ছোটকালে বৃষ্টির পর সূর্যের বিপরীত অবস্থানে সৃষ্টি হওয়া রঙধনুকে অপার বিস্ময়ে দেখতাম। এ নিয়ে মা চাচীদের বানানো গল্পটি কাঁচ কাটার হীরার ছুরির মতো কচি স্বচ্ছ হৃদয়েও আঁচড় দিয়ে যেত। সাতটি রঙের ঝকঝকে রঙধনুকে বলতেন বোনের বাড়ীতে ভাই যাওয়ার রাস্তা আর এর নিচে অস্পষ্ট রঙধনুর প্রতিবিম্বকে বলতেন বোন যাতে ভাইয়ের বাড়ীতে না যেতে পারে তার জন্য ভাঙাচোরা রাস্তা।
জীবন থেকে নেয়া এই গল্পটি রঙধনুর সাতটি রঙকেই গিলে নিতো। পড়ে থাকে অন্ধকার। উপরের ছবিতে যাকে দেখছেন তিনি পাঁচ ভাইয়ের এক বোন। এই বোনের জন্য ভাইয়েরা বাড়ির রাস্তাটি এতটাই ভাঙাচোরা ও কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছেন যে, স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানসহ বোনটির স্থান হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল সংলগ্ন মাঠে।নিজের ভবিষ্যত ছোট ছেলেকে ধূলোয় লুটায়ে পরের জন্য মালা গাঁথতে ব্যস্ত। তার পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটি সেই মালা জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকা সম-অসম জুটিগুলোর কাছে বিকোনোর চেষ্টা করছে।
দূর থেকে লক্ষ করলাম অনেকেই লাউ নিরামিষের মতো অনিচ্ছা সত্ত্বেও কথা গিলছে, তাদের কথার মেলায় ফুল ও ফুলের মতো মেয়েটি পাত্তাই পাচ্ছে না। আমি ছোট্ট মেয়েটিকে ইশারায় কাছে ডাকলাম। আমাকে সিঙ্গেল দেখে বিরস বদনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাছে আসলো। এসেই একটি মালা বাড়িয়ে দিয়ে বললো- মামা বিশ টেকা দেন, মামীর জন্য মালা নিয়ে যান। বললাম-এতো রাতে একলা একলা ফুল বেচতে তোমার ভয় করে না? মেয়েটি চেহারায় প্রশান্ত মহাসাগর সমান আস্থা ফুটিয়ে আঙুল দিয়ে মালা তৈরিতে ব্যস্ত মাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল- আমার মায়ে আছে না! মা পাশে থাকলে পৃথিবীর কোন ভয়ই ভয় নয়। কারণ সে বুঝে গেছে- মায়েরা সন্তানের জন্য জীবন দিয়ে হলেও তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
Even in the chaos of life, flowers find their way to bloom.
ড. আফসার সালাহ উদ্দিন
নবীনগর সরকারি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।