ‘শিক্ষাবিমুখ’ এক জেনারেশন বেড়ে উঠছে। এর দায় আপনারও আছে, আমারও আছে। এবার হাসি থামান।