প্রথম পাতা » বিনোদন » রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের মাদকাসক্তি: একটি অবিশ্বাস্য ফিরে আসার গল্প

রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের মাদকাসক্তি: একটি অবিশ্বাস্য ফিরে আসার গল্প

Robert Downey Jr

রবার্ট ডাউনি জুনিয়র সারা বিশ্বের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। আয়রন ম্যান হিসেবে অভিনয় করে তিনি এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। উচ্চ পারিশ্রমিকের অভিনেতা হিসেবেও তিনি বেশ আলোচিত। অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম পর্যন্ত তার অভিনয় করা মুভিগুলো বক্স অফিসে রেকর্ড করা মুভি।

কিন্তু তার সফলতার এই কাহিনী সবার জানা থাকলেও এর পেছনের দীর্ঘ এক সংগ্রামের কথা অনেকেরই অজানা।

কাল্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা রবার্ট ডাউনি সিনিয়রও মাদকাসক্ত ছিলেন এবং ছয় বছর বয়সে তার ছেলেকে গাঁজা সেবন করার অনুমতি দিয়েছিলেন। মাদক সেবনই যেন বাবা এবং ছেলের মধ্যে আবেগের বন্ধন তৈরি করেছিল। ফলে ডাউনি নিয়মিত মদ্যপায়ী হয়ে উঠেন।

হলিউডের একজন উদীয়মান তারকা

ড্রাগ এবং অ্যালকোহল আসক্তি সত্ত্বেও ডাউনি জুনিয়র ৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে একজন তরুণ অভিনেতা হিসাবে নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। “স্যাটারডে নাইট লাইভ” সিরিজের এক সিজনে অভিনয় করার পর তিনি জন হিউ এর “উইয়ার্ড সাইন্স” মুভিতে অভিনয় করার সুযোগ পান এবং ১৯৮৭ সালে তিনি দ্য পিক-আপ আর্টিস্ট-এ মলি রিংওয়াল্ডের বিপরীতে অভিনয় করেন।

একই বছর, ডাউনি ব্রেট ইস্টন এলিসের উপন্যাস “লেস দ্যান জিরো”র চলচ্চিত্র রূপান্তরেও স্মরণীয় অভিনয় উপহার দিয়েছিলেন, একজন ধনী ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যার জীবন হেরোইনের নেশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। ডাউনির অফ-স্ক্রিন জীবনও শীঘ্রই অদ্ভুতভাবে সেই ভূমিকার অনুরূপ হয়ে গিয়েছিল।

তিনিও সিনেমার সেই ছেলেটির মতো হিরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

১৯৯২ সালের বায়োপিক “চ্যাপলিন”-এ ডাউনির অভিনয় তাকে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন এনে দেয় এবং তার ক্যারিয়ারে ঊর্ধ্বগতি চলে আসে।

কিন্তু ১৯৯৬ সালে হেরোইন এবং কোকেইন রাখার জন্য তিনি গ্রেফতার হন। ২০০৩ সালের একটি সাক্ষাতকার হতে জানা যায়, মাদক অপরাধের জন্য তিনি বহুবার গ্রেফতার হন এবং জেলে যাওয়া এবং জেল থেকে বের হওয়া চলতেই থাকে।

মাদক এবং অ্যালকোহল অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি

নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ডাউনি প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে পড়েন এবং তাদের বিছানায় শুয়ে পড়েন। মাদক পরীক্ষার আদালতের আদেশ পালনে বার বার ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ৩ বছরের কারদণ্ড দেওয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়া মাদক অপব্যবহার চিকিৎসা সুবিধা এবং জেলে ১ বছর কাটানোর পর তিনি বের হয়ে আসেন।

২০০১ সালে প্যারোলে থাকাকালীন সময়ে ডাউনি খালি পায়ে ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার সিটিতে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে গ্রেফতার হন। এই ঘটনায় তিনি টিভি শো “অ্যালি ম্যাকবিল” থেকে এবং আরো কয়েকটি সিনেমা এবং মঞ্চাভিনয় থেকে বাদ পড়েন। এবার জেলে পাঠানোর পরিবর্তে তাকে পাঠানো হয় মাদকাসক্তি নিরাময় বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

সন্ধিক্ষণ বা টার্নিং পয়েন্ট

ডাউনির স্ত্রী সুসান ডাউনি বলেন, ২০০৩ সালে তিনি তাকে আল্টিমেটাম দেওয়ার পর ডাউনি মাদক ছেড়ে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ডেইলি মেইলের একটি নিবন্ধ অনুসারে, এই অভিনেতা ১২-ধাপের প্রোগ্রাম, যোগব্যায়াম, মিডিটেশন এবং থেরাপির সংমিশ্রণে মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম হন।

মেল গিবসন ব্যক্তিগতভাবে ডাউনের দায়বদ্ধতা বীমায় স্বাক্ষর না করলে তার ক্যারিয়ার আর শুরু হতো না। ব্রেইভ হার্ট সিনেমার নায়ক, বন্ধু মেল গিবসনের এই সহায়তায় রবার্ট ২০০৩ সালের “দ্য সিঙ্গিং ডিটেকটিভ” সিনেমায় কাজ শুরু করেন।

একের পর এক ভালো ভালো সিনেমায় অভিনয় করতে থাকেন। যেমন গথিকা, এ স্ক্যানার ডার্কলি, জোডিয়াক এবং কিস কিস ব্যাং ব্যাং।

আজকের সাফল্য

Iron Man
আয়রন ম্যান

ডাউনির তারকাশক্তির বিস্ফোরণ ঘটে ২০০৮ সালে “আয়রন ম্যান” মুভিতে টনি স্টার্ক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। একই বছর “ট্রপিক থাণ্ডার” মুভিতে অভিনয় করে অস্কার মনোনয়ন পান। ২০১২ সালে তিনি “দি এভেঞ্জার” সিনেমায় অভিনয় করেন এবং পরবর্তীতে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের বেশ কয়েকটি মুভিতে আয়রন ম্যান বা টনি স্টার্ক চরিত্রে অভিনয় করেন।

এছাড়াও তিনি দুটি শার্লক হোমস সিনেমা এবং অন্যান্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন যা অভিনেতা হিসাবে তার প্রতিভা এবং পরিসীমা প্রদর্শন করে চলেছে।

মার্ভেল স্টুডিওর সভাপতি কেভিন ফেইজের মতে, আয়রন ম্যান হিসেবে রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে নেওয়া ছিল তাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। অথচ আজকের মার্ভেল স্টুডিও যে সফলতা অর্জন করেছে তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যার, তিনি হলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র।

উপার্জন

শুধু অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম সিনেমা থেকেই তার উপার্জন হয়েছে $১৩০ মিলিয়ন, বাংলাদেশী টাকায় যা ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকারও বেশী।

$৫০০,০০০ পারিশ্রমিক নিয়ে শুরু করেছিলেন আয়রন ম্যান মুভি। মার্ভেল থেকে তার উপার্জন প্রায় $৩৯৬ মিলিয়ন – $৪৩৫ মিলিয়ন।

একসময় তাকে অবাঞ্চিত হিসেবে দেখা হতো। ডাউনি এখন নিজেকে এমন একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন, এখন স্টুডিও এবং পরিচালকরা তাকে তাদের সিনেমায় অভিনেতা হিসেবে পেতে চান। ১৫ বছরেরও বেশি সময় হলো তিনি মাদককে না বলে দিয়েছেন। মাদক থেকে তার এই ফিরে আসার গল্প সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলির মধ্যে একটি।

বিনোদন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Bikul
বিকুল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ভালোবাসেন ব্লগিং করতে এবং অন্যের লেখা পড়তে। অবসর সময় কাটান ভালো মুভি দেখে। সারা বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *