কখনোই সমাজের খারাপ বিষয়গুলোকে কীর্তন করবেন না। একজন মানুষের মন খুব ভালো অথচ মুখ খারাপ- এই ভালো মন মূল্যহীন। কাউকে গালি দিলে সে যে কষ্ট পায়, একজনের সাথে খারাপ আচরণ করলে সে যে ব্যথা পায় তা আপনার ভালো মন দিয়ে কোনদিন মেটানো যাবে না। অহেতুক রাগারাগি করে কারো দিন খারাপ করে দিয়ে আপনি ফেরেশতা সাজলেন- এই ফেরেশতাগিরি কোন কাজে আসবে না। বদ রাগ, মুখের খারাপ ভাষা এসব ভালো মনের পরিপূরক নয়। সুতরাং ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে তার বদগুণগুলোকে জায়েজ করার প্রশ্ন অবান্তর।
আপনার মন ভীষণ মন্দ, মানুষ হিসেবে বদ- দোষগুলো চেপে রাখেন। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। হাসিমুখে কথা বলেন। আপনার সাথে যাত্রার সহযাত্রী হয়ে আপনার থেকে ভালো আচরণ আশা করি। উল্টাপাল্টা গালি দিলেন- সেটা পশুর উদ্দেশ্যে দিলেও মানুষ আপনাকে মাপতে পারে। ভালো মন ধুয়ে পানি খাওয়ার সুযোগ নাই যদি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পারেন। কথায় যদি সংযত হতে না পারেন তবে আপনার ভালোমানুষি শোকেসে তুলে সাজিয় রাখুন এবং মাঝে মাঝে নিজেই নিজেকে দেখুন। ওদিয়ে সমাজের কোন উপকার হচ্ছে না।
সমাজে গিয়ে আমার ছেলে মুরগীর থাই ছাড়া খায় না বলা, সামনের সিট ছাড়া বসে না শেখানো কিংবা আমার সন্তান সবার সেরা- গোটা নষ্টের গোঁড়া আপনি। যে স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না তার ভালো মানুষ সেজে থাকা ভন্ডামি। গন্ডার অনেক কিছুই বোঝে না কিন্তু যে অল্প-বিস্তর মানুষ তার তো কিছুটা হলেও নিজেকে মাপার পারদ থাকা উচিত। পশুর মত রাগ থাকলে, গাধার মত স্বর থাকলে আর হায়েনার মত ক্রোধ থাকলে তার প্রশংসা করলে সত্যের অপলাপ করা হয়। মানুষ তো তার কথা ও আচরণের মাধ্যমেই মানুষের কাছে মানুষ হয়ে ওঠে।
আচ্ছা, মন ভালো আচরণ খারাপ কিংবা মন ভালো মুখ খারাপ- এটা হতে পারে? সাংঘর্ষিক না? যে রাগ কন্ট্রোল করতে পারে, যে সমাজের সব পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারে কিংবা সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে- ভালো মনের মানুষ তো তাঁর হওয়ার কথা! আপত্তিকর শব্দে গালিগালাজ করা, যার তার যখন তখন সাথে খারাপ ব্যবহার করা কিংবা যাকে তাকে ঠকানো এবং ঠেকানো- ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্যের সাথে যায় না। যার মন সুন্দর তার বাহ্যিক আচরণ-ব্যবহার, কথা-কাজ সুন্দর হতে বাধ্য। যে কথায় কারো জন্য বিষ বহন করে তা পরে মনের মধু ঢেলে ভুলিয়ে দেওয়া অসম্ভব। মানুষের কথা তো সেই তীর যা একবার বেরিয়ে গেলে ফিরিয়ে নেওয়া মুশকিল!
যদি বদলানোর মানসিকতা থাকে তবে একবারে আমূল পরিবর্তন আসবে না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বদল আনতে হবে। মানুষ আমাকে নিয়ে কি ভাবে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। নিজের আচরণের মূল্যায়ণ যদি নিজে করতে না পারি তবে জীবন দুঃখে দুঃখে যাবে। কথায় আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, আচরণে কষ্ট পাওয়া লোকেরা মুখ থেকে অভিশাপ না দিলেও মন থেকে দীর্ঘশ্বাস আপনা-আপনি যায়!
যদি অহেতুক ব্যথা দেওয়া হয় তবে সেটার খেসারত জীবদ্দশাতেই দিতে হবে। ক্ষমতার খাঁচা থেকে বের হতেই মুক্ত বিছানায় কাহিল কাটাতে হবে। ভালো মানুষের জীবন ঠেকে থাকে না। খারাপ মানুষের দুঃখ ফুরাতেও চায় না! ফেলে যাওয়া বীজ বৃক্ষ হয়ে ভবিষ্যতের পথে ছায়া-ফলে চলবে! সুতরাং যখন কথা বলবে তা যাতে বোধ-বিবেকের বাটখারাতে মাপা মাপা হয়!