প্রথম পাতা » বই » যদ্যপি আমার গুরু..(রিভিউ)

যদ্যপি আমার গুরু..(রিভিউ)

Joddopi amar guru

প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক-কে নিয়ে আহমদ ছফার লেখা একটি সৃজনশীল জীবনী গ্রন্থ হচ্ছে ❝যদ্যপি আমার গুরু❞

আহমদ ছফার একটা বদস্বভাব হচ্ছে, কেউ পৃথিবীর যত বড় কোনো ব্যক্তিত্বই হোক না কেন, তার প্রতি ছফার বেশিদিন আগ্রহ থাকে না।
কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছর রাজ্জাক স্যারের সান্নিধ্যে থেকেও তার প্রতি বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ কমেনি বরং আগ্রহ দমে না যাওয়ার বিস্ময়বোধের কারনেই ছফা এই রচনাটি লিখেছেন।

১১০ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই বইটিতে প্রায় ১৮৯ জন মহান ব্যক্তিত্ব ও প্রায় ৫১ টি বিখ্যাত বই নিয়ে রাজ্জাক স্যারের সাথে ছফার কথোপকথন দেখা যায়।

বইটিতে মূলত রাজ্জাক স্যারের জ্ঞান, দর্শন, মতবাদ, বিশ্বাস নিয়ে কিছু কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন, এক জায়গায় ছফাকে বলছেন,
❝একটা কথা খেয়াল রাখন খুব দরকার। যহন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন, দুইডা বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন। ওই জায়গায় মানুশ কি খায় আর পড়ালেহা কী করে। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কী খায় এইডা দেখনের লাইগ্যা আর বইয়ের দোকানে যাইবেন পড়াশোনা কী করে হেইডা জাননের লাইগ্যা। বইয়ের দোকান পরখ করলেই বেবাক সমাজটা কোনদিকে যাইতাছে হেইডা টের পাওন যায়। কী খায় কী পড়ে এই দুইডা জিনিস না জানলে একটা জাতির কিচ্ছু জানন যায় না।❞

নজরুলের প্রসঙ্গ উঠলে বলতো,
❝বজ্র, বিদ্যুৎ আর ফুল, এই তিনে নজরুল।❞

আবার রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেছেন,
❝রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা ঠিকই আছিল। বাংলা ভাষাটা তো তার হাতেই পুষ্ট হইছে। এইডাই রবীন্দ্রনাথের সবচাইতে বড় ক্রেডিট। আদার দ্যান লিটারারি ট্যালেন্ট অন্যান্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের যদি বিদ্যাসাগরের মতো মানুষদের সাথে তুলনা করেন, হি কামস নো হোয়ার নিয়ারার টু দেম।❞

ছফা খুব রবী ভক্ত হওয়ায় স্যারের কথা শুনে মনে মনে আহত হলেন এবং প্রশ্ন করলেন,

❝রবীন্দ্রনাথ কি খুব বড় একজন মানুষ নন?❞

স্যার বললেন, ❝বড় লেখক এবং বড় মানুষ এক নয়।❞

আবার বঙ্কিমের প্রসঙ্গে বলেছেন,

❝বঙ্কিমের একটা ইনফিরিওটি কমপ্লেক্স আছিল। তার পড়ালেহা অইছিলো মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করছিলেন। মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধইর‍্যা সেই ঋণ শোধ করছিলেন।❞

রান্না বান্নার ব্যাপারেও রাজ্জাক স্যারের ছিলো বেশ পাণ্ডিত্য।

বলতেন,
❝যে জাতি যত সিভিলাইজড তার রান্নাবান্নাও তত বেশি সফেস্টিকেটেড।❞

এমন কোনো বিষয় নেই যার উপর রাজ্জাক স্যারের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত ছিল না।
এমন কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নামও বাদ যায়নি তার মুখ থেকে। সবার ব্যাপারেই রাজ্জাক স্যারের কিছু না কিছু মন্তব্য আছে বইটিতে।
আর এজন্যই বইটিতে ১৮৯ জন ব্যক্তিত্বের নাম-কর্ম উঠে এসেছে।

একটা কথা খুব প্রচলিত আছে। শেখ সাহেব হেনরি কিসিঞ্জারকে বাংলাদেশে একবার নিমন্ত্রন করেছিলেন।কিসিঞ্জার সাব মোট ৪৫ মিনিট ইন্টারকন্টিনেন্টালে কাটিয়েছিলেন। তার মধ্যে ২৫ মিনিট রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে ব্যয় করেছিলেন। এ নিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের অনেকে রুষ্টও হয়েছিলেন।

ডিক উইলসনের মতো একজন বিশ্ববিখ্যাত নন্দিত স্কলার তার বৃহৎ কলেবরের গ্রন্থ ❝এশিয়া অ্যাওয়েক্স❞-এ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক স্যারকে উৎসর্গ করেছেন।
উৎসর্গের বাক্যটা ছিলো এরকম,
❝টু আব্দুর রাজ্জাক অব ঢাকা, হু ব্রট ইস্ট ইন মাই মাইন্ড❞

এত বড় নন্দিত একজন প্রফেসর যাকে নিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষ লিখেছেন, সমীহ করেছেন,
জাতীয় অধ্যাপকে ভূষিত হয়েছেন,
যাকে বলা হতো শিক্ষকদের শিক্ষক;
তিনি তার জীবনে অল্প কিছু প্রবন্ধ ছাড়া কিছুই রচনা করেননি।
কেন করেননি সেই রহস্যও তিনি উদঘাটন করে যাননি।

কি নেই এই বইটিতে?
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সব কিছুর ধারণা পাওয়া যায় এই বইটিতে।

আমার দেখা সেরা একটি সৃজনশীল জীবনী…

রেটিংঃ ৯.৫/১০

বই থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

সানজিদা রহমান মৃধা
আমি শরৎ এর সাদা মেঘ।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



One thought on “যদ্যপি আমার গুরু..(রিভিউ)

  1. খুব ভালো লিখেছেন,

    আপনার পড়া সেরা বইগুলোর আরো কিছু রিভিউ দেবেন,প্লিজ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *