শুক্রবার দ্বিপ্রহর ২ ঘটিকায় বাড়ির অন্দরমহলে হাট বসিল।
ক্রয় – বিক্রয়ে দাম কষাকষিতে কোলাহল পূর্ণ হইয়া উঠিল অন্দরমহল। বরের বাপের উক্তিতে গুণকীর্তনের এক মহাভোজের তৃপ্তির স্বাদ আস্বাদন করিতে হইল কনে পক্ষের।
‘তবে যাহাই বলেন বরের দিকটা আপনাদের এতটুকুন তো বিবেচনা করিতেই হইবে। এম.এ পাশ দিয়া কেবলই পাত্রের গাত্র জ্ঞান সমুদ্রের জলে স্নান সারিয়া অবসর পাইবার অবকাশ হইল। জ্ঞানের সমুদ্রে যেমন ডিঙি ভাসাইয়া তাহা পাড়ি দিতে বেলা ফুরাইয়া কূল পাওয়া দুঃসাহসের ব্যাপার তেমনি বলতে গেলে গেরাম সুদ্দ যত বিবাহযোগ্য পাত্র রহিয়াছে তাহার সমতুল্য হওয়া ঢের দূর। আর লাখের হিসেবে তুলনায় একমাত্র পাত্রই আপনাদের কন্যার কপাল উজ্জ্বল করিতে যাইতেছে। ওজনের কথা আর নাই বলিলাম, তাহা ছাড়িয়া দিলাম আপনাদের কর্তব্যের উপরে।
দেখুন বিহাই ছাব হিসাবের একখান বহি তেলের সহিত যত্ন করিয়া রাখিয়া দিয়াছি। সেই হিসাব করিয়া যাহা মোর বোধগম্য হইল, তাতে তো চারি-লক্ষাধিকের কম হইলে আমার লোকসানই হইবে। সেই প্রাথমিকের বারান্দা থেকে পাশ দিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় নিয়া আসতে স্ব পকেটের কড়কড়ে নূতন অনেকগুলান টাকার মায়া ত্যাজ্য করিতে হইয়াছে। এইবেলা আসিয়া যদি আপনারাও আমার মাথায় পাথর ভাঙিবার চেষ্টা চালাইয়া থাকেন, তবে যমদূত আসিয়া প্রাণ বায়ু বাহির করিয়া লইয়া যাওয়া ব্যতীত আর কোন প্রকার রাস্তা তাহার পক্ষে পাওয়া সম্ভব হইবেই না।
এইদিকে কনে আই এ প্রথম বর্ষ পাশ দিয়া দ্বিতীয় বর্ষে পা রাখিয়া বাপের গলায় চাপ দিয়া শ্বাস রুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে। কোন প্রকারে যদি এই পাপের বোঝা গলা থেকে নামানো যায়।
কনের পক্ষের কোন এক বৌদ্ধ তাহার গদ্যের মর্মার্থ বুঝিতে পারিয়া এই মতে সম্মতি প্রকাশ করিলেন যে,কনের বাপ কনে বন্ধক বাবদ দুই লক্ষ টাকা বরের বাপকে প্রদান করিবেন। বরের বাপ উপলব্ধি করিতে পারিয়াছে যে, সত্যিই তাহার মাথায় লাঠি ভাঙার চেষ্টা চলিতেছে। বরের বাপ বলিয়া উঠিলেন, সেই বলিলাম ওজন মাপার ভার আপনাদের উপর অর্পণ করিলাম, না আপনারা ওজন করিতে পারিয়াছেন, না আপনারা করিবার যোগ্যতা রাখিয়াছেন।
অবশেষে অনেক মূল্য কষাকষির পর কনের পক্ষের সেই বৌদ্ধ বলিল ঠিক আছে কনের বাপ, বরের বাপের সেই হিসাব বহির হিসাব বাবদ বরের বাপকে আড়াই লক্ষ টাকা পণ প্রদান করিবেন। এইদিকে কনের বাপ মনে মনে বলিতে লাগিলেন, এই জন্মে কন্যা জন্ম দেওয়ার পাপ থেকে বুঝি মুক্তি মিলিবে নিশ্চয়ই।
এইবার বরের বাপ সকলি ভাল করিয়া বুঝিতে পারিল। তাহারা নিতান্তই আমার মাথায় লাঠি ভাঙার কর্মটুকু সম্পাদন করিতে চাহিতেছে। তিনিও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিয়া রহিলেন, আমার সঞ্চিত টাকার আসলের সহিত সুদ যদি নাহি মিলে তবে কোন প্রকারেই পুত্রের বিবাহ হইতেই পারে না। এই মতে উদ্যত হইয়া বলিয়া উঠিলেন এই বিবাহ কোন প্রকারেই হইতেই পারে না।
কোন প্রকার পাকা কার্য সম্পাদন হওয়া ব্যতীতই কারবার স্থগিত করিতে হইল। এইবেলা বরের বুঝিবার আর বাকি রহিল না, এইমতে চলিতে থাকিলে বিবাহের সাম্পান পাড়ি দিয়ে কূলের স্পর্শ করিবার লগ্ন পার হইয়া যাইবে। উপসংহারে আসিয়া সেই মফিজ উকিলের সহিত আলোচনায় ঐক্যমত হইলে যে, কনের বাপ যত টাকা পণ দিতে মনস্থির করিয়াছেন তাহাই কার্যকর থাকিবে। তবু বিবাহের কার্য সম্পন্ন হওয়া চাই। কালের পরিক্রমায় বিবাহের লগ্ন লাগিল, সানাইয়ের সুর বাজিয়া উঠিল।
আর কনের বাপ কনে জন্ম দেওয়ার পাপ থেকে পেল কি মুক্তি?
4