কন্ঠশিল্পী মমতাজ কে বাংলাদেশের কে না চেনে। দেশের বাইরেও অনেকে চিনে। আমিও চিনি। আমার নিজ জেলার পাশের জেলার মানুষ তিনি। মানিকগঞ্জ আর টাংগাইল। তিনি অনেক আগে টাংগাইল জেলার নাগরপুর থানার রাথুরা গ্রামের তিন দিন ব্যাপী হয় এরকম একটা মেলায় বলা যায় নিয়মিত আসতেন। আমিও ছোটবেলায় নিয়মিত যেতাম এই মেলায়। চড়কগাছে উঠতাম আর জিলাপী খেতাম। আরো অনেক কিছু করতাম। পোলাপান মেলায় গেলে যা যা করে আর কি! কিন্তু আমার মমতাজকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কারণ অনেক রাতে বসত গানের আসর। অতো রাত পর্যন্ত মেলায় থাকার উপায় নাই বাচ্চা পোলাপানের। মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি মমতাজ যখন ছোট ছিলেন তখন থেকেই এই মেলায় নাকি আসতেন। মমতাজের নামের সাথে সাথে তরফ আলী বয়াতির নামও শুনেছি। অনেক দিন আগের কথা কিছু কিছু মনে আছে। মমতাজ তরফ আলী বয়াতির সাথে গান করতেন। তরফ আলী বয়াতি টাংগাইল এবং মানিকগঞ্জের একজন সুপরিচিত গায়ক।
“প্রসঙ্গত, মমতাজ বেগমের জন্ম ১৯৭৪ সালের পাঁচ মে। তিনি গানের জগতে আসার আগে প্রথম জীবনে বাবা মধু বয়াতির কাছে তালিম নেন। পরে মাতাল রাজ্জাক দেওয়ান এবং শেষে লোক গানের শিক্ষক আবদুর রশীদ সরকারের কাছে গান শেখেন। বাবা মধু বয়াতি ছিলেন মূলত বাউল শিল্পী।”
এরকম মেলায় মেলায় গান করে এবং আরো অনেক সংগ্রাম করে তিনি আস্তে আস্তে উপরে উঠে এসেছেন। তার এই সংগ্রামের গল্প পাওয়া যাবে “মমতাজ” নামে একটা সিনেমা দেখলেও। এই সিনেমার নামও সবার জানা আমার মনে হয়। যাই হউক মেলায় মেলায় গান করে অতো বিখ্যাত হওয়া যায় না। তার পরিচয় সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে বলা যায় ২০১০ সালের দিকে। ইত্যাদি তে “রিটার্ন টিকেট হাতে লইয়া আইসাছি এই দুনিয়ায়” গান গেয়ে। এরপর থেকে তিনি সুপরিচিত হয়ে উঠেন। উনার একক এ্যালবামের সংখ্যা ৭০০ টিরও বেশি। বিশ্বে উনিই প্রথম শিল্পী যার এতগুলো একক এ্যালবাম আছে। যাই হউক। তিনি যে একজন সাংসদও তা সবার জানা। ২০১৪ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে আবার মানিকগঞ্জ-২ আসনে সংসদ সদস্য হন।
এসব অর্জনের সাথে এবার যুক্ত হল একটি ডক্টরেট ডিগ্রী। তিনি “ডক্টর অফ মিউজিক” পেলেন এই তো গত পরশু মানে ১০ এপ্রিল ২০২১। ভারতের তামিলনাড়ুর গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি এ সম্মাননা দিয়েছে তাকে। তারা উল্লেখ করে, ‘বিশ্বের প্রথম শিল্পী হিসেবে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবামের রেকর্ড, সুদীর্ঘ ৩০ বছর বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা ও সমাজসেবা ছাড়াও নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রেখে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মমতাজ’।
এই করোনা পরিস্থিতি এর মধ্যে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করে মমতাজ কে এই পদক দেয়া হয়। মমতাজ নিজে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আজকে ১২ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরেছেন পদক নিয়ে।
পদক প্রাপ্তির ব্যাপারে তিনি বলেছেন- ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। ৩০ বছর ধরে আমি মা-মাটির গান করে চলেছি; মানুষের সেবা করেছি। এই প্রাপ্তি কাজ করতে আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।’
উনাকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা এবং শুভেচ্ছা।
তবে, যে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক এই ডিগ্রিটা দিয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় এর বৈধতা, মান এমনকি অস্তিত্ব নিয়েও বেশ প্রশ্ন আর বিতর্ক রয়েছে বলে অনেকেই বলছেন৷ মমতাজের দাবি, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুয়া বলা হচ্ছে এটা সে বিশ্ববিদ্যালয় নয়৷