চাঁদপুর ভ্রমন করে বাড়ি ফিরছি। লঞ্চ ভীতি কেটে গেছিল যাওয়ার সময়ই। আসার পথে উপভোগ করেছি। কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরাফেরা বাদে বাকি সময় বসে একটা মুভি শেষ করলাম তাও অনেক দিন পর৷ রবিন যাওয়ার সময় বলে দিয়েছিল চাঁদপুরে দেখার তেমন কিছু নেই। তাই যাওয়ার সময়েই আশাটা কম রেখেছিলাম।
প্রথম দিন যেটুকু সময়ই পেয়েছিলাম বৃষ্টির বাগড়ায় কোথাও যেতে পারিনি তাই ডাকাতিয়া নদীর কোল ঘেষা ঘাটে বসে ৩ বন্ধু জীবনের হিসেব কষেছিলাম অনেকক্ষন৷
পরদিন সকালেও সেই ঘন বৃষ্টি, মনে হচ্ছিল আকাশ যেন অনেক অভিমানে চাঁদপুরের বুকে ইচ্ছেমত চোখের জল ফেলছে৷ মনে মনে ভাবলাম এবার বুঝি ঘরবন্দি ট্যুর করতে এলাম। সকাল গড়িয়ে দুপুর, আকাশের গুমট ভাব তখনও ফিকে হয়নি। আলোচনা করলাম দুপুরের খাবারের পরই বেরিয়ে পরব। বৃষ্টি নাহয় কিছুটা ছুয়েই দিল।
সবুজ ভাইয়ার বাইক আগেই বলে রেখে দিয়েছিলাম। ভাই ফুয়েল দিতেও কার্পণ্য করেন নি৷ এমনিতেও আমরা বাইকেই ঘুরি। চাঁদপুরে এসে বাইক পেয়ে মনে হচ্ছিল যেন নিজ এলাকাতেই আছি৷ খোকন কিছুক্ষন বাইক চালিয়ে কাঁদায় চালাতে না চেয়ে রাসেল কে দিয়ে দিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে গেলাম ১০০০ বছরের পুরনো লোহাগড়া মঠে। প্রাচীন শিল্প শৈলীর প্রতি আমার বরাবরই ঝোক৷ কিছুক্ষন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম চুন সুরকি দিয়ে তৈরি বিশালাকার মঠ গুলোর দিকে।
সময় এমনিতেই কম তাই কাল বিলম্ব না করে রওনা হলাম রূপসা জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্য। রাসেল সাঁই সাঁই করে বাইক নিয়ে এগিয়ে চলছিল।খোকন গতি কমানোর তাড়া দিচ্ছিল। আমি একটু আধটু গানে টান দিচ্ছিলাম আর গুগল ম্যাপে সজাগ দৃষ্টি রাখছিলাম। কেননা স্থানীয়দের কাছে জেনেছিলাম রূপসা গেলে হয়ত আসতে অনেক রাত হবে৷ রাস্তা হারানোর ভয় ও দেখিয়েছিলেন একজন। তিনিতো জানেন না ২০২১ সালে রাস্তা চিনতে স্থানীয় হওয়া লাগেনা৷
১ ঘন্টার ব্যাবধানে চলে গেলাম রূপসা জমিদার বাড়িতে। মন খারাপ হল বাড়িটিতে নতুন রঙ দেখে। এখন এখানে ভুমি অফিস করা হয়েছে তাই এন্টিক ভাবটা নেই বাড়িটিতে৷ বাড়ির পেছনে যেতেই চোখে পড়ল অনেকগুলো কামরা সমৃদ্ধ আরো দুটি দ্বীতল ঘরের। মনে পড়ে গেল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নান হল আর ট্রাস্টি বোর্ডের কথা। বাড়িটা অনেকটা ওরকমই। জাহ্নবী স্কুলের পাশের জমিদার বাড়ি কিংবা মহেরা জমিদার বাড়ির কারুকার্য আর এখানকার নির্মান শৈলী কিছুটা একই রকম মনে হল।
রাত ঘনিয়ে আসছিল তাই আর দেরী করলাম না। রওনা হলাম চাঁদপুরের পথে। আমার দেখা চাঁদপুরের অভিজ্ঞতা হল এখানে সব যায়গাতেই গাছ গাছালী অনেক বেশী। ঘর বাড়ি সব যেন গাছ পালার মাঝেই। বাড়ির পাশেই পুকুর। বহুতল বাড়ি হলেও যেন পুকুরে গোসল করা লাগবেই। চারদিকে মাছের বড় বড় প্রজেক্ট।শহরটা যেন মাছের আধার।
রাত তখন ৮ঃ৩০, বাইক নিয়েই চলে গেলাম মোহনায়। এখানে ৩ টি নদীর মিলনমেলা। ভুল করে না থাকলে পদ্মা, ডাকাতিয়া আর মেঘনা নদীর মিলনস্থল এই মোহনায়। চারদিকে থইথই পানি। ওই দূরে অনেক আলো দেখা যাচ্ছিল। খোকন জানালো ওসব কুবেরদের নৌকা। অনেক বাতাস বইছিল আর মনে পরে যাচ্ছিল কক্সবাজার বীচের কথা। পাশেই চলছিল কোন আগন্তুকের গিটারে আতিফ আসলামের আমার সব পছন্দের গান। বাজানোর কোন যন্ত্র পেলাম না তাই সামিল হইনি সেই আড্ডায়। রাত ১১ঃ৩০ নাগাদ বাসায় ফিরলাম।
ভাতিজা হিসান কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। ও কিভাবে যেন বুঝে গেছে আজ আমরা চলে যাব। ওর অনেক কান্না সত্ত্বেও ওকে ফেলেই রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। ১২ টার লঞ্চে রওনা হয়েছিলাম। যতক্ষনে লেখা শেষ হল ততক্ষনে নারায়নগঞ্জ পার হচ্ছিলাম। এভাবেই সমাপ্ত হল আমাদের আরেকটি যাত্রা।