প্রথম পাতা » বিনোদন » জীবনের “কাটপিস” গল্প

জীবনের “কাটপিস” গল্প

cutpiece

একসময় প্রচুর বাংলা সিনেমা দেখতাম। ২০০০ সালের পর বাংলা সিনেমায় ব্যাপকহারে ‘কাটপিস’ যুক্ত হলো। আমরা ডোজ বাড়িয়ে দিলাম। ‘প্রচুর প্রচুর’ সিনেমা দেখা শুরু করলাম। আমার জীবনের ঐ সময়টা সবচেয়ে আনপ্রোডাকটিভ, বিরক্তিকর, লসপ্রোজেক্ট কাল হিসেবে গণ্য। জীবনে অনেক কিছু ফিরে পেতে চেয়েছি, এখনো চাই। কিন্তু ‘প্রচুর প্রচুর’ সিনেমা দেখার দিনগুলি কখনো ফেরত পেতে চাইনি। আজো চাই না। আমার ধূসর জীবনের সেই ক্লান্তিকর সময়গুলো আরো বেশি বিবর্ণ, কঙ্কালসার!

এখনো বিনোদন মানে সিনেমাই দেখা। তবে ভালো মানের সিনেমা। একসময় এদেশে ভালো বাংলা সিনেমা হয়েছে, ভালো গান হয়েছে। একটি গানও একটি সিনেমা হয়ে উঠতো। গুণী নির্মাতারা সিনেমা বানাতেন, গুণী শিল্পীরা মন দিয়ে অভিনয় করতেন। দর্শকও তখন গুণী ছিল বৈকি!

বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পরিচালক পূর্বের ব্যবসায় মন দিয়ে কারওয়ান বাজারের আড়তে ফিরে গেছেন। বাংলা সিনেমার সংগ্রামী দর্শকরাও ক্লান্ত প্রাণ এক! তারা গেছেন কেউ অবসরে, কেউ কোমায়!

সিনেমার এমন অকাল আমাদের বিষণ্ন করে। একসময় নাটক-ফাটক করেছি। জায়গাগুলো এখনো টানে। মনটা খারাপ হয় চলচ্চিত্র জগতের কারো মনোবেদনার কথা শুনলে। আমাদের সিনেমাগুলো এদেশের বিমূর্ত খনিজ ছিল এককালে! যখন সপ্তাহে একটিমাত্র শুক্রবার আসতো আমাদের। আহা! শৈশব! আহা! এন্টেনা! সাদা-কালো জীবনও কতো রঙিন মনে হতো!

সিনেমা জগতের এমন ট্রাজিক পতনের বেশকিছু কারণ আছে। প্রথমত, শিল্পীদের দ্বিচারীবৃত্তি। তারা সিনেমায় যখন অভিনয় করেন তখন কতো আবেগে, প্রেমে, সংগ্রামে জীবনকে ভালোবেসে প্রতিটা সংসারকে টিকিয়ে রাখেন দুঃশাসনের সাথে লড়াই করে! অথচ, বাস্তবে বিয়ে করার সপ্তাহান্তে, বছরান্তেই বিরহবিচ্ছেদই চিরায়ত সত্য হয়ে যায়! জীবনে আর সিনেমায় কতো তফাৎ! কতো রঙ্গ জানোরে মানুষ!

একজন নায়িকাও কোনো সিনেমায় দেখিনি যে কি না রাত বারোটায় ক্লাবে যাওয়া পছন্দ করে! সতী-সাধ্বী নারী চরিত্রে অভিনয় করা এসব রমণীরা হবেন দেশ-কাল-সমাজের আইডল! কিন্তু, সিনেমার বাইরে ইহারা কেবলই ডল!! ‘জীবনের সাথে জীবন যোগ করতে না পারলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা!’

আমাদের নায়কেরা বরাবরই পর্দায় আছড়ে পড়েন! নায়িকার বিপদে, সাধারণ মানুষের সংকটে পর্দাকাঁপানো শত শত নায়ককে দেখলাম! কিন্তু হায়! ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে জাতির দুর্দিনে কোনো নায়ককেতো পেলাম না! দুর্বোধ গাধা কেন মুখে পাউডার মেখে দুরন্ত ঘোড়া সাজে!!!

ভালো দর্শক ভালো সিনেমা তৈরি করে, যেমন ভালো নাগরিক তৈরি করে ভালো প্রশাসক। কোনো এক সিনেমার নায়িকার সম্ভ্রম হারানোর বেদনাদায়ক লাইভে দর্শককুলের মন্তব্যকলামের কাটপিসীয় সংলাপে আমি তো এক্কেরে পূর্ণদৈর্ঘ্য অবাক হয়ে গেলাম!

মনে হয়, আমাদের সিনেমা অথবা শিল্পীরা কখনো জীবনমুখী হতে পারেনি। কিংবা ভালো দর্শকের অভাবে এদেশে কখনোই ভালো সিনেমা কিংবা শিল্পী তৈরি হতে পারলো না! আফসোস- সিনেমা! শিল্পী!! দর্শক!!!

বিনোদন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *