প্রথম পাতা » সেরা » অতি অল্প হইল…

অতি অল্প হইল…

Bad time

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ শিল্পী ঋষি বিদ্যাসাগরের জন্ম অখণ্ড ভারতে। বাংলাদেশি বাঙালিরা তাঁকে এখন মেনে নেবে কি না বর্তমান বাংলাদেশে একটি বিরাট প্রশ্ন। তবে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেন নি বলে নিরাপদে আছেন বলেই মনে হয়! আজ তাঁর ২০৪ তম জন্মদিন গেলো। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আকাল কালে তাঁর জন্মদিন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেনি বোধ করি। আড়ম্বরে-অনাড়ম্বরে সেটি পালিত হয়েছে বলেও শুনিনি। এখন এদেশে জন্ম এবং মৃত্যুদিবস গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলা ভাষার প্রধান শত্রুদের, মিত্রদের নয়।

তিনি শিক্ষক ছিলেন। এ কালের কানেধরা কিংবা ছাত্রদের কাছে শপথপাঠ করা শিক্ষক নন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিনি শিক্ষক, নিরেট শিক্ষক। তিনি এতদ-অঞ্চলের বিদ্যাশিক্ষায় প্রভূত উন্নতিকল্পে প্রচুর কাজ করে গেছেন। তাঁর সমস্ত অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন শিক্ষাঙ্গন তৈরি, পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের প্রকৃত বিদ্যাচর্চায়। নারীশিক্ষার প্রসার, স্কুল-কলেজ নির্মাণ, বাংলা গদ্যের বিন্যাস, ভাষা ও সাহিত্যের অবকাঠামো এবং ব্যাকরণে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বিশাল ভারতে বিদ্যাশিক্ষায় অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন বলেই তিনি বিদ্যাসাগর- বিদ্যার সাগর, জগত-বিখ্যাত।

ঘুণেধরা সমাজে, বিরুদ্ধ পরিবেশে সমাজ সংস্কারে একাই লড়ে গেছেন বিধবা বিবাহের পক্ষে, বাল্যবিবাহ রোধে এবং বহুবিবাহ রহিতকরণে। এসব করতে গিয়ে সমাজপতিদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন কিন্তু দমে যাননি। একালে হলে দৌঁড়ানি খেতেন, মামলা খেতেন, কোর্ট চত্বরে তাঁর বিচি খণ্ডিত হতো, কোপ খেতেন নিশ্চিত। বেঁচে থাকলে ৫ আগস্টের পর তাঁর ছাত্রদের হাতে হতেন বেইজ্জত!

সবচেয়ে বড় কথা, একালে জন্ম নিলে তাঁকে এতো পড়তে হতো না। একটা শর্ট সিলেবাস পেতেন। পাবলিক পরীক্ষার আগে আগে মোটামুটি একটা গ্যাঞ্জাম করে পেয়ে যেতেন অটোপাশ! তখন তিনি বিদ্যাসাগর না হয়ে বড়জোর হতেন বিদ্যাডোবা! ভাগ্যিস তিনি একালের সমাজ সংস্কারক, ছাত্র কিংবা শিক্ষক কোনোটাই হননি!

জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়।

সেরা থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *