যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। এটি একটি প্রবাদ। আমাদের আগের প্রজন্ম একথা বলেছে, আমরাও বলছি। আমাদের পরের প্রজন্মও হয়তো বলবে।
তবে ক্রান্তিকাল বলে একটা কথা আছে। ইংরেজিতে যাকে বলে transitional period. নব্বইয়ের দশকে যাদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে তারা বলতে পারবে এই transitional period কী জিনিস। সমাজ যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয় তখন তাকে বলে ক্রান্তিকাল। প্রযুক্তির উৎকর্ষ সমাজকে বদলে দিয়েছে। আমূল পরিবর্তনের ভালো মন্দ দুই দিকই থাকে। মূলের পরিবর্তন অবসাদ তৈরি করতে পারে। নব্বই দশকের সেই মানুষগুলোর অনেকেই পরবর্তিতে অবসাদে ভুগেছেন।
অভিজিৎ বসু যাই বোঝাতে চান না কেন, তার এই গান যেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে চায়-
যে কাল স্রোতে তুমি, সে কাল কবলে আমি
কালের নিয়মে চলা তোমার আমার
কালের সাথেই হাঁটি, তুমি আমি পাশাপাশি
কালের কক্ষপথে এই পারাপার
অবিরাম হাতছানি কোন নির্জন
বেলা অবেলার এই নিয়ত দহন
কাল আকাল না ভেবেই ভাসছে জীবন
এ কাল নিঃস্ব করে তোমায় আমায়
এ অবস্থায় নস্টালজিক হতেই যেন বেশি ভালো লাগে। চলুন ফিরে যাই নব্বই দশকে-

এই ঘড়ি কে কে ব্যবহার করেছেন? ভালো রেজাল্ট করেছিলাম বলে দাদা আমাকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। আমার মনে আছে ঘড়িটি কখনো হাত থেকে খুলতে চাইতাম না। পানি নিরোধক ছিল বলে সবসময় হাতে পড়ে থাকতে পারতাম। তখন এটিই ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বা সম্পত্তি, যেটাই বলুন।

তখন সবার বাড়িতে ব্যবহার করা হতো এটি। আমরা বলতাম কুপি। কেরোসিন তেল ছিল এর জ্বালানি। সন্ধ্যা হলেই ঘরে আলো জ্বলতো এই জিনিসটি ব্যবহার করে।

চিনতে পারছেন? আমরা বলতাম বগুনা। কুপি বা প্রদীপ এর উপরে রাখা হতো যেন সারা ঘরে আলো ছড়িয়ে পড়ে। আজ আর নেই তার উপস্থিতি। একসময় আমরাও যেমন হারিয়ে যাব।

হারিয়ে যাওয়া হারিকেনের আলো। আগে পড়াশুনা করতাম কুপির আলোতে। কুপির আলোর একটি সমস্যা হচ্ছে আগুনের শিখা কাঁপতো, ফলে আলো স্থির হয়ে থাকতো না। তাই এসএসসি পরীক্ষার আগে একটি হারিকেন কিনে এনেছিলাম। আজও সেটি আছে। ধূলোবালিপূর্ণ অবস্থায়।

আপনি কি ক্যাসেটে পেনসিল ঢুকিয়ে ফিতা টেনেছেন? আনিসুল হক সুন্দর একটি কলাম লিখেছেন এই শিরোনামে। এভাবে ফিতা টানায় খুবই দক্ষ ছিলাম আমি।

ক্যাসেট প্লেয়ার এবং একইসাথে রেডিও। তাই বলা হতো টু ইন ওয়ান। বিনোদনের বড় একটি মাধ্যম ছিল এটি।

সব বাড়িতে টিভি ছিল না। তাই খেলা দেখার সময় এই অবস্থা হতো।

একটি মাত্র টিভি চ্যানেল- বিটিভি। এভাবে এন্টেনা ঘুরিয়ে সিগন্যাল পেতে হতো।

তখন স্মার্টফোন ছিলনা। তাই এই ডিকশনারিই ছিল বহুল ব্যবহৃত ইংরেজির জাহাজ হওয়ার উপায়।

এই কলম দিয়ে লিখেছি সবচেয়ে বেশি। যাদের টাকা বেশি, তারা রেড লিফ কলম ব্যবহার করতো।

মনে আছে তো কিভাবে বানিয়েছি আমরা এই চমৎকার শিল্পকর্ম!

ব্যাটারিচালিত এই টর্চ লাইট দিয়ে কত তারাকে লাইট মেরেছি! রাতের বেলা চলাচলের সম্ভ্রান্ত সাথী।

আমের সিজন আসলেই এভাবে ঝিনুক দিয়ে ছুড়ি তৈরি করতাম। এটা দিয়ে আম ছিলে কাঁচা আম খেতাম।

এটা দিয়ে কে কে খেলেছেন? এটার নাম কি ছিল আপনার এলাকায়? আমরা বলতাম ঠল্লুই।

কে কে কুড়িয়েছেন এইগুলো? খেলাটি গোপনে খেলতে হতো। অভিভাবকরা এই খেলাটি পছন্দ করতেন না। মাটির পাত্রের ভাঙ্গা অংশ (চাঁড়া) দিয়ে খেলতাম। দিয়াশলাইয়ের মলাটগুলো টাকার নোটের মতো ছিল খেলাটির ক্ষেত্রে।

ইচিং বিচিং চিচিং চা/ প্রজাপতি উড়ে যা। আমাদের ছোটবেলার অন্যতম একটি খেলা।

গরিবের খেলনা। কলাপাতার কাণ্ড এভাবে ভাগ করে খেলনা বানানো হতো। যেটি নাড়ালে ঠাস ঠাস শব্দ হতো।

এভাবে কতজনকে বোকা বানিয়েছেন? আমি অবশ্য বেশি পারিনি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বোকা হয়েছি।
মীনা কার্টুনের গানটি যেন আজও কানে বাজে।
আসে দিন ভালো আসুক। সবার জন্য এই কামনাই থাকলো।