ভিডিওসিকিং ফেসবুক কি কয়েদখানা হয়ে গেল?
গরুর লেজের চুলের গোছা কোনো কারণে কাটা পড়লে বেজায় সুবিধা হয় মাছির। পাছায় লেগে থাকা গোবর একমনে খেয়ে গেলেও গরুর লেজের ঝাড়ি খাবার ভয় থাকে না। সেই থেকে প্রবাদ, ‘নাই তাই খাচ্ছ, থাকলে খেতে কী’?
দেশে এখন মেলামেশা, দল বাঁধা, রাজনীতি করা, মন খুলে কথা বলা বারণ। এমনকি চুলের ছাঁটের কারণেও বখাটে–ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে পুলিশ। তখন আর কী করবেন? ভয়ারিস্ট কামবাসনা মেটাতে নিত্যনতুন ভিডিও–ফাঁসের জন্য তক্কে তক্কে থাকুন। সেটা নিয়ে কে সেরা রগুড়ে পোস্ট দিল তার তালাশ করুন। পাকা আমের আঁটি চুষে–চেটে সাদা খটখটে করার কায়দায় ইস্যুটা থেকে যতভাবে যৌনধূলা ওড়ানো যায়, ততটা করুন। যেন জীবন এতই নিরানন্দ সবার।
জেলখানায় ছিলাম কিছুদিন। হাজারো অনিয়ম, চুন থেকে পান খসলে নির্যাতন, অখাদ্যভক্ষণসহ কত রকম অসুবিধা। কিন্তু সেসব নিয়ে কেউ কথা বলতো না। জানতো, লাভ নাই কোনো।
কথা হতো নারী নিয়ে, নায়িকা নিয়ে, দূরের কোনো বাড়ির ছাদে শুকাতে দেয়া মেয়েদের পোশাক নিয়ে, রেডিওতে শোনা কোনো গান নিয়ে। তারপর, রাতের বেলা ইলিশফাইলে শুয়ে কে কার পশ্চাত মারলো—পরের দিন সেসব নিয়ে।
এ ছাড়া আর কোনো বিনোদন ছিল না কারো। কেউ জেলপুলিশের মার খেলে কিংবা কাউকে টর্চার সেলে নিয়ে গেলে কার্যকারণটা শোনা হতো শুধু, কাজটা ঠিক না বেঠিক তা নিয়ে কোনো কথা হতো না। কোনো মজার প্রসঙ্গ এলে ওয়ার্ডের এ মাথা থেকে সে মাথা পর্যন্ত সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি চালাতো হাজতি পুরুষ প্রজাতি।
ফেসবুকের পুরুষ প্রজাতি ডিসি বেকুব না ইয়াকুব তা নিয়ে কথা বলে। প্রথম প্রশ্নটা এই, শুধু দুই দশটা ডিসি কেন হবে; ক্ষমতাবানরা অনেকেই যে যার যার আসন ও বিছানার চারপাশটাকে রোমান সম্রাট কালিগুলার বালাখানা বানিয়ে রেখে যা করে যাচ্ছেন, তার প্রতিকার কী? এভাবে ভিডিও ফাঁস কি আইনসঙ্গত?
মাদক ব্যবসা, রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক, ব্যবসায়িক লেনাদেনা, কর্পোরেট ব্যাটাগিরি; সবতাতেই নারী মাধ্যম ও শিকার। এইসব ভিক্টিমদের নিয়ে ফেসবুকের অধিকাংশদের আলোচনাও মারাত্মক সেক্সিস্ট। মিন্নি যে পরকীয়া নয় মূলত মাদক ব্যবসার ভিক্টিম, সেটা আমাদের সেক্সিস্ট পুংহৃদয় দেখতে পেল না। একটা নৃশংস খুনের রক্ত ঢেকে তাতে যৌনতার লালা মাখিয়ে যতদূর পারা যায় চাটাচাটি চললো।
কারাগারে এমন হয়। বাস্তব অবস্থা পাল্টানো অসম্ভব ভেবে তারা বিশ্বাস করে যা চলছে তা–ই চলবে। কোনো বিকল্প তো নাই! বিকল্প না–খোঁজার আলস্যের আষাঢ়–শ্রাবণে ভিডিও গীতগোবিন্দ উপভোগ করাই বন্দি মনের বিকল্প–বিকার। ছড়াটা মনে আছে তো,
‘মালয় দ্বীপে এক যে বোকা শেয়ালে
লাগলে খিদে মুরগী এঁকে দেয়ালে
আপন মনে চাটতে থাকে খেয়ালে’
এক মাছি নাকি ব্যাটাপুরুষকে হিজড়া বানায়, আমাদের চালাক শেয়ালগুলিকে বোকা বনলো কার খেয়ালে? কারাগারে এমন হয়।
পুনশ্চ: কামতাড়না খুব ভাল যদি না…
লেখকঃ ফারুক ওয়াসিফ। লেখক ও প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক।