প্রথম পাতা » জীবনযাপন » হজ্জ শুধু মুসলিম নয় সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষের জন্য সারা বিশ্বের এক মহা সম্মেলন

হজ্জ শুধু মুসলিম নয় সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষের জন্য সারা বিশ্বের এক মহা সম্মেলন

Hajj as a conference

মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা ও পালনকর্তা। তিনি সমুদয় বস্তুর মালিক ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের সব কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহতাআলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তারই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা হাশর, আয়াত ২২-২৪)

প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে  আরো বলেন,  ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন (আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা)।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৯)

ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবন আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নহে তাই তিনি বলেন, ‘কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ৮৫)

আমাদের সমাজে ইসলামের সুবিধাজনক অংশ অনুসরণ করার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায় যদিও ইসলামের কোন অংশবিশেষ নয় পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের অনুসারী হতে মহান আল্লাহ তাগিদ দিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত ২০৮)

আল্লাহতায়ালা মানব কল্যাণে ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ হিসেবে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ‘ইসলাম’কে নির্বাচন করেছেন। ইসলাম সকল প্রকার সমস্যা ও জটিলতামুক্ত এবং সহজতর একটি দ্বীন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ব্যাপারে সহজতা চান, জটিল বা কঠিনতা চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

আর তিনি দীন ইসলামকে পরিপূর্ণও করেছেন যার ঘোষণা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে রাসুল (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণে ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করলাম; আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে নির্বাচন করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৩)

ইসলামের পরিপূর্ণতার জন্য ৫টি রুকন বা ভিত্তি রয়েছে তার মধ্যে হজ্জ অন্যতম। 

হজ্জ আরবি শব্দ। এটির মূল অক্ষর ৩ টি যথা ح ج ج যেটির শাব্দিক অর্থ মিলন, সম্মেলন, সাক্ষাৎ ইত্যাদি।

আর পারিভাষিক সংজ্ঞায় মহান আল্লাহ নিজেই বলেন ‘আর আল্লাহর জন্য মানুষের উপর পবিত্র ঘরের হজ্জ করা (অবশ্য) কর্তব্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা অস্বীকার করে (তাহলে সে জেনে রাখুক) আল্লাহ্ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরওয়া করেন না’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৯৭)

অর্থাৎ যিনি হজ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়া থেকে শুরু করে জিলহজ মাসের ৮-৯ তারিখ পর্যন্ত হজ্জের নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত হজ্জের যাবতীয় খরচ এবং পরিবারের খরচ বহন করতে সামর্থবান তার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা হজ্জ ফরজ করেছেন এবং সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন না করলে সতর্কতাও জারি করেছেন।

হজের গুরুত্ব এত যে, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা হজ্জের মহাত্মা ঘোষণা করতে বিশ্বনবি এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু কে নির্দেশ দেন।

‘এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।’ (সূরা হজ্জঃ ৯৭)

কোন ঝগড়া বিবাদ বা গর্হিত কাজ নয় বরং হজ্জ একটি মহা সম্মেলনের স্থল।

 – ‘হজ্জ্বে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোন পাপ নেই।’ (সূরা আল বাক্বারাহ:197)

হজ্জ বা সম্মেলনের স্থান নির্দিষ্ট করে আল্লাহ বিভিন্ন আয়াত নাজিল করেছেন তার মধ্যে অন্যতম – ‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তাআলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।’ (সূরা আল বাক্বারাহ:158)

পৃথিবীতে ২০০ অধিক রাষ্ট্র রয়েছে। সব দেশেই প্রায় মুসলিম রয়েছে এবং সবদেশ থেকেই প্রায় মুসলিমরা হজ্জ পালন করতে পবিত্র মক্কা নগরীতে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়। আবার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও তাদের বিভিন্ন পন্য এবং সেবা সমূহ নিয়ে উপস্থিত হয় বানিজ্যিক উদ্দেশ্য 

– ‘তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ (বাণিজ্য) অন্বেষন করায় কোন পাপ নেই। অতঃপর যখন তওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশআরে-হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমনি করে, যেমন তোমাদিগকে হেদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।’ সূরা আল বাক্বারাহ:198 

মহান হজ্জ কে মহা সম্মেলন এবং নিরাপত্তা স্থল হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

 – ‘যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’ (সূরা আল বাক্বারাহ:125)

ইসলাম উদার ও মানবিকতাসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। কোনোরূপ সংকীর্ণতা বা বাড়াবাড়ির জায়গা ইসলামে নেই। মানব জাতির বৃহত্তর কল্যাণের নিমিত্তে ইসলামের আগমন। অন্ধকার ও জাহালত থেকে মুক্ত করে মানব জাতিকে সত্যের দিশা দিতে মহামহিম আল্লাহ ইসলামকে নির্বাচন করেছেন। আল্লাহ বলেন, তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা বা কঠোরতা চাপিয়ে দেননি।’ (সুরা হজ, আয়াত ৭৮)

ইসলাম সংকীর্ণতা নয় বরং সারজনীনতায় বিশ্বাসী। হজ্জ শুধু মুসলিমদের ইবাদত নয় সকল ধর্ম বর্ন নির্বিশেষের জন্য সারা বিশ্বের এক মহা সম্মেলন।

সুতরাং বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সকল ধরনের হানাহানি সংকট নিরসনে এই হজ্জ তথা বিশ্ব সম্মেলন রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

এমফিল গবেষক (এবিডি)
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মুহাম্মদ আল্-হেলাল
মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক (এবিডি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *