প্রথম পাতা » স্বাস্থ্য » যে কারণে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে

যে কারণে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে

COVID-19
  • জনসংখ্যার ঘনত্ব আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি।
  • আমাদের অনেক প্রবাসী স্বজন আছেন। যারা দেশে এসেছেন, আসছেন।
  • যখন আমরা বাইরে খাই, এক গ্লাসে হাজার হাজার মানুষ পানি খাই। যেমন খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা চায়ের স্টলে।
  • এক কাপে আমরা হাজার হাজার মানুষ চা খাই।
  • আমাদের বাজে অভ্যাসঃ আমরা উন্মুক্ত হাঁচি দেই, উন্মুক্ত কাশি দেই। যেখানে সেখানে থুথু ফেলি। মাস্ক ব্যবহার করিনা।
  • আমরা প্রচুর হ্যান্ডশেইক করি।
handshaking

  • হাত ধোয়ার অভ্যাস আমাদের নেই।
  • আমরা টাকাকে চুমু খাই। মুখ থেকে থুথু এনে টাকা গুনি। টাকার মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে।
  • আমরা জনসমাগম পছন্দ করি। যদি কোন চিত্রনায়ক বা নায়িকা কোথাও আসেন, শুটিং চলে, সেখানে ভীড় পড়ে যায়।
  • আমাদের সচেতনতার অভাব।
  • আমাদের সুখে থাকলে ভুতে কিলায়। স্কুল কলেজ বন্ধ করা হলো সংক্রমণ রোধ করতে। অথচ এই সুযোগে অনেকে ঘুরতে বের হয়ে যাচ্ছে। পিকনিক করার খায়েশ হচ্ছে।

  • আমরা গুজবপ্রিয়। ফেইসবুকে যেমন আমরা লাইক, শেয়ার অনেক পছন্দ করি, তেমনি কোন খবর দ্রুত ছড়াতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি। সে খবর সত্য নাকি মিথ্যা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব কেউ নেই না। কয়েকটি প্রচলিত গুজবঃ

১. গরম আবহাওয়ায় করোনা ছড়ায় না।

এটি একটি মারাত্মক ভুল। COVID-19 ভাইরাসটি গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়াযুক্ত অঞ্চলে সংক্রমণ হতে পারে। নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ছড়াতে পারতো না।

২. ঠাণ্ডায় মারা যায় করোনা।

না, এটিও ভুল তথ্য। শীতল আবহাওয়া এবং তুষার নতুন করোনভাইরাসকে হত্যা করতে পারে না। বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক, মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে সাধারণত ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭° ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৩. মশার কামড়ে ছড়ায় করোনা।

এটি ঠিক নয়। নতুন করোনাভাইরাস মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে না।

৪. হ্যান্ড ড্রায়ারগুলি নতুন করোনভাইরাস হত্যার ক্ষেত্রে কার্যকর।

না। ভুল তথ্য।

৫. থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় সম্ভব।

এমনটি বলে থাকেন অনেকেই। এখানে কিছু কথা বলে নেয়া দরকার। জ্বর সনাক্তকরণে থার্মাল স্ক্যানার কাজে দেয়। সেই জ্বর করোনা ভাইরাসের কারণে হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে জ্বর আসতে। একারণে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু এখনো জ্বর আসেনি, তাদেরকে সনাক্তকরণে থার্মাল স্ক্যানার ব্যর্থ হবে।

৬. সারা শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করলে করোনভাইরাস মরে যাবে।

না। ভুল তথ্য।

৭. নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন করোনভাইরাস থেকে রক্ষা করে।

না। নিউমোনিয়া বিরুদ্ধে টিকা যেমন নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (Hib) ভ্যাকসিনগুলি নতুন করোনভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয় না।

৮. স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক ধুয়ে ফেলা করোনভাইরাস সংক্রমণ রোধে সহায়তা করতে পারে।

না। এর কোনও প্রমাণ নেই যে নিয়মিত স্যালাইন দিয়ে নাকে ধুয়ে ফেলা মানুষকে নতুন করোনভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেছে।

৯. রসুন খেলে করোনা হবে না।

এমন কথাও অনেকে বলছেন। এটি ভুল।

১০. বৃদ্ধরাই শুধু ঝুঁকিতে আছে।

না, সকল বয়সের লোকেরা নতুন করোনভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনা ভাইরাসে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

১১. অ্যান্টিবায়োটিক করোনভাইরাস চিকিত্সার জন্য কার্যকর।

না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না।

স্পেন থেকে লিখেছেন ডা. তাহসিনাঃ

“… আমাদের হাতে তিন মাসের লম্বা সময় ছিল। যা আমরা হেলায় হারাচ্ছি, এবং সে সময়ে তাসের ঘরের মত থুবড়ে পড়বে স্বাভাবিক প্রতিরোধ টুকুও। বিপদের আন্দাজাও করতে পারছি না, এত ভয়াবহ হবে সেটা!!.স্পেইন হল ইউরোপের উষ্ণতর, আলোকোজ্জ্বল দেশ। রোদে খটখট সারা বছর। মরুভূমির মত ভূপ্রকৃতি। লোকজনের আয়ুস্কাল দীর্ঘ। জ্যাপানিদের পরেই স্পেইনের গড় আয়ু। ৯০% দেশবাসি সুস্থ খায়, সুস্থ চলে। সুস্থ থাকে।সামনেই সামার। পর্যটন নির্ভর সুন্দর দেশটির রুটি রুজির অন্যতম সময়। এ সময়ে করোনা নিয়ে মাতামাতি করতে কারোই ভালো লাগছিল না।করোনা যখন ইতালিতে বিষবাষ্প ছাড়ছে তখনো স্পেইন ছিল নির্বিকার!! অথচ করোনা হাটিহাটি পা পা করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হানা দিলো রাজধানি মাদ্রিদে!!কর্তারা তখনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন!! সেরে যাবে! চলে যাবে! ছুহ ছুহ করছেন!

এক সপ্তাহ পরেই বুঝা গেলো, করোনা না গরম মানে, না সুস্থ শরির মানে, না নারী শিশু মানে!! করোনা কোন করুনা করছে না, বিদ্যুৎ বেগে ছড়াচ্ছে, যাকে বাগে পাচ্ছে আইসিইউ অবদি টেনে নিয়ে মেরে ফেলছে!মরার পর কেউ ছুতে পারছে না।।দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছরে পরে কাঁদতে পারছে না।।জানাজায় লোক হচ্ছে না, ফিউনারেল হচ্ছে না। দাফন হচ্ছে না। সরাসরি ক্রিমেশনে পুড়িয়ে ফেলছে!!.সেই স্পেইন থেকে বলছি।আজ পাঁচদিন হয় জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছে। রাস্তায় সেনা ও পুলিশ ঘুরছে। আপনি কেবল তিন কাজের জন্য বের হতে পারবেন!!খাদ্য কেনা বাওষধ কেনা বাগ্রেফতার হবার শখ হওয়া!জরিমানা গুনবেন ২০০ ইউরো, যদি কোয়ারাইন্টাইনের নিয়ম না মানেন।

খোলা আছে শুধু ব্যাংক, মুদি দোকান আর ফার্মেসি। বাকিরা সিল গালা তালা।দূর পাল্লার বাস ট্রেন ৭৫% বন্ধ করা হয়েছে। শহরের সিটি সার্ভিস ৫০% কমানো হয়েছে। যেখানেই যাবেন, যুক্তি দেখাতে হবে। কেন, কিসের তাড়া?! এই হল কোয়ারান্টাইন।সকল সরকারি তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক নেয়া হয়েছে সরকারের আওতায়। সব নিয়ন্ত্রন সরকারের। সকল ইন্টার্ন এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যে কোন ডিসিপ্লিনের চিকিতসক হলেই প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা সৈনিক হিসেবে!! শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রিদের যুক্ত করা হচ্ছে চিকিৎসক কাতারে! এরপর যুদ্ধ চলছে। হাসপাতালে হাসপাতালে। তবুও কমছে না মৃত্যু মিছিল।হাত কামড়াচ্ছে সরকার, দূয়ো দিচ্ছে একে অন্যকে!! আহা! আর একটা সপ্তাহ! আর দিন দশেক আগেও যদি সবাইকে খেদিয়ে ঘরে ঢুকাতাম, তো এই দাবানল রুখে দেয়া যেত!!যেমন, চায়না রুখেছে, সাউথ কোরিয়া, সিংগাপুর রুখেছে।.বাংলাদেশ ভালো থাকুক, সেটা কে না চায়! আমার সর্বস্ব সেখানেই। মরার পরের ঠিকানা সেটা।

দেশ থেকে আমার কথা ভেবে ফোন আসলে অসহায় লাগে! আমি ভাবছি তাদের নিয়ে, তারা ভাবে আমাকে নিয়ে!!আমি ডাক্তারি পড়াশোনা করেছি, এসব ভাইরাস ব্যাক্টিরিয়ার নাশকতা সম্পর্কে জানি। এখানে স্বচক্ষে ইউরোপের দুর্গতিও দেখছি। তবুও চাই, ভুল প্রমাণিত হোক আমার ধারনা। করোনা যাদু মন্ত্র বলে সরে যাক বাংলার আকাশ থেকে। নয়ত, আজাব আসন্ন। অতি আসন্ন।”
সৌজন্যে: Tahsina Afrin

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন নিচের ভিডিও থেকেঃ

করণীয়ঃ
  • জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া বাদ দিন। ঘরে থাকুন।
  • যদি বাইরে যেতে হয় তাহলে সম্ভব হলে মাস্ক পড়ুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। হাঁচি, কাশি দিচ্ছে এমন কারো থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
  • চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন।
  • হাঁচি বা কাশি পেলে কনুই বাঁকিয়ে বা টিস্যু দিয়ে নাক, মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দিন। টিস্যুটি এমন জায়গায় ফেলুন যেন অন্য কেউ এর সংস্পর্শে না আসে। যেমন, ঢাকনাযুক্ত বিন।
Do

  • হ্যান্ডশেইক করা থেকে বিরত থাকুন।
Safe Greetings

  • বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে আগে হাত ধুয়ে নিন।

  • আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয় তবে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

সূত্র: 1. Advice for People
2. Myth Busters

স্বাস্থ্য থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Bikul
বিকুল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ভালোবাসেন ব্লগিং করতে এবং অন্যের লেখা পড়তে। অবসর সময় কাটান ভালো মুভি দেখে। সারা বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *