প্রথম পাতা » সেরা » মাওলানা ভাসানীকে কেন ভাসানী বলা হয়

মাওলানা ভাসানীকে কেন ভাসানী বলা হয়

Abdul Hamid Khan Bhashani

ইতিহাসের সবচেয়ে অবহেলিত রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, একথা বললে হয়তো ভুল হবে না। বাঙালি তাকে মনে করে না, তার জন্মদিন, মৃত্যুদিন, কিছুই এদেশে পালিত হয় না; পাঠ্যপুস্তকেও তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই।

খিলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফারাক্কা লং মার্চ – এসব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এই নেতা।

কংগ্রেস, স্বরাজ দল, মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – এই রাজনৈতিক দলগুলোতে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ; এর মধ্যে শেষোক্ত দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে স্কুলের পাঠ্যক্রমে তার উপস্থিতি হ্রাস করে।

ভাসানী এমন একজন রাজনীতিবিদ যিনি সারাজীবন নির্যাতিতদের অধিকারের জন্য এবং শোষণ, সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তার বিপ্লবী বাম দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানের জন্য তিনি ‘রেড মাওলানা’ নামে পরিচিত ছিলেন। যাই হোক, মূল কথায় আসি।

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে কেন ভাসানী বলা হয়

১৯২৪ সালে তিনি আসামে যান এবং আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে কৃষকদের একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করেন। এই জমায়েতের পর তাঁর নাম হয় ‘ভাসানীর মওলানা’। এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দটি যুক্ত হয়ে যায়।

সংক্ষেপে ভাসানী

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন একজন কিংবদন্তী নেতা যিনি ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে প্রথম বাংলাদেশের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমির কল্পনা করেছিলেন। তিনি সারা জীবন সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য সক্রিয়ভাবে লড়াই করেছেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসাবে সমধিক পরিচিত। সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী এই মহান নেতা ১৯১৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং পরে আসামে কৃষকদের সংগঠিত করা এবং দমনমূলক আইন প্রতিরোধ সহ বেশ কয়েকটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

Bhashani with Mujibur Rahman
১৯৫৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণকালে মাওলানা ভাসানীর সাথে মুজিবুর রহমান

পাকিস্তান সৃষ্টির পর, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে জড়িত হন, আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মতো বড় রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ সালে, একটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের পর, ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ দাবি উত্থাপন করেন। ভাসানী ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এবং যুদ্ধের সময় বামপন্থী শক্তির নেতৃত্ব দেন। এমনকি স্বাধীনতার পরও, তিনি দরিদ্রদের পক্ষে ওকালতি এবং গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য লড়াই চালিয়ে যান।

যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীচুক্তির বিরোধিতা করেন। তিনি বলেছিলেন –

“আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না।”

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহিপুর হক্কুল এবাদ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন যার অধীনে একটি মেডিকেল, টেকনিক্যাল স্কুল, হাজী মুহসিন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া আসামে ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সন্তোষে কারিগরী শিক্ষা কলেজ, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, সন্তোষে ‘সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন- যা ২০০২ সালে ‘মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে যাত্রা শুরু করে।

ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে লাভ করেন। ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি ৮ম স্থান দখল করেন।

সেরা থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মোরশেদ আলম
পেশায় একজন শিক্ষক, শখের ভ্রমণকারী এবং অবসরে একজন নেটিজেন।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *