প্রথম পাতা » স্বাস্থ্য » কেপটাউনে হাসপাতালের একটা কক্ষের কথা

কেপটাউনে হাসপাতালের একটা কক্ষের কথা

Victoria Hospital

হাসপাতালটির নাম ভিক্টোরিয়া হসপিটাল। সরকারি এ হাসপাতালটি কেপটাউনের ওয়েনবার্গ এলাকায় অবস্থিত। সেখানে আমার চার দিন থাকার দূর্ভাগ্য হয়েছিল। চিকিৎসালয় যত-ই উন্নতি হউক না কেন, সেখানে যেতে বা থাকতে কারো-ই ভালো লাগে না, এটাই সত্য। আর সে কারণেই হাসপাতালে যাওয়া নিজেকে দুর্ভাগ্যের কাতারে এনেছি। হাসপাতালে প্রবেশ করা মাত্রই সবার ফোনে অটো ইন্টারনেট সংযোগ হয়ে থাকে। 

হাসপাতালে অনেকগুলো পৃথক পৃথক কক্ষ আছে, যেখানে রুগি রাখা হয়। সুতরাং, একটি কক্ষে আমি ছিলাম। কক্ষটিতে পনেরোটি বেড আছে। অর্থাৎ, পনেরো জন রুগী রাখা যায়। বেডগুলো অতি মজবুত ও চাকা বিশিষ্ট। উঁচু নীচু করার ব্যবস্থা আছে। রুগীর প্রয়োজনীয় কাপড়, জুতা বা অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার ব্যবস্থা আছে বেডটিতে।প্রতিটা বেড পরিস্কার ও চকচক করছে। কোনোটিতেই পানের পিক লেগে নেই, নেই কোনো চক পেন্সিলের দাগ। কোনো বেডে জং ধরা নেই বা নেই কোনো জংয়ের লালচে রং। বেডের কোনো একটি জায়গায় জং ধরে ফুঁটো হয়ে যায়নি।

inside of Victoria Hospital

প্রতিটা বেডের চাদর নতুন। কিঞ্চিৎ পরিমাণ বা বিন্দু পরিমাণ  কোনো দাগ নেই। জন প্রতি চারটি করে হালকা ও ভারি চাদর দেওয়া হয়েছে। সবগুলো দেখতে নতুন। অনুরূপ বাস্তবতা বালিশের ক্ষেত্রেও। 

প্রতিটা রুগীর জন্য মোটা কাপড়ের তৈরি পর্দার ব্যবস্থা করা আছে। যা দেওয়ালের দিকে পরিস্কার ভাবে ঝুলছে। কোনো রুগীকে আড়াল করে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হলে, তখন পর্দা টেনে দেওয়া হয়। 

প্রতিটা বেডের পাশে একটা চেয়ার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা একটা টেবিল ও খাবার রাখার জন্য ছোট একটা বক্স দেওয়া আছে। প্রত্যেক রুগীর জন্য আলাদা ফাইল। নতুন যে ডাক্তার ও নার্স আসুক, ফাইল দেখলেই রুগীর চিকিৎসা ব্যবস্হা ও রুগীর রোগের ধরন জানতে পারেন। 

কক্ষটিতে পনেরো জন রুগীর জন্য তিন জন ডাক্তার ও পাঁচ জন নার্স সার্বক্ষণিক বরাদ্দ দেওয়া থাকে। এছাড়া তিন জন ক্লিনার সবসময় তাদের কাজের মধ্যে ব্যস্ত দেখা যায়। এছাড়া মেডিকেল পড়া কিছু ছাত্র ছাত্রীদের দেখা যায় তাদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে।

inside of Victoria Hospital

রুমের একপাশে দুই দিকে দুটো টয়লেট এবং দুটো স্নান রুম। যা অতি পরিস্কার। গন্ধের বালাই পর্যন্ত নেই, নেই কোনো মাছির ভনভনানি। সাবান, ট্যিসু আছে, হাত শুকানোর হাওয়া যন্ত্রও আছে। 

রুমের আরেক পাশে ফার্মেসী। সেখান থেকে এই রুগীদের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। ওষুধ সরবরাহসহ সবকিছুই ফ্রি। চিকিৎসা বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হয় না। যত কঠিন ও দামী ওষুধ হোক না কেন, রুগীদের এক টাকার ওষুধ কিনতে হয় না।

inside of Victoria Hospital

রুগীদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। যদি কেউ জেগে তবে ভোর চারটায় এক পিচ ব্রেড আর কফি। সকাল ছয়টার সবার জন্য নাস্তা ব্রেড আর কফি। সকাল আটটায় দুধ, পরেস, উইট বিস, বাটার মিশ্রন ব্রেড ও কফি থাকে। দুপুরের খাবার বারোটায়। সেখানে ভাত, মাছ, মাংস ও সবজি থাকতে পারে। চারটায় কফি ও ব্রেড। রাতের খাবার সন্ধ্যা ছয়টায়। এখানে আসতে পারে হালকা ভাত আর যে কোনো তরকারি। রাত সাড়ে আটটায় কফি ও ব্রেড। 

নেই কোনো রাজনৈতিক নেতার দাপট, রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীদের আনাগোনা। হাসপাতালে দালালের কোনো নামগন্ধ নেই, নেই কোনো ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি। রুগীদের আত্মীয়-স্বজনের ভীড় থাকে না। যেহেতু বাদাম বিক্রেতা নেই, সেহেতু বাদাম, গরম বাদাম, বাদাম বলে কেউ চিল্লায়ও না। 

মাহফুজার রহমান
কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা
Rahman.mahfuzar7@gmail.com
১০/০৯/২০২৪

স্বাস্থ্য থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মাহফুজার রহমান
মাহফুজার রহমান
কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *