প্রথম পাতা » বই » পুষ্প বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ – আহমদ ছফা (বুক রিভিউ)

পুষ্প বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ – আহমদ ছফা (বুক রিভিউ)

Flower tree

আহমদ ছফা তৃণবিশারদ কিংবা পাখি বিশারদ না হলেও তার বৃক্ষলতা ও বিহঙ্গ সমূহের প্রতি খুব অনুরাগ ছিলো।

সেই অনুরাগ থেকেই এই বইটি লিখেছেন তিনি।

আহমদ ছফা একদিন রুশ শিক্ষাবিদ “আন্তন ম্যাকারেঙ্কো’র ❝রোড টু লাইফ❞ বইটি পড়েন।

বইটিতে লেখক রাশিয়ার টোকাই ভবঘুরে এবং অনাথ এতিমদের শিক্ষা দেয়ার একটি সুন্দর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন।

বইটা পাঠ করার পর ছফার মনে হলো অসহায়,দুস্থ,বস্তি-রাস্তাঘাটের শিশুদের জন্য কিছু না করতে পারলে তার এই মনুষ্যজীবন বৃথা যাবে।

যেই ভাবনা সেই কাজ।তার মোস্তাক নামের এক বন্ধুর সাথে শলা-পরামর্শ করে একটা স্কুল চালু করতে গিয়ে দেখে,

স্বপ্ন হিসেবে যেটা চমৎকার,বাস্তবে তা ততোই দুর্বোধ্য।

বাচ্চাদের সাথে প্রথম সাক্ষাতের পর ছফার মনে হলো,

তারা লোহার কাঠে ভোঁতা বটি দিয়ে কোপাচ্ছে।

বাচ্চারা বুঝতে পারে না কেন তারা লেখাপড়া শিখবে।

লোহা-লক্কর,কাগজ কুড়িয়ে,লোকের ফাই-ফরমাশ খেটে,মিন্তির কাজ করে ভালো পয়সা কামাই করতে পারে।অবসরে ঘুড়ি উড়িয়ে,মারামারি করে,হরতালের দিন রিকশার পাম্প ছেড়ে দিয়ে,পুলিশদের ইট পাটকেল ছুড়ে খুব ফূর্তিতে-উত্তেজনায় যাদের দিন কাটে,

তারা কেন পড়ালেখা করবে,তারা তার উত্তর খুজে পায় না।

২য় দিন বাচ্চাদের বাবা-মায়ের পেশার পরিচয় নিতে গিয়ে খুব বিড়ম্বনায় পড়ে যান ছফা।

যেমন,একটা বাচ্চাকে প্রশ্ন করা হলো,

❝তোমার নাম কী?তোমার বাবা কী করেন?❞

সে উত্তর দেওয়ার আগেই পাশের একজন বলে উঠলো,

❝ওর নাম সেলিম,ওর বাপে ছিচকা চোর।❞

আবার আরেকটা মেয়েকে প্রশ্ন করা হলো,

❝তোমার নাম কী?❞

পাশে থেকে আরেক বাচ্চা বলে উঠলো,

❝ওর নাম মরিয়ম,হের মা ঘরে নাঙ ঢুকায়।❞

বাবুল নামে ৭ বছরের এক বাচ্চাকে নিয়ে ছফা আরো ঝামেলায় পড়ে যায়।

সে পড়তে বসলে পাশ থেকে কেউ না কেউ তাকে খোচাঁ বা চিমটি দিতো,

আর ওমনি সে লাফিয়ে উঠে খোচাঁ দেওয়া শিশুটির মা,খালা,নানি,দাদী সাত প্রজন্মের যত নারী আত্মীয় আছে,

মুখ দিয়ে সবার সাথে কুকর্ম করতে থাকে।

আধ ঘন্টার আগে আর থামে না।

আলমগীর নামে আরেকটা বেপরোয়া ছেলে আছে।অনাথ,নীলক্ষেত বস্তিতে থাকে।

তাকে অক্ষরজ্ঞান শেখাতে গিয়ে ছফার মনে হলো,

মোষের শিং থেকে দুধ বের করা তার চাইতে অনেক সহজ।

ছফা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন এই ছেলেকে তার সাথে রাখবে,মানুষের মতো মানুষ করবে।

ছফা যেখানেই যেতেন,আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

অন্যান্য বাচ্চারা ছফার সাথে যখন আলমগীরকে দেখতো,তখন হাততালি দিয়ে উঠতো।

কারণ জিজ্ঞেস করলে সবাই চুপ থাকতো।

একদিন ৭ বছরের ছোট্ট বাবুলকে ছফা কমলা এবং কিছু বেলুন কিনে দিয়ে জিজ্ঞাসা করছে,

❝আচ্ছা বাবুল বলোতো,বাচ্চারা আমার সঙ্গে আলমগীরকে দেখলে হাসে কেন?❞

বাবুল বললো, ❝ওমা,আপনি জানেন না?তাইলে তো আপনে মায়ের পেডে আছেন।আলমগীর কইছে,আমনে নাকি তারে ফাকাইবেন।❞

ছফা বললো, ❝বাবুল,ফাকানো কি জিনিস?❞

বাবুল বলে, ❝আপনে দি কিচ্ছুই বোঝেন না,আলমগীর কইছে,এক সময় আপনে তার লগে ওইসব খারাপ কাম করবেন।❞

বই থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

সানজিদা রহমান মৃধা
আমি শরৎ এর সাদা মেঘ।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *