১৯৪৫ সালে জাপানের নাগাসাকিতে নিউক্লিয়ার বোমা বিষ্ফোরণের পর এই হৃদয়বিদারক ছবিটি তোলা হয়। ছবিটিতে বিষ্ফোরণের সময় মারা যাওয়া ছোটভাইয়ের মৃতদেহ পিঠে করে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি। ছেলেটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেটি ছিলো শহরের বাইরে একটি অস্থায়ী কবরস্থান যেখানে বিষ্ফোরণের সময় মারা যাওয়া সকলের সৎকারের ব্যবস্থা করা হচ্ছিলো। ছেলেটি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো যাতে তার ভাইয়ের সৎকার হতে পারে।
ফটোগ্রাফার জো ও’ডোনেল এর ডায়েরি থেকে,
“দশ বছরের একটি বাচ্চাকে আমি হেঁটে আসতে দেখলাম। ছেলেটার পিঠে একটি বাচ্চা ছিলো। তখন আমাদের কাছে এসব খুবই সাধারণ ছিলো কারণ বাচ্চারা তাদের ছোট ভাই-বোনদের পিঠে বেঁধে খেলা করতো। তবে এই ছেলেটি অন্যসব বাচ্চাদের থেকে আলাদা ছিলো। খুব দরকারি কাজে ছেলেটি এখানে এসেছে আমি সেটা বুঝতে পারলাম। ওর পায়ে কোনো জুতো ছিলো না। মুখ ছিলো অনুভূতিহীন ও গম্ভীর। ওর পিঠের বাচ্চাটি এতটাই ঘুমে ছিলো যে মাথাটা পিছনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে ছিলো। ছেলেটা ভাইকে নিয়ে সেখানে পাঁচ কি দশ মিনিট দাঁড়িয়েছিলো। সাদা মাস্ক পড়া কিছু লোক ছেলেটির কাছে এলো আর ছেলেটি শান্তভাবে দঁড়িটি খুলে বাচ্চাটিকে তাদের হাতে দিয়ে দিলো। ঠিক তখন আমি প্রথম বুঝতে পারলাম ছেলেটির পিঠের বাচ্চাটি মৃত ছিলো। সাদা মাস্কপড়ুয়াদের একজন শুধু বাচ্চাটির হাত ও পা ধরলো তারপর ছোট শরীরটাকে আগুনের উপর দিলো। ছেলেটা সেখানে দাঁড়িয়েছিলো কোনো নড়াচড়া না করে, ওর চোখ ছিলো আগুনের দিকে। সে নিচের ঠোঁট এত জোরেই কামড়ে ধরেছিলো যে ঠোঁট থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিলো। সূর্যাস্তের মত করেই একটা সময় আগুনের তাপ কমে গেল। ছেলেটি আগুনের থেকে চোখ সরিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো তারপর চুপ করে হেঁটে চলে গেলো।”
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়:
ইন্টারনেটে একটি ভুল তথ্য ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হচ্ছে Grave Of The Fireflies সিনেমাটি এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। আসলে তা নয়। এই ঘটনাটি আরেকটি সত্য ঘটনার সাথে কিছুটা মিলে যায় যেটির উপর ভিত্তি করে Grave of the Fireflies সিনেমাটি তৈরি করা।

১৯৮৮ সালের জাপানী চলচ্চিত্র “গ্রেইভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইস” একটি অল্প বয়স্ক ছেলে এবং তার ছোট বোনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে টিকে থাকার লড়াইয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা একটি ট্র্যাজিক ফিল্ম।
আকিয়ুকি নোসাকার লেখা ছোটগল্প Grave of the Fireflies এর উপর ভিত্তি করে বানানো হয় মুভিটি। তার এক বোন অপুষ্টির ফলে মারা গিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোবে বোমা হামলার সময় তার দত্তক পিতা মারা গিয়েছিলেন। ফুকুইতে অপুষ্টিতে মারা যায় তাঁর ছোট দত্তক বোন কেইকো। ছোট গল্পটি তিনি লিখেছিলেন কেইকোর মৃত্যুর জন্য তার কাছে ব্যক্তিগত ক্ষমা প্রার্থনা হিসাবে।
আমার দেখা সেরা মুভির মধ্যে এটি একটি। যারা এখনো দেখেননি, দেখে নিতে পারেন।