স্ত্রী স্বামীকে দিতে পারলেও স্বামী স্ত্রীকে দিতে পারবেনা
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মানব ও জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করে সৃষ্টির উদ্দেশ্য বিষয়ে পবিত্র কুরানে ঘোষণা করেন “আমি জীন ও মানবজাতীকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬) সৃষ্টি করে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছেন যে কর্মসূচি পালন করাই আমাদের জন্য আল্লাহর ইবাদত করা।
আর এ জন্য তিনি ১০৪ খানা সংবিধান, ব্যবহার বিধি বা ম্যানুয়াল দিয়ে পাঠিয়েছেন এই দুনিয়ায় আর সেই ব্যবহার বিধি বা ম্যানুয়ালের সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশেষ কার্যকরি সংবিধান হলো মহাগ্রন্থ আল্-কুরান যেটি কুরানুল হাকিম, কুরানুল কারীম, কুরানুল মাজীদ, আল-ফুরকান যথাক্রমে বিজ্ঞানময় কুরান, মহিমান্বিত কুরান, মর্যাদাবান্বিত কুরান, সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী ইত্যাদি নামে সমধিক পরিচিত। এই সংবিধান, জীবন বিধান তথা মহাগ্রন্থ আল্-কুরানে আল্লাহ তায়ালা রাজনীতি, সমাজনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির ন্যায় অর্থনীতিও নিবিষ্ট করেছেন। আল্লাহ সুবহাহানাহু তায়ালা যে অর্থনীতি আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন সেটি ইসলামী অর্থনীতি নামে পরিচিত। যাকাত ইসলামী অর্থনীতির একটি অংশ।
যাকাত আরবি শব্দ যেটির অর্থ পবিত্র, শুদ্ধ, পরিশুদ্ধ, পরিবৃদ্ধি ইত্যাদি। অর্থাৎ যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র, পরিবৃদ্ধি বা পরিশুদ্ধ হয়।
এটি ইসলােমর পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষকে প্রতি চন্দ্রবছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা বা মালে নিসাব হয় তবে, শরিয়ত নির্ধারিতদের মধ্যে বিতরণের পদ্ধতিকে যাকাত বলে।
সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সম পরিমান সম্পদকে মালে নিসাব বলে। আর এই পরিমান সম্পদ কারো অধীনে এক পূর্ণচন্দ্র বছর থাকলে তাকে মালিকে নিসাব বলে। মালিকে নিসাব এর উপর নির্ধারিত হার অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ আল্লাহ কতৃর্ক নিধার্রিত খাতে যাকাত প্রদান করা ফরজ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরানের অনেক আয়াতেই সাধারণত যেখানেই সালাত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন সেখানেই যাকাতের কথা বলেছেন। “আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর।” (সূরা বাকারা: ৪৩)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর প্রাপ্ত বয়ষ্ক হলে সালাত ফরজ করেছেন সাথে সাথে স্বরণ করে দিয়েছেন শুধু পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করলে পূণ্য হবেনা আরো অনেক কাজ করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম মালিকে নিসাব হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। “শুধু এটাই ভালো কাজ নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব আর পশ্চিম দিকে ঘুরাবে; বরং ভালো কাজ হলো ঈমান আনয়ন করা আল্লাহর প্রতি, শেষ দিনের প্রতি, ফেরেশতাগণনের প্রতি, কিতাব ও নবীগণের প্রতি আর যে সম্পদ দেওয়া হয়েছে তার প্রতি মুহাব্বত থাকা সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণ, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারী এবং বন্দিমুক্তি করতে খরচ করা এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং যা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করা, ধৈর্যধারণ করা কষ্ট, দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী।” (সূরা বাকারা :১৭৭)
মুমিনদের বন্ধু যারা হবেন তাদের মধ্যে সামর্থবানদের যাকাত আদায়কারী হতে হবে সেটিও আল্লাহ এই মহাগ্রন্থে ঘোষনা দিয়েছেন “তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে।” (সূরা মায়েদা : ৫৫)
মুমিনদের বন্ধুরা সামর্থবান হওয়া শর্তে যাকাত প্রদান করবে সেটিও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন “আর মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, তারা (মানুষকে) ভালো কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ থেকে বাধা প্রদান করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আত-তাওবা : ৭১)
সামর্থবান সফরে থাকেন আর যেখানেই থাকেন সেখান থেকেই তিনি যাকাত প্রদান করতে পারবেন “আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন।” (সূরা মারইয়াম : ৩১)
আল্লাহ রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়ার পর প্রকৃতপক্ষে মুমিন যারা জমিনে সালাত প্রতিষ্ঠার মতো বিভিন্ন ভালো কাজের সাথে যাকাত আদায় করবেন তারা “তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।” (সূরা হজ্জ: ৪১)
প্রকৃত মুমিন যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় নয় সক্রিয় থাকবেন সেটিও কুরানে ঘোষণা এসেছে “(১) অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে (২) যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত (৩) আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ (৪) আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়।” (সূরা মুমিন : ১-৪)
আখিরাতের নিশ্চিত বিশ্বাসীদের চেনার লক্ষণ হলো তারা সালাত কায়েমের সাথে সাথে যাকাত প্রদান কারী হবেন
“যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়। আর তারাই আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।” (সূরা নামল: ৩) সালাত হলো শারীরিক ইবাদত আর যাকাত আর্থিক ইবাদত মানুষের অর্থের প্রতি মোহ থাকে কিন্তু যারা প্রকৃত মুমিন তারা এই মোহকে অতিক্রম করে যাকাত প্রদান করে “যারা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, আর তারাই আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।” (সূরা লুকমান : ৪)
সমাজে লক্ষ্য করলে দেখা যায় অনেকে সালাত আদায় করে কিন্তু সামর্থবান হওয়া সত্ত্বেও যাকাত প্রদান করেনা তারা প্রকৃতপক্ষে আখিরাতে বিশ্বাস করেনা “যারা যাকাত দেয় না। আর তারাই আখিরাতের অস্বীকারকারী।” (হা-মীম আস-সাজদা : ৭)
যাকাতের ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষের সমতার বিধান করে সামর্থবান নারী হলেও তাকে অন্যান্য ভালো কাজের সাথে সাথে যাকাত প্রদানের হুকুম করেছেন- “আর তোমরা (নারীরা) নিজ বাড়িতে অবস্থান করো এবং জাহেলী যুগের মত (নিজের) সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা নামাজ কায়েম করো। যাকাত আদায় করো, আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করো। হে নবি পরিবার! আল্লাহ শুধু চান অপবিত্রতাকে তোমাদের থেকে দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” (সূরা আল আহযাব : ৩৩)
অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় যাকাত প্রদান করতে হবে একনিষ্ঠভাবে “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।” (সূরা বায়্যিনাহ: ৫)
আমরা পবিত্র রমদানুল কারীম অতিবাহিত করছি। এ মহিমান্বিত মাসে সিয়াম সাধনার সাথে সাথে আরেকটি ইবাদত রয়েছে সেটি সদাকাতুল ফিতর। ফিতর এবং সদাকা দুটি শব্দই আরবি যার অর্থ খোলা বা ভাঙ্গার দান অর্থাৎ রমদানুল মুবারকের সিয়াম ভাঙ্গা বা খোলার জন্য শরিয়তমতে ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে প্রদত্ত দান বা সদাকাকে সদাকাতুল ফিতর বলে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ ১৪৪৫ হিজরী সনের সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা এবং সবোর্চ্চ ২৯৭০ টাকা সদকাতুল ফিতর এর পরিমান নির্ধারণ করেছে। (তথ্যসূত্রঃ মার্চ ২১, ২০২৪, বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
ফিতরা বা যাকাত আদায়ের খাত ও নিসাব একই। তবে যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেমন মালে নিসাব মালিকে নিসাবের নিকট এক পূর্ণচন্দ্র বছর থাকতে হয় কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে এক চন্দ্র বছর পূর্ণ হওয়ার প্রয়োজন হয়না শুধুমাত্র ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় মালিকে নিসাব হলেই তার ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।
এছাড়া মুমিনগন সাধারণত এই মহিমান্বিত মাসে তাদের উপর ফরজ যাকাত প্রদান করে থাকে। যাকাতের মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্রতা দূর হয়, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ হয়ে এক সাম্যবাদি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পবিত্র কুরানের বিভিন্ন আয়াতে যাকাত ফরয হওয়ার দলিল, গুরুত্ব ইত্যাদি বর্ণিত হলেও নিম্নোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাকাত তথা সদাকা প্রদানের খাত ঘোষণা করেছেন “দান-সদাকা শুধু নিঃশ্ব, অভাবগ্রস্থ, যাকাত বা দান-সদাকা ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মী, ইসলামের প্রতি অনুরাগী, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্থ এবং আল্লাহর পথে জিহাদ ও সফরকারীদের জন্য, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আত্-তাওবার: ৬০)
উল্লেখ্য মালিকে নিসাব তার ঊর্ধ্বক্রম যেমন মা-বাবা, দাদা-দাদি বা তারও উপরে এবং নিম্নক্রম যেমন ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী বা তারও নিম্নক্রমদের ফিতরা বা যাকাত দিতে পারবেননা কারন তাদের ভরনপোষণের দায়িত্ব মালিকে নিসাবেরই।
আবার স্ত্রী মালিকে নিসাব হলে স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে(শর্তপূরণ সাপেক্ষে) তবে স্বামী স্ত্রীকে দিতে পারবেনা কারণ স্ত্রীর ভরণপোষণ বহন করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাকাত বা সদাকার জন্য এই ৮টি খাতকে নিধার্রিত করে দিলেন কিন্তু বাংলাদেশের মানুষদের সঠিক খাতে যাকাত প্রদান না করে ভিন্ন খাতে দান করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। প্রতিযোগিতায় লিপ্ত খাতগুলোর অগ্রভাগে রয়েছে মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি যে খাতে যাকাত প্রদান করলে আদায় হবেনা এবং যাকাত প্রদান না করার ফলে গুনাহগার হতে হবে মালিকে নিসাবকে।
পর্যবেক্ষণে এসকল খাতে বেশি বেশি দান করার কারণ হিসাবে পরিলক্ষিত হয় দুটি বিষয় তাহলো— ১. সওয়াব ও ২. সামাজিক মর্যাদা কারো কারো ক্ষেত্রে বিপরীত ক্রম ও দেখা যায়। সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার জন্য দান-সদাকা করা হলে সেটি “রিয়া” হয় আর “রিয়া” কারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ধ্বংসের কথা ঘোষণা করেন “৪. ধ্বংস ঐ সমস্ত সালাত আদায়কারীদের জন্য ৫. যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে নিবোর্ধ ৬. যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” (সূরা মাউন: ৪-৬)
বিশ্বনবী (সঃ) দান-সদাকাকে গোপনে করার জন্য তাকিদ দিয়ে বলেছেন— “দান এমনভাবে করবে যেন ডানহাত দ্ধারা দান করবে কিন্তু বাম হাত জানতে পারবেনা”।
আবার নিঃশ্ব, অভাবগ্রস্থদের খাওয়ানো একটি সদাকা বা উত্তম কাজ কেননা দান-সদাকার জন্য যে ৮টি খাত আল্লাহ তায়ালা নিধার্রণ করেছেন তার মধ্যে এই দুইটি খাতের স্থান সর্বাগ্রে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই কোন ব্যক্তি মারা গেলে কুলখানীর আয়োজন করা হয় এবং সেখানে বড় বড় ব্যবসায়ী, সমাজপতিদের অধিক পরিমাণে সমাদর করা হয় এবং অনুষ্ঠানস্থল এমনভাবে সাজসজ্জা করা হয় যেন শোকানুষ্ঠান আনন্দঘন অনুষ্ঠানে পরিণত হয় ফলে যারা নিঃশ্ব, অভাবগ্রস্থ বা প্রকৃতপক্ষে এই খানা পাওয়ার হকদার তাদের উক্ত অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার সীমিত হয় অবশেষে অর্থ-সম্পদ, সময়, শ্রম ইত্যাদি ব্যয় করেও সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ অর্জনের আশংকা করা হয় যেটি কখনো কাম্য হতে পারেনা।
মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দান করে আলিশান করা জরুরী নয় কারণ মসজিদের বা মাজারে যিনি শায়িত আছেন তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার বা পোষাকের প্রয়োজন হয়না বরং অভাবগ্রস্থদের বা মাজারে শায়িত মৃত্যুব্যক্তির নিকট যারা এগুলোর জন্য প্রার্থনা করেন তাদের প্রয়োজন। মাজারে শায়িত মৃত্যুব্যক্তির সাহায্য করার কোন ক্ষমতা নেই সেই ক্ষমতা শুধুমাত্র এক আল্লাহ তায়ালার ই আছে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা দান করার যে ৮টি খাতের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহে দান করার কথা উল্লেখ করেননি। বরং সালাতের ওয়াক্ত হলে মসজিদের সামনে যে সকল ভিক্ষুক সালাতের জন্য অপেক্ষা না করে একটু সহানুভূতির জন্য অপেক্ষা করে তাদেরকে ঐ দানের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে যেন তারা আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য নয় সালাতের জন্যই মসজিদে আসতে পারে।
মসজিদ মাটির তৈরি হলে এবং সেখানে ইবাদত বন্দেগী করলে সওয়াব কম হয়না। বরং মাটি, পাথরের উপর সালাত আদায় করার পর রসুল (সঃ) এর কপালে এবং হাটুতে পাথরের দাগ পরিলক্ষিত হতো। রসুল (সঃ) এর সময়কার মসজিদগুলো এমনই ছিল আজ আমাদের অতিশয় বাড়াবাড়ির কারণে বর্তমানে অধিকাংশ মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহ, বাহ্যিকভাবে যতই পাকা বা আলিশান ভবনে পরিনত হয়েছে বা হচ্ছে সমাজের মানুষ আভ্যন্তরীনভাবে ততই কাঁচা হচ্ছে বা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশের মসজিদ কমিটির সদস্যগন বাহ্যিক সাজ সজ্জায় বিশ্বাসী বিলাসী দানবক্স তৈরি করে মানুষকে লজ্জায় ফেলে দিয়ে যাকাত, ফিতরা, সদাকা বা চাঁদা তুলে উন্নত মানের টাইলস দিয়ে দামি দামি এসি সেট করে বাহ্যিক দৃশ্য পরিবতর্ন করে বিলাসিতার ধ্যানে মগ্ন যার ফলে মালিকে নিসাবের যাকাত, ফিতরা বা সদাকা সঠিক খাতে প্রদান ব্যহত হচ্ছে এবং এগুলোর প্রকৃত হকদার বঞ্চিত হচ্ছে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মসজিদ কমিটির সদস্য কারা হবেন সদস্যদের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তা পবিত্র কুরানে ঘোষনা করেছেন—“নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে সালাত ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতিত আর কাউকে ভয় করেনা। অতএব আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তভূর্ক্ত হবে।” (সূরা আত্-তাওবা: ১৮)
কমিটিগুলোর সদস্যরা যদি এমন বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারী হতেন তাহলে তাঁরা মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় বরং সমাজের মানুষের আভ্যন্তরীন সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে বেশি প্রতিযোগিতা করতেন ফলে সেখানে বিশৃঙ্খলা, বৈষম্য, অভাব অনটনের স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতো।
ইসলামি অর্থনীতির যাকাতের পরিপন্থী সূদ ভিত্তিক অর্থনীতির এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের অভাবের ফলে শ্রীলংকা ২০২২ সালে দেওলিয়া হয়ে যায় ফলে জনগন রাস্তায় এসে রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান কে দেশত্যাগে বাধ্য করে এবং সরকারের অন্যান্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। যদি যাকাত ভিত্তিক ইসলামি অর্থনীতি গ্রহন না করে অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেক দেশের জন্য এমন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। ইসলামি অর্থনীতি জাতীয়বাদী সংকীর্নতায় নয় সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।
মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক(এবিডি)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
+৮৮০ ১৯১১ ৯৮১১৪৪
alhelaljudu@gmail.com