পৃথিবী নামক গ্রহে বাংলাদেশ নামের একটি ভূ-খণ্ড আছে। এই দ্যাশের মানুষের সব আছে। শুধু একটি বিষয় ছাড়া। জিনিসটার নাম ‘ধৈর্য’। এরা ধৈর্য ধরতে জানে না। পৃথিবীর বহু দেশ যুগ যুগ ধরে যুদ্ধ করেও যেখানে মুক্তির স্বাদ পায় নাই, সেখানে বাঙালিরা মাত্র নয়মাসে একটি দেশের স্বাধীনতা আনে। রবার্ট ব্রুসের মতো ধৈর্য থাকলে বাংলাদেশ সেই কবেই পৃথিবী থেকে ‘নাই’ হয়ে যেতো!
পৃথিবীতে চকলেট নামে এক জিনিস আছে। এই গ্রহে বাঙালি একমাত্র প্রাণি যারা চকলেটটাও চাবায়ে খায়।
এদের জন্য পবিত্র কুরআনে আয়াত আছে- “হে মানবজাতি! তোমাদের বড়ই তাড়াহুড়া!” বাঙালির চুইষা খাওয়ার সময় নাই, তাই মরণকামড় দেয়!
মানবজাতি তথা বাঙালি জাতির তাড়াহুড়ার নমুনা পাবেন বাসে, ট্রেনে, ট্রামে উঠতে গেলে। এরা একজন আরেকজনের শরীর মাড়িয়ে দেদারসে ওপরে ওঠে যায়। সার্ট, জুতা ছিঁড়ে দেয়, পকেট কেটে নেয়, ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ পদ্ধতিতে অন্যের সিটে বসে এরা ঘুমহীন নিদ্রা যায়। উঠতে কইলে ঘাড় বাঁকা করে জিগায়- আমারে চিনস? যে চিনে সে বেঁচে যায়, যে চিনে না সে পির রেখে বটগাছ সেলাম করে! করুক। তাতে আমার কী! ধৈর্যের গল্প করতে গিয়ে অন্য গল্প করছি তাই আপনারাও হয়েছেন ধৈর্যহারা! বেবাকতে নিচে নামতে চাইতাছেন। এট্টু ধৈর্য ধরেন।
গত দেড় বছর হলো পৃথিবীতে একটা ভাইরাস ‘খেইল’ দেখাইতেছে। তার ছোঁয়া আছে বঙ্গদেশেও। করোনায় এই দ্যাশের অনেকের পোয়াবারো। তারা মিলাদ পড়ে। করোনা আরো থাক বছর দশেক! সুখ সুখ সুখ!!! দ্যাশে জনসংখ্যা গত দেড় বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে। মানুষের চোখে ঘুম নাই। সারারাইত ‘নাইট’ করে! চেনাজানা হগ্গলেই পোলাপাইন নিল আবার, আবার এবং কেউ কেউ আবারো! এখানেও এরা ধৈর্যহারা!
গাও-গেরামে অনলাইন ঢুকে না। এইট নাইনে পড়া ছোট ছোট মেয়েদের বিবাহ খাইলাম চার-পাঁচটা। প্রতিদিনই বিয়ার ধুম। এদের মাবাবা আর পড়াবেক না! তারা মনে করছে এই দ্যাশের স্কুল কলেজ আর খুলিবেক না! কেমন ধৈর্যহীন গার্জিয়ানরে বাবা! ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ এই কথাটা বলতে গিয়া শুনলাম অন্য কথা। সবুরে নাকি নাতি মিলে! ছিঃ ছিঃ!!!
বাংলার দামাল ছেলেদের বিরাট একটা অংশ কাজেকামে নেমে গেছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাটাও আর শতভাগ তো পরের কথা, পঞ্চাশ ভাগ হয় কি না সন্দেহ করি! পেট করোনা চিনে না। বইখাতা কটকটিওয়ালারে দিয়া এরা বেড়িয়ে গেছে জীবিকার সন্ধানে। এরা আর কোনোদিনই স্কুলে ফিরবে না! এরা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে। আমাদের এমপি মন্ত্রীদের মতো ধৈর্য আল্লাহ পাক এদের দেন নাই!
আইজ জাতির এই ধৈর্যহীন প্রান্তরে শতবর্ষী এক বিদ্যাপীঠের সর্বোচ্চ ব্যক্তিও ধৈর্যের ছবক দিলেন। তিনি বিনয়ের সাথে বলেছেন, পড়াশোনা জীবনে করা যাবে, এখন প্রয়োজন ধৈর্য! কিন্তু গাও-গেরামের লোকেরা কাজ সাইরা ফালাইছে! ধৈর্য ধরবে কবে? আমরা তিনাদের দেখে ধৈর্যের একটা শিক্ষা নিতে পারি। দেখবেন, ইহারা পদে থাকার নৈতিকতা হারাবে কিন্তু পদ আঁকড়ে থাকবেন। নানা ব্যর্থতায় এরা বিপর্যস্ত হবেন কিন্তু কাঁঠালের আঠার পিরীতির মতো লেগেই থাকবেন। ঐ পদগুলো তাঁদের বাপ-দাদার! ওগুলো ছাড়তে নেই!
গত দেড় বছরে ইহার মুখে একবারও শুনেন নাই যে, যে কোনো উপায়ে দ্যাশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা উচিত। আমাদের প্রজন্মকে মানসিক মৃত্যুর কবল থেকে বাঁচানো উচিত। এমন ধৈর্যশীল মানুষের কথায় আপনারা যদি ধৈর্য ধরতে না পারেন তবে আপনাদের বুঝানোর মতো ধৈর্য আমার নাই!!!