প্রথম পাতা » মতামত » উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!

উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!

Camel

বাঙালি সম্পর্কে বলা হয়- এরা নিরীহ, এদের মন কোমলতায় আর্দ্র। এরচেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার আর নেই। একবার বিপদে পড়লে বুঝবেন বাঙালি কতোটা কোমল! বেপরোয়া উন্মাদনা এ জাতির মূলে আছে ক্রিয়াশীল। এদের ভালো করতে গেলে বিরাট ঝামেলায় পড়বেন। উপকার করতে গেলে অপমানিত হবেন। শাসন করতে গেলে শোষিত হবেন। উপদেশ দিলে অপদস্ত হবেন। ভুলেও বাঙালির ভালো করতে যাবেন না। জান নিয়ে ফেরত আসতে পারবেন না। কার ছেলেমেয়ে কী খেলো, কী করল, কোথায় গেলো, কার সাথে গেলো এসব বলতে যাবেন না। একান্ত খারাপ লাগলে দাঁতে দাঁত চেপে খিঁচ মেরে পড়ে থাকবেন। কিছু বলতে গেলেন তো মারা খাইলেন। আপনার জীবন সংশয় হবে। আপনি ভয়াবহ বিপদে পড়বেন।

ঢাকার নামিদামী এক কলেজের ঘটনা। কোনো এক শিক্ষক নতুন যোগদান করেছেন। সব কিছুতে তার কৌতূহল। ঘুরে ঘুরে সব দেখছেন। কলেজটি দুই শিফটে চলে। মর্নিং শিফট ছুটির পর আধা ঘণ্টার মতো গ্যাপ থাকে। এই ফাঁকে দুই কপোত কপোতী ঠোঁটাভিসারে ব্যস্ত। তাদের হস্তচতুষ্টয় দিগ্বিদিক হাতড়ে বেড়াচ্ছে গহীনে। যুবক শিক্ষক ঘটনাটি দেখে প্রশাসনকে অবহিত করলেন। তাদের ধরে আনা হলো। জানা গেলো মেয়েটি উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার আদুরে কন্যা। ছেলেটি বাবা মায়ের আদরের একমাত্র শয়তান, সরি সন্তান। এদের বিচার করলে সমূহ বিপদ। কিন্তু বিচারতো একটা করতে হবে। কার বিচার হওয়া উচিত? সবাই সাব্যস্ত করল শিক্ষক হারামজাদার বিচার হওয়া উচিত। কাজকাম বাদ দিয়ে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরির অপরাধে তার একমাসের বেতন বন্ধ হলো। সাথে অপমানতো ফ্রি। মানীর মান পাহাড় সমান। এক দুই কোদাল গেলেই ক্ষতি কী? বেচারা শিক্ষক জীবনের তরে টাইট হলো। কোনো কাজ না থাকলে রিডিং রুমে বসে পড়াশোনা করতে লাগল। তার জীবন থেকে দেখার কৌতূহল চিরতরে বিদায় নিল।

আপনারা অতি দরিদ্র সালামতের গল্প জানেন তো! আমির সাবের পীড়াপিড়িতে একবার সালামত তিনদিনের তাবলিগে গেলো। আমির সাব বয়ান করছেন। মাঝে মধ্যে উটকো গন্ধ ছড়াচ্ছে। সবার দৃষ্টি সালামতের দিকে। সালামত কাজটি করেনি। কিন্তু সবার কড়া নজরের কারণে সালামত ওজু করে আসল। এমন আরো দুইবার হলো। সালামত এর কারণ না হলেও ওজু করার জন্য তাকেই যেতে হচ্ছে বারবার। কিছুক্ষণ পর আমির সাব সশব্দে কাণ্ডটি ঘটালেন। সবাই মাথা নিচু করে আছে। আমির সাব কয়েকবার কাশার চেষ্টা করেও গন্ধ আটকাতে পারলেন না। আমির সাব কিন্তু ওজু করতে গেলো না। কিছুক্ষণ পর সালামত উঠল। ওজু করার জন্য যাচ্ছে সে। একজন বলল, তুমি কেন? আমির সাব যাক। সালামত বলল, শব্দ যে-ই করুক ওজু সালামতেরই করন লাগব। এ জাতির ওজু করার ভার শিক্ষকদের!

দেশের সকল মারী ও মড়কের বিষ আগে গ্রাস করে এদেশের শিক্ষকদের। যদিও দেশের সবাই ‘স্যার’ কেবল এদেশের শিক্ষকরা ‘মাস্টর’!

জানাজার নামাজে একজন প্রধান শিক্ষককে গণপিটুনি দেওয়া হলো! জানাজা করতে এসে এরা কী শিখল? এদের এতো উন্মাদনা কেন? একটা মেয়ে বিড়ি খেলে তাকে শাসন করা যাবে না? আর এজন্য একটা মেয়ে আত্মহত্যা করবে? পারিবারিক অনুশাসন, ধর্মীয় বিবেক তাহলে কোথায়? এ কথার পর একদল ছাগল আবার ম্যাঁ ম্যাঁ করে বলবে মাদ্রাসায় দিলে এমন হতো না! ওরে বাটপার, মাদ্রাসায় তো সাতবছর বয়সী ছাত্রী ধর্ষিত হলো! তারপর তাকে মেরে ফেলে বলা হলো সে জান্নাতবাসী! ছোট ছোট ছেলেরা নিয়মিত বলাৎকার হচ্ছে না সেখানে? যারা লাখ লাখ মানুষের সামনে মিথ্যাচার করে, আবার জাতির কাছে ক্ষমা চায় তাদের কী আদর্শ থাকতে পারে? মিথ্যাবাদী কোথাকার?

আসলে কোনো শিক্ষাই আমাদের কাজে লাগছে না। এতো সুন্দর ধর্মের আলোও আমাদের আলোকিত করতে পারছে না। সমাজ, ধর্ম, বিবেক সবই আজ পরাহত। আমরা সীমাহীন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি। মুক্তির উপায় কী?

ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা থেকে দূরে। কৃষ্টিকালচার থেকে দূরে সরে গেছে। কোনো স্বকীয়তা নেই। কোনো ধরনের বই তারা পড়ছে না। ফেসবুক, মোবাইল পুরো জাতিকে ধ্বংস না করে ছাড়বে না। উন্মাদ জাতিকে থামাবে কে?

যতদিন চাকরি আছে সেটাই করি। আগ বাড়িয়ে কিছু বলা, করার দরকার নেই। এ জাতি শিক্ষক চায় না। পুরো জাতিই যখন ‘স্যার’ সেজে বসে আছে সেখানে আপনি কাকে পড়াবেন? মানুষ করবেন কাকে?

যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক-ধর্মীয়-জীবিকার তাগিদে দেশান্তরে থাকা বাঙালির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। তাহলে এদেশে থাকবে কারা? আমাদের মতো ছা-পোষা কলমপেশার সৈনিকরা থেকে যাব। কামলারা থাকবে, নিম্নবিত্ত, করুণ কেরানি, দুর্বলরা থেকে যাবে। এরা ঢালহীন, তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। এদের বাপ মরে আন্ধারে, পোলার নাম বিদ্যুৎ! এরা আধা নটি, আধা গৃহস্থ। এদের না আছে পরকাল, না আছে ইহকাল। দুই জাহানের কাঙালরাই শুধু শেষ পর্যন্ত বাংলার মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *