মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জ্বীন এবং মানব জাতিকে তাঁর ইবাদত ব্যতিত আর কোন উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেননি। তিনি ঘোষণা করেছেন ‘আমি জ্বীন এবং মানব জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ সূরা জারিয়াত-৫৬।
ইবাদত বলতে যদি আমরা শুধু সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বুঝি তাহলে তো মহা মুশকিল এজন্য তিনি আবার ঘোষণা করেছেন ‘অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ সূরা আল জুমুআহ:10
সুতরাং নির্দেশ হলো সালাত শেষে দুনিয়ার বুকে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে হবে আর আল্লাহর বিধান কে অধিক স্বরণ করতে হবে তাহলে সেটিও ইবাদত হবে এবং সফলতাও আসবে।
আবার হাদীস শরীফে এসেছে হযরত ওমর রা. ৪ যুবককে মসজিদ থেকে প্রহার করে বের করেছিলেন সেখানে বসে তাছবীহ করা এবং পরবর্তী ওয়াক্ত সালাতের জন্য অপেক্ষা করার জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে ইমাম/মূয়াজ্জিন বা ওয়াইজগন রা সালাতে ইমামতি, আযান দেয়া বা ওয়াজ ইত্যাদি জাতীয় কাজ ছাড়া আর তেমন কোন কাজ করেন না এবং এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে মানুষের কাছ থেকে বিনিময় গ্রহন করে তার আর্থিক চাহিদা পূরণ করে। অথচ মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা এবিষয়ে অসংখ্য বার কঠিন হুঁশিয়ারি করেছেন এমন কি এরূপ করে কাফির হতে নিষেধ করেছেন। ‘আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক কাফির হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।’ সূরা আল বাক্বারাহ:41
ইমামতি করে, আযান দিয়ে, ওয়াজ করে আল্লাহর পথে আহবান ইত্যাদি করে মানুষের কাছ থেকে বিনিময় নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের সমাজে আল্লাহর এহেন বিধান গোপন করে এমন কাজকে মানুষ পেশা হিসাবে গ্রহণ করে উদর পূর্তি করছে। আল্লাহ এই উদরপূর্তিকে অগ্নি দিয়ে উদরপূর্তি করার সাথে তুলনা করেছেন আর তাদের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না এবং পবিত্রও করবেন না এছাড়াও বেদনাদায়ক আযাবের ঘোষণা দিয়েছেন।’নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই প্রবেশ করায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।’ সূরা আল বাক্বারাহ:174
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত এর বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ কারি হিসেবে আখ্যায়িত করে কঠিন আযাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।’এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।’ সূরা আল বাক্বারাহ:175
নবি রাসুল রা এমন কাজের জন্য কখনো কোন পারিশ্রমিক গ্রহন করেন নি এবং এধরনের কাজের বিনিময় মহান আল্লাহর কাছে ই আশা করেছেন কিন্তু আজ আমাদের সমাজের উপরিউক্ত লোক জন আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা না করে আল্লাহর বাণী মুখে এবং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পোষাক পরে দ্বারে দ্বারে হাত পেতে ইসলামের মহিমার বিসর্জন দেয়। যারা আল্লাহর ইবাদত করে হাত পাতে মানুষের কাছ থেকে বিনিময় গ্রহন করার জন্য তাদেরকে অনুসরণ করতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের নিষেধ করেছেন। আর যারা কোন বিনিময় প্রত্যাশা করেন না তাদেরকে অনুসরণ করতে আল্লাহ আদেশ করছেন।
‘অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।’ সূরা ইয়াসীন:21
মুক্তাদি যে কয় রাকাত সালাত আদায় করেন ইমামও সেই কয় রাকাত আদায় করে। সালাত শেষে মুক্তাদি ব্যববসা-বাণিজ্য, কৃষি-চাষাবাদ করতে পারলে ইমাম পারবেনা কেন? সালাত ফরজ তাই মুক্তাদি আদায় করেন এবং ইমামও আদায় করেন। এই সালাতের বিনিময় তো আল্লাহর কাছে। কিন্তু ইমাম মুক্তাদির নিকট থেকে বিনিময় নেয় কেন?
অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা অসংখ্য আয়াতে শুধু তাঁর ই জন্য ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন।
‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’।
আমাদের সমাজের কথিত আলিম-উলামাগন নিজেদেরকে নবি-রাসুল গনের ওয়ারিশ বলেন অথচ আল্লাহর ইবাদত করে মানুষের কাছ থেকে বিনিময় নেন বা প্রত্যাশা করেন কিন্তু নবি রাসুল কখনো এমন বিনিময় নেননি বা প্রত্যাশও করেননি নবি রাসুল দের এমন অসংখ্য ঘোষণা পবিত্র কুরআনে এসেছে। ‘আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তা দেবেন।’ সূরা আশ-শো’আরা:164
‘আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তাই দেবেন।’ সূরা আশ-শো’আরা:180
বিনিময় গ্রহন করতে নিষেধ করে আল্লাহ অসংখ্য আয়াত নাজিল করেছেন।’আপনি এর জন্যে তাদের কাছে কোন বিনিময় চান না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।’ সূরা ইউসূফ:104
‘বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না আর আমি লৌকিকতাকারীও নই।’ সূরা ছোয়াদ:86
‘এরা এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটি সারা বিশ্বের জন্যে একটি উপদেশমাত্র।’ সূরা আল আন-আম:90
এরই সুসংবাদ আল্লাহ তার সেই সকল বান্দাকে দান করেন, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে। (হে রাসূল! কাফেরদেরকে) বলে দাও, আমি এর (অর্থাৎ তাবলীগের) বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না আত্মীয়ের সৌহার্দ্য ছাড়া। যে-কেউ সৎকর্ম করবে আমি তার জন্য সে সৎকর্মে অতিরিক্ত সৌন্দর্য বৃদ্ধি করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী। সুরা আস শুরা: ২৩
এই ভোগবিলাসের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত নয় এমন ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন ‘তোমাদেরকে কি এ জগতের ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিরাপদে রেখে দেয়া হবে?’ সূরা আশ-শো’আরা:146
আল্লাহ মৃত জন্তু, শূকরের গোস্ত হারাম করেছেন এবং বিভিন্ন বিধান দিয়ে আল্লাহ ইসলাম কে মনোনীত এবং পূর্ণাঙ্গ করেছেন।তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত, সেই পশু যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম উচ্চারিত হয়েছে, শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, উপর হতে পতনে মৃত জন্তু, অন্য কোনও পশুর শিংয়ের আঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খেয়েছে এমন জন্তু, তবে (মরার আগে তোমরা) যা যবাহ করেছ তা ছাড়া এবং সেই জন্তুও (হারাম), যাকে (প্রতিমার জন্য) নিবেদনস্থলে (বেদীতে) বলি দেওয়া হয়। এবং জুয়ার তীর দ্বারা (গোশত ইত্যাদি) বণ্টন ৬ করাও (তোমাদের জন্য হারাম)। এসব বিষয় কঠিন গুনাহের কাজ। আজ কাফিরগণ তোমাদের দীনের (পরাস্ত হওয়ার) ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় করো না। আমাকেই ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। ৭ (সুতরাং এ দীনের বিধানাবলী পরিপূর্ণভাবে পালন করো)। হ্যাঁ, কেউ যদি ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়ে যায় (এবং সে কারণে কোন হারাম বস্তু খেয়ে নেয়) আর গুনাহের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে, তবে আল্লাহ নিশ্চয়ই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা মায়েদা :৩
আবার আল্লাহ সূদকে হারাম করেছেন
যারা সুদ খায়, (কিয়ামতের দিন) তারা সেই ব্যক্তির মত উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ দ্বারা পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এটা এজন্য হবে যে, তারা বলেছিল, ‘ব্যবসাও তো সুদেরই মত। ২০৭ অথচ আল্লাহ বিক্রিকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির নিকট তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে উপদেশ-বাণী এসে গেছে, সে যদি (সুদী কারবার হতে) নিবৃত্ত হয়, তবে অতীতে যা-কিছু হয়েছে তা তারই। সুরা আল বাকারাহ:২৭৫
এ সমস্ত বিষয় হারাম সেটি আমাদের সমাজের তথাকথিত আলিমগন ঘোষণা করলেও আল্লাহর ইবাদাত করে মানুষের কাছ থেকে বিনিময় নেওয়া হারাম সেটি স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক ঘোষণা করেছেন না আবার সেটি থেকে বিরত ও থাকছেনা এই শ্রেণীর লোকদের জন্যও আছে ভয়াবহ শাস্তি।
‘দরবেশ ও আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না? তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।’ সূরা মায়িদা: 63
প্রশ্ন আসতে পারে এসব বিষয়ে বিনিময় না থাকলে তো এসব কাজ কেউ করবেনা তাহলে উপায় কি? যে জানে তার সে সুযোগও নেই কেননা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কোনও ঋণের কারবার কর, তখন তা লিখে নাও। তোমাদের মধ্যে কোনও লেখক যেন ন্যায়নিষ্ঠভাবে (তা) লিখে দেয়। যে ব্যক্তি লিখতে জানে, সে যেন লিখতে অস্বীকার না করে। আল্লাহ যখন তাকে এটা শিক্ষা দিয়েছেন, তখন তার লেখা উচিত। সুরা আল বাকারাহ :২৮২
আমাদের তো কোন জ্ঞান ই ছিলনা আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তাহলে আমরা অস্বীকার করব কিভাবে।
‘শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ সূরা আলাক:5
আবার আল্লাহ আমাদের আদেশ দিয়েছেন ভালো কাজের আদেশ করতে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতে
‘তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো।’ সূরা আল-ইমরান : ১১০
আবার প্রশ্ন উঠতে পারে বিনিময় না থাকলে কেউ মসজিদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেনা তাহলে সেখানে সালাত আদায়ের কি হবে বা ইমামতি কে করবে?
সহজ সমাধান হলো মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বা নিরাপত্তা দিয়ে বিনিময় নেওয়া নিষেধ করা হয়নি। নিষেধ করা হয়েছে ইমামতি করে বা আল্লাহর ইবাদত করে বিনিময় গ্রহন করতে। দায়িত্ব গ্রহণ বা নির্ধারিত ইমাম রাখার প্রয়োজন পড়েনা। উপস্থিত জনগণের মধ্য থেকে যোগ্য একজনকে রসুল সা. এর শিখিয়ে ইমাম নির্বাচন করে সালাত আদায় করতে হবে।
আরো প্রশ্ন উঠতে পারে বিনিময় গ্রহন না করলে কথিত লোকগুলো আর্থিক চাহিদা কিভাবে পূর্ণ করবে? যদিও এটি একটি নির্বুদ্ধিতার প্রশ্ন।
সমাধান হলো পৃথিবীতে কেউ কারো আর্থিক চাহিদা পূরণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেনি তাহলে কথিত লোকগুলোর দায়িত্ব কেন সমাজ গ্রহন করবে।
অন্য একটি উদাহরণ দিতে চাই, এক ব্যক্তি ডাকাতি করতে পারে। ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর শাস্তি দিয়ে তাকে বলা হলো আর ডাকাতি করোনা। এমন সময় কেউ নিশ্চয় প্রশ্ন করতে পারেনা ডাকাতি ছেড়ে দিলে লোকটির আর্থিক চাহিদা কিভাবে পূর্ণ হবে।
আল্লাহর ওহি বিক্রি করে খাওয়া কে পাপ, জুলুম এবং অবৈধ ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তায়ালা ‘তাদের অনেককেই তুমি দেখবে, তারা পাপ, জুলুম ও অবৈধ ভক্ষণের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়। নিশ্চয়ই তারা যা-কিছু করছে তা অতি মন্দ।’ সুরা আল মায়েদা :৬২
আমাদের সমাজের কথিত আলিমগন তো অন্যায়ভাবে অর্থ সম্পদ জমা করে এবং আল্লাহর পথে তাদের ব্যয় করতেও দেখা যায় না তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন ‘হে মুমিনগণ! (ইয়াহুদী) আহবার ও (খ্রিস্টান) রাহিবদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করে এবং (অন্যদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও।’ সুরা আল তাওবাহ :34
কথিত আলিমগন নিজেদের নবী-রাসুলদের ওয়ারিশ মনে করলেও তাঁদের পেশাকে গ্রহন না করে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথে উপার্জন করে উদরপূর্তি করছেন।
আমাদের একটু জেনে নেয়া দরকার তাহলে নবী-রাসুলদের পেশা কেমন ছিল।
নবী-রাসুলরা কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতেন না। বরং নিজ হাতে অর্জিত রিজিক ভক্ষণ করাকে পছন্দ করতেন। মহানবী (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন ধরনের উপার্জন উত্তম? তিনি উত্তরে বলেছেন, ‘ব্যক্তির স্বহস্তে অর্জিত অর্থ এবং সৎ ব্যবসায়’। (সুয়ুতি আদ-দুররুল মানসুর খণ্ড, পৃষ্ঠা-২২০)
নবী-রাসুলগণ হলেন পৃথিবীর সেরা মানব, ফলে তাঁরা উত্তম উপার্জন তথা স্বহস্তে অর্জিত সম্পদে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হজরত আদম (আ.) ছিলেন একজন কৃষক। চাষাবাদ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর ছেলেদের পেশাও ছিল চাষাবাদ। তাছাড়া তিনি তাঁতের কাজও করতেন। কারো কারো মতে, তার পুত্র হাবিল পশুপালন করতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে কৃষিকাজের যন্ত্রপাতির নাম শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহর বাণী- ‘আর আল্লাহ আদমকে সমস্ত নামের জ্ঞান দান করেছেন’। (সুরা বাকারা: ৩১)
হজরত শীস (আ.) পিতা হজরত আদম (আ.)-এর মতো কৃষক ছিলেন। তাঁর পৌত্র মাহলাইল সর্বপ্রথম গাছ কেটে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করেন। তিনি শহর নগর ও বড় বড় কেল্লা তৈরি করেছেন। তিনি বাবেল শহর প্রতিষ্ঠা করেছেন। (ইবনে কাসির)
হজরত ইদরিস (আ.)-এর পেশা ছিল কাপড় সেলাই করা। কাপড় সেলাই করে যে অর্থ উপার্জন করতেন তা দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হজরত নূহ (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তিনি নৌকা তৈরি করেছিলেন। আল্লাহর বাণী- ‘আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহি অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো’। (সুরা হুদ: ৩৭) তিনি ৩০০ হাত দীর্ঘ, ৫০ হাত প্রস্থ, ৩০ হাত উচ্চতাসম্পন্ন একটি বিশাল নৌকা তৈরি করেন।
হজরত হুদ (আ.) ব্যবসায় ও পশুপালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হজরত সালেহ (আ.)-এর পেশাও ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন। তিনি পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হজরত লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনিও জীবিকা নির্বাহ করতেন চাষাবাদের মাধ্যমে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) জীবিকা নির্বাহের জন্য কখনো ব্যবসায় আবার কখনো পশুপালন করতেন।
হজরত ইসমাইল (আ.) পশু শিকার করতেন। পিতা-পুত্র উভয়ই ছিলেন রাজমিস্ত্রি। উভয়ে মিলে আল্লাহর ঘর তৈরি করেছিলেন।
হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পেশা ছিল ব্যবসায়, কৃষিকাজ ও পশুপালন। তাঁর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন। সুতরাং বেতন হিসেবে বায়তুল মাল থেকে অর্থ গ্রহণ করতেন।
হজরত শোয়াইব (আ.)-এর পেশা ছিল পশুপালন ও দুধ বিক্রি। তিনি পশুপালন ও দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর কন্যাগণ চারণভূমিতে পশু চরাতেন।
হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে লোহা দিয়ে বর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার কৌশল শিক্ষা দেন। শক্ত ও কঠিন লোহা স্পর্শ করলে তা নরম হয়ে যেতো। যুদ্ধাস্ত্র, লৌহ বর্ম ও দেহবস্ত্র প্রস্তুত করা ছিল তাঁর পেশা। এগুলো বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হজরত সোলায়মান (আ.) পিতা দাউদ (আ.) থেকে অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। তিনি নিজেও অঢেল সম্পদের মালিক ছিলেন। ভিন্ন পেশার গ্রহণ করার চেয়ে নিজ সম্পদ রক্ষা ও তদারকি করাই ছিল তাঁর প্রদান দায়িত্ব।
হজরত মুসা (আ.) ছিলেন একজন রাখাল। তিনি মাদায়েনে শ্বশুরের পশু চরাতেন। সিনাই পর্বতের পাদদেশে বিরাট চারণভূমি মাদায়েনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আট বছর তিনি স্বীয় শ্বশুর শোয়াইব (আ.)-এর পশু চরিয়েছেন।
হজরত হারুন (আ.)-এর পেশাও ছিল পশুপালন। পশুপালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হজরত ইলিয়াছ (আ.)-এর পেশাও ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন।
হজরত আইউব (আ.)-এর পেশা ছিল গবাদিপশু পালন। তাঁর প্রথম পরীক্ষাটি ছিল গবাদিপশুর ওপর। ডাকাতেরা তাঁর পশুগুলো লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। (আনওয়ারে আম্বিয়া ই. ফা. বাংলাদেশ)
হজরত ইউনুস (আ.)-এর গোত্রের লোকদের পেশা ছিল চাষাবাদ। তাঁর পেশাও ছিল চাষাবাদ।
হজরত জাকারিয়া (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মহানবী (স.) বলেছেন, জাকারিয়া (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাই তাঁর শত্রুরা তাঁর করাত দিয়েই তাকে দ্বিখণ্ডিত করে। (কিতাবুল আম্বিয়া, সহিহ বুখারি)
হজরত ইয়াহিয়া (আ.) জীবনের একটি সময় জঙ্গলে ও জনহীন স্থানে কাটিয়েছিলেন। আহার হিসেবে তিনি বৃক্ষের লতা-পাতা ভক্ষণ করতেন। (আনওয়ারে আম্বিয়া)
হজরত জুলকিফল (আ.)-এর পেশা ছিল পশুপালন।
হজরত ইয়াসা (আ.)-এর পেশা ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন।
হজরত ঈসা (আ.)-এর আবাসস্থল প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাঁদের উভয়কে (ঈসা ও মরিয়মকে) এক উচ্চভূমি প্রদান করেছিলাম যা সুজলা ও বাসযোগ্য ছিল।’ (সুরা আল মুমিনুন: ৫০) এই উচ্চভূমি হলো ফিলিস্তিন। তিনি ফিলিস্তিনে উৎপন্ন ফল-মূল খেয়ে বড় হয়েছেন। তিনি ঘুরে ঘুরে অলিতে গলিতে দীনের দাওয়াতি কাজ করতেন। যেখানে রাত হতো সেখানে খেয়ে না খেয়ে নিদ্রা যেতেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন।
আমাদের বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। তিনি ইরশাদ করেছেন, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে। (আদদুরুরুল মানসুর ষষ্ঠ খণ্ড পৃষ্ঠা-২২০)
তিনি গৃহের কাজ নিজ হাতে করতেন। বকরির দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা ও কাপড় সেলাই ও ধোলাই করতেন, গৃহে ঝাড়– দিতেন। মসজিদে নববী নির্মাণকালে শ্রমিকের মতো কাজ করেছেন। খন্দকের যুদ্ধে মাটি কেটেছেন। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতেন। তিনি ইরশাদ করেন, জমিনের অভ্যন্তরে তথা চাষাবাদ, খনন ও রোপণের মাধ্যমে রিজিক অনুসন্ধান করো।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এমন কোনো নবী নেই যিনি ছাগল চরাননি। জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন? প্রত্যুত্তরে রাসূল (স.) বলেন- হ্যাঁ, আমিও মক্কায় অর্থের বিনিময়ে ছাগল চরিয়েছি। বলাবাহুল্য, মহানবী (স.)-এর সাহাবিগণ অনেকেই ব্যবসায় করতেন। বিশেষ করে মুহাজিরগণ ছিলেন ব্যবসায়ী আর আনসারগণ ছিলেন কৃষক।
সুতরাং আযান দেয়া, ইমামতি করা, ওয়াজ করার মতো আল্লাহর ইবাদতের জন্য আর বিনিময় নয়। এধরনের বিনিময় স্বয়ং আল্লাহর কাছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবী-রাসুলদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমফিল গবেষক (এবিডি)
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়