সমাজে দিন দিন বিষাক্ত চরিত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মোড়ল সাজতে পন্ডিত বা বুদ্ধিজীবী বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তেমনি সমাজে যুদ্ধনিরত বা ঠেঙ্গাঠেঙ্গি ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে দলাদলি হানাহানিগুলো মিমাংসা হতে দীর্ঘমেয়াদী সময় নিচ্ছে অথবা মিমাংসা হচ্ছে না।
একটি বিষয়ের উপর বিভিন্ন ধরনের যুক্তি শুরু হয়। যুক্তিগুলি পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যুক্তি শুনে মনে হয় সবার যুক্তি ঠিক। সুতরাং দল বিভক্ত হচ্ছে। কেউ এই দলে, আবার কেউ ঐ দলে। দল উপদলে যুক্তি প্রবাহিত হচ্ছে। যে যার যুক্তি গ্রহণ যোগ্য মনে করছে, সে পছন্দের দলে সমর্থন যোগাচ্ছে।
একটা ঘটনা আগে উল্লেখ করা প্রয়োজন নিঃসন্দেহে। যেহেতু আমি কেপটাউনে থাকি, সেহেতু এখানকার একটা ঘটনা বলি।
মাহফুজের কোনো টাকা পয়সা নেই তাই সে কেপটাউনে নিজ ব্যবসা করতে না পেরে চাকরি করে। সম্ভবত ২০১৪ সালে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাকে চাকরি থেকে নিজের কাছে নিয়ে যায় মনির। মনির একটা পার্টনারশিপ দোকান করে দিবে এই লোভে লোভাতুর হয়ে চাকরি ছেড়ে দিল মাহফুজ।
দোকানের লোভ দেখিয়ে বিনা বেতনে দীর্ঘ চারটি বছর রেখে দিল। আজ দেবে, কাল দেবে, এখন দেবে, তখন দেবে এই আশ্বাসে চারটি বছর চলে গেল মাহফুজের বিদেশ জীবন থেকে। মনিরের নিজের আয় থাকলেও, কোনো আয় ইনকাম ছিল না মাহফুজের।
এই চার বছর দেশে পরিবারের খরচ যোগাতে মাহফুজের নিঃসন্দেহে ধার দেনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সে এখানে দেনায় বিপর্যস্ত। যাই হোক, অনেক পরে হলেও মনির একদিন মাহফুজকে জানিয়ে দিল নিজে কিছু করার জন্য। চার বছর বেকার জীবন খেটে মনিরের কাছ থেকে সে চলে এলো নতুন চাকরি জীবনে।
খুব সংক্ষেপে একটা আশ্বস্ত আর একটা আশান্বিত জীবনের গল্প এটা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনটি বা চারটি দলের বিভক্ত হয়েছে। সবার যুক্তিই কিন্তু গ্রহণযোগ্য মনে হয়। যখন এই পক্ষের যুক্তি শুনি তখন মনে হয় এটা ঠিক।
একটি পক্ষ বলছে, মনিরকে এমন করা ঠিক হয়নি। মাহফুজের কিছু নেই, তাকে এমন ক্ষতি করা ঠিক হয়নি। একটা দুইটা মাস নয়, চারটি বছর এভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি। বিদেশী জীবন অনেক কষ্টের জীবন। টাকার জন্য পরিবার পরিজন ফেলে বিদেশ করা। এটা করা মনিরের কখনোই উচিত হয়নি।
দ্বিতীয় পক্ষ কি বলে এবার শুনি। তাদের যুক্তি দোষ মাহফুজের। সে কেন মনিরের পিছে গেল? বিনা বেতনে একজন এক মাস দুই মাস বা তিন মাস থাকতে পারে। তাই বলে কি চার বছর বসে থাকে কেউ? মাহফুজ ঠিক করেনি।
তৃতীয় আরেকটি পক্ষ আছে। তাদের তেজ অনেক। চল মনিরের ধরে নিয়ে আসি। সালিশি বৈঠকে বসে একটা মিমাংসা করি। মনির টাকা দিতে বাধ্য হবে। তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি মাহফুজ।
চতুর্থ আরো একটা পক্ষ আছে। খুব মজার পক্ষ। দুই কুলের নিন্দা নিয়ে থাকে। মনিরের সাথে আলাপ করলে মাহফুজের ঠেংগায়। আবার মাহফুজের কাছে গেলে মনিরের ঠেংগানি দেয়।
পক্ষ যে যার নিক, যুক্তি যে যার মতো দিক। বাঁশ যা যাবার তা কিন্তু মাহফুজের চলে গেছে। এতে অন্যদের কিছু যায় আসে না। এই ভাবে বিভিন্ন যুক্তি খাড়া করে একটা ঘটনার পিছনে কয়েকটি দল বা উপদলে বিভক্ত হয়ে গ্যানজাম পাকিয়ে রাখছে। এতে সমাজে দল বৃদ্ধি পাচ্ছে, গ্রুপিং মারাত্মক আকার ধারণা করছে, সমাজে মাতব্বর বা নেতার সংখ্যাও বেড়েই চলছে।
একদা এমন ছিল, এক মহল্লায় এক মাতব্বর ছিল। তার হুকুম মেনে চলতো পুরো সমাজ। তারপর কি হলো? এক মহল্লায় এ প্রান্তে এক মাতব্বর, ঐ প্রান্তে আরেকজন। ধিরে ধিরে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে মাতব্বর তৈরি হলো। পরে এসে পাড়ায় পাড়ায়, সেখান থেকে এখন ঘরে ঘরে মাতব্বর। সবারই মাতব্বর হওয়ার শখ।