প্রথম পাতা » জীবনযাপন » আমরা সবাই শ্রমিক

আমরা সবাই শ্রমিক

May Day

শ্রম ও শ্রমিক: এই পৃথিবীর সবকিছুই শ্রমের বিনিময়ে পেতে হয়। শ্রম সাধারণত দু—প্রকার:
১. কায়িক বা শারিরীক শ্রম ২. মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম। এই দুই প্রকার শ্রমকে কেন্দ্র করেই চলছে পৃথিবী নামক শ্রমের চাকা। এরপর পেশাভিক্তিক শ্রম বহুদাবিভক্ত হয়ে জন্ম দিয়েছে নানান নামের নানা শ্রেনীর মানুষ। সে হিসেবে মানুষ মাত্রই শ্রমিক। রাজা—প্রজা যে যে অবস্থানে থেকে শারিরীক বা বৃদ্ধিবৃত্তিক শ্রমের বিনিময়ে জীবন পরিচালনা করছে সবাই তাহলে শ্রমিক। তবে প্রচলিত অর্থে আমরা শারিরীক বা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকেই শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করি।

শ্রমিকের মর্যাদা: শ্রমের হিসেবটা যেমনই হোকনা কেন, সকল শ্রমজীবি শ্রেণী ও পেশার মানুষের অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। মানুষের শ্রমের কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। আমরা জানি, পুঁজিপতি ছাড়া সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব, কিন্তু শ্রম ছাড়া দেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই ঘরে—বাইরে, অফিসে কিংবা কল—কারখা্নায় শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন এবং শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে। যে যে পেশারই হয়ে থাকিনা কেন, শ্রমের বিনিময়েই আমরা অর্থ উপার্জন করে জীবন চালাই। কেউ ব্যবসা করেন, কেউ অফিসিয়াল কাজ করেন, কেউ অফিস চালায়, কেউ সেবামুলক কাজ করে, কেউ রিক্সা চালায়, কেউ মাঠে কাজ করে, কেউবা কাজ করে হাটে—ঘাটে অথবা বাসা—বাড়ীতে। সবাই কিন্তু কাজ করছি। শ্রম, সময়, মেধা সবই দিচ্ছি। এখন সবার শ্রমের আর্থিক ও মানসিক মুল্যায়ন সঠিক হলেই সব মুখে ফুটবে হাসি। আত্মতৃপ্তি নিয়ে শ্রমজীবি মানুষেরা এগিয়ে নিবে দেশকে।

ঘর থেকেই শুরু হোক শ্রমের মর্যাদা: শ্রমে মুল্যায়ন বা শ্রমিকের মূল্যায়ন শুরু পারে ঘর থেকেই। এখন ঘরে ঘরে বাসা বাড়ীতে কাজ করে ছোট ছোট শিশু (ছেলে কিংবা মেয়)। কঠোর পরিশ্রমী কাজ করে তারা। আমরা বড়রা অনেক সময় যে কাজগুলো করতে পারি সে কাজগুলো সামান্য অলসতার জন্য ছোট্ট শিশুটির উপর চাপিয়ে না দিয়ে নিজেরা নিজেদের কিছু কাজ করে নিলে ছোট্ট শিশুটির কাজের বোঝা কমে। সেও একটু—আধটু বিনোদনের অথবা বিশ্রামের সুযোগ পায়।

সকল শ্রমিক পেশাজীবি; সকল পেশার মূল্যায়ন থাকা চাই: শ্রমিকের প্রতি আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন দরকার। বাসা—বাড়ীতে যে শিশুটি কাজ করে তাকে কাজের ছেলে বা কাজের মেয়ে না বলে তাদের গৃহশ্রমিক বলা যায়। অনেক সময় গৃহশ্রমিক শিশুটির পিতা—মাতার দেয়া নাম পরির্বন করে ব্যঙ্গাত্মক বা হাস্যকর নাম রাখা হয়। এটা ঠিক নয়। গৃহশ্রমিক শিশুটির প্রতি বাসার বাবা—মায়েরা যেরবকম আচরণ করে তাদের শিশু সন্তানটিও ঠিক তেমন আচরণ করতে শেখে। তাই গৃহশ্রমিকের সাথে আচরণবিধিতে সহনশীল ও মানবিক হওয়া দরকার। ধরা যাক একজন রিক্রা চালক, তাকে ছোট বড় সবাই বলে Ñ এই রিক্সা যাবে! এমন অসন্মানমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

আমরা কি ভাবি কখনো: প্রতিটি পেশাই সন্মানজনক। যদি মুচি না থাকে তাহলে আমাদের জুতা মেরামত বা কলি করে চকচকে করে দিবে কে? যদি রিক্সাচালক না থাকে তবে আমরা আরামে চলাচল করবো কিভাবে? কুলি না থাকলে আমাদের বোঝা কে টানবে? যদি গৃহশ্রমিক না থাকে তাহলে আমাদের নিত্যদিনের কাজগুলো কে করবে? তাহলে এবার একটা বিষয় বোঝা গেল সকল শ্রম পেশার জন্ম হয়েছে মানুষের প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই শ্রমজীবিরা না থাকলে আমরা চলতে পারবোনা। তারাও পারবেনা আমাদেরকে ছাড়া। এজন্য শ্রমিকের প্রতি অবহেলা, অসন্মান না করে সকল শ্রমের মূল্যায়ন করা হলেই একটি অগ্রগামী মানবীয় সমাজ ও দেশ গড়ে উঠবে। আর একাজটা আমরা সহজেই করতে পারি। এবং তা শুরু হোক ঘর থেকেই। সবার আগে বাসার গৃহশ্রমিকের ন্যায্য অধিকারটুকু আমরা নিশ্চিত করি।

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

S M Mukul
এস এম মুকুল
লেখক-কলামিস্ট, হাওর ও কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *