প্রথম পাতা » গল্প » শব-ই-কদর নিয়ে বাল্য স্মৃতি

শব-ই-কদর নিয়ে বাল্য স্মৃতি

আজকে পবিত্র শব-ই-কদর। মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার উপায় নাই। একেতো করোনা তার উপর আম্পান। করোনা না থাকলেও মসজিদে যাওয়া যেতো না মনে হয়। আর গেলেও সারা রাত মসজিদে থাকতে হতো। ঝড় আর বৃষ্টির কারনে বাসায় আসা যেতো না। এই মসিবতের সময় মসজিদে আটকে থাকলেই  বেশি নিরাপদ মনে হতো।

গ্রামে ছিলাম তখন। গ্রামের কাছে পিছে সব মসজিদে ঘুরে ঘুরে নামাজ পড়তাম। এখনো অনেকে পড়ে। ঢাকায়ও পড়ে আবার গ্রামেও পড়ে। ঢাকায় যে পড়ে সেটা ঢাকায় এসে দেখেছি। একই  রকম ব্যাপার শব-ই-বরাতের রাতে। শব-ই-বরাতে মনে হয় উৎসাহ আরো বেশি থাকে। ভাগ্য কতো ভালো করে লিখিয়ে নেয়া যায় বলে কথা। যতো বেশি রাকাৎ নামাজ ততো ভাগ্য প্রসন্ন।

শব-ই-কদরের রাতেও উৎসাহের কমতি নাই। এই রাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম বলে কথা। এই রাতের সর্বোচ্চ ব্যবহার  করার জন্যই মসজিদে মসজিদে ঘুরে নামাজ পড়তাম। একশো রাকাৎ পড়ব এরকম একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে নিতাম। আর বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতার ব্যাপার তো ছিলই । ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করা যায়। হাদিসে আছে।

পরের দিন সকালে কে কতো বেশি রাকাৎ নামাজ পড়েছি  তা নিয়ে বিচারমূলক  কথা বার্তা হতো । কেউ কেউ যে বাড়িয়ে বলত না তা ঠাওর করে বলা যেতো না। ভালো কাজ বাড়িয়ে বললে অপরাধ নাই মনে হয়। যদিও সেটা মিথ্যা কথার কাতারে পড়ে যাবে।

কোন কোন মসজিদে গিয়ে অনেক মশার কামড় খেতে  হতো। নামাজের নিয়ত করা হয়ে গেছে এর মধ্যেই পায়ে দল বেধে মশার কামড়। নড়া যাবে না চড়া  যাবে না। নামাজের ক্ষতি হবে। আবার মশার কামড় সহ্য করে  নামাজে ধ্যান ঠিক রাখতে পারলে সওয়াব আরও বেশি হবে। “কামড়াও আরও বেশি করে কামড়াও। আমার কিছু যায় আসে না। আমি কিছুই টের পাচ্ছি না। সব ধ্যান আমার সুরাহ ফাতিহাতে”এই ভেবে আরও ঝাকেঝাকে মশা আসতে মনে মনে দাওয়াত দিতাম। নামাজে দাড়ালেই  যেন মশারা আরো বেশি করে কামড়াতে থাকত। ওরাও বুঝে মনে হয়, “এই নামাজি ইমানদার ব্যক্তি নামাজে অসহায়। আমাদের কিছুই করবে না। মশা মারতে গিয়ে পিছে জান্নাতুল ফিরদাউস হারায়।”

আল্লাহ্ সাত আসমান এর উপর থেকে প্রথম আসমান এ নেমে এসেছেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ্ এর নৈকট্য বুঝার চেষ্টাও করেছি। শান্তি শান্তি লেগেছে। আল্লাহ্ কাছেই আছে মনে হয়েছে। আল্লাহ্ সব সময় কাছেই আছেন। কেউ বুঝি আর কেউ বুঝি না।

সেজদাহ দিতে দিতে অনেকের কপালে কালো দাগ হয়ে যেতো। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কালো দাগ পড়েনি। একদিনে এই কালো দাগ পড়ে না জানি। কিন্তু আমি তো ছিলাম নিয়মিত নামাজি। জুম্মা নামাজি বা শব ই কদর বা শব ই বরাতের নামাজি না শুধু। তারপরও কালো দাগ পড়ল না। দুই পায়ের দুই জায়গায় অবশ্য চামড়া শক্ত হয়ে কালো হয়েছিল। পায়ের পাতার উপর দিকে।

আমি নামাজি তার একটা বাহ্যিক চিহ্ন হলো তাহলে! লোক দেখানো নামাজ নামাজ নয়। নামাজ হলো আল্লাহ এর জন্য। আল্লাহ -ই এর প্রতিদান দেবেন। আসল ব্যাপার ভেতরে। কপালে কালো দাগ ওয়ালা অনেক নামাজিদের অনেক পাপ কাজ করতে দেখেছি এবং শুনেছি। সবাই খারাপ না আমি সেটা জানি আর আপনারাও জানেন।

ভেতরের কালো দাগ আর করোনা দূর হউক। আল্লাহ আমাদের মাফ করুক। আম্পান থেকে রক্ষা করুক।

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *