বৃহস্পতিবার আসলে মনটা এমনিতেই ফুরফুরা লাগে। চারদিকে খালি ওয়াও দেখি। শুক্রবারে কোনো কাজ রাখি না। সারা সপ্তাহর সব কাম বৃহস্পতিবার রাতেই শেষ হয়। শুক্রবারে আরামের ঘুম। এখন শাওন মাস। সরি, শ্রাবণ মাস। এই মাসের নামের এই এক তেলেসমাতি। এক নামে নারী-পুরুষ দু-ই আছে। শুক্রবারের সকালটা বৃষ্টিমুখর হলে ভালো হতো। রাতের আকাশে তারা ফুটেছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। মাঠ ফেটে চৌচির। পানি নাই। আর আট দশদিন বৃষ্টি না হলে কৃষকের এবার পোয়া বারো। আর ক্ষেতে নামার দরকার নাই। বছর শেষে সব হবে আম আম। ধানের মণ হবে দুই হাজার!
এই পৃথিবীতে কানাডা নামে এক দেশ আছে। ছোটবেলায় স্কুলে কানাডা নিয়ে কৌতুক শুনেছি। জাস্টিন ট্রুডো নামের এক অতি রূপবান পুরুষ এই দেশের প্রধানমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কানাডার ভিসা চেয়ে হতাশ হয়েছেন। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কেল্লা ফতে। দোয়ার এ্যাকশান এতো তাড়াতাড়ি হবে বুঝতে পারিনি। ভিসি স্যারের মুখের জোর মাশাল্লাহ। নিন্দুকেরা বলছে ভিসি স্যারকে ভিসা না দেওয়ায় ট্রুডোর কপালে উলু লাগছে। যুক্তিবিদ্যা কী বলে জানি না। তবে আমার কাছে বিষয়টা নেহায়েত কাকতালীয় মনে হয়নি। গরিবের আর কিছু না থাক, বদদোয়া থেকে ধনির রেহাই নেই। গরিবেরা ছাড় দেয়, ছেড়ে দেয় না।
ট্রুডোর প্রতি বাঙালির প্রেম আকাশসমান। তারা মনে মনে এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক কামনা করে। জেলা সদর হাসপাতালে গেলে বুঝতে পারবেন এদেশের মানুষের রুচি কতো উচ্চমার্গীয়। রাস্তায়, ঘাটে, বাজারে, দপ্তরে সব জায়গায় বাঙালির আচরণ কতটা জাস্টিনিয় তা দেখলে আপনার মনে হবে এরা আসলেই কপালপোড়া। এরা ট্রুডোর মতো নেতাই ডিজার্ভ করে। দেশে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ বলেই ট্রুডো আজ নির্বাসিত। তবে তিনি আসবেন, বীরের বেশে, হেসে হেসে, কিঞ্চিত কেশে।
রাতে বিসিএসের রেজাল্ট হলো। তার একদিন আগেই সোফি সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রুডোর সাথে আর থাকবেন না। ভাই, আমরা বাঙালি। আমরা সাগু খাই না। আপনারা কি বলতে চান পিএসসির রেজাল্টের খবর সোফি জানতেন না! এটা নিছক কাকতালীয়! আপনি ভাবলে আমার কিছু করার নেই। তবে সোফি যে গভীর জলের মাছ তা বুঝার বাকি নেই। একজন ইয়াং বিসিএস ক্যাডারকে পাওয়ার জন্যই কি তিনি এই কাজ করলেন? ডিবি প্রধান হয়তো বলতে পারবেন আসল ঘটনা। আমি জানি না। আন্তর্জাতিক বিষয়ে নুরুকে প্রশ্ন করলেও উত্তর পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তিনি এখন গণতন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাকে এখন মাইর খেতে হচ্ছে প্রচুর। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হতে হলে এদেশে মাইর খেতে হয় বেশুমার! তার জীবন এখন মাইরময়। নুরুকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটি অতি নিষ্ঠার সাথে পালন করছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি। তাদেরকে তাকসিমি অভিনন্দন।
ও!! আসল খবরই তো বলি নাই! জনাব তাকসিম এ খান সকলের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবারো ওয়াসার এমডি পদে নিযুক্ত হয়েছেন। বরাবরের মতোই আমেরিকা থেকেই তিনি ঢাকাবাসীকে জলের ব্যবস্থা করবেন। এদেশে তাঁর বিকল্প আর কেউ হতে পারেনি এটি নিঃসন্দেহে খান বাহাদুরীয় ক্রেডিট। স্যারকে জানাই টুপিখোলা সেলাম। ও বাবু সেলাম বারে বার…!
কী হয়েছিল ট্রুডো আর সোফির সংসারে? হয়তো কিছুই না। টিভির রিমোট নিয়েও কাইজ্জা হতে পারে। দুজন ঝগড়ার পর বুঝলেন কারো প্রতি কেউ শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন না। ব্যস, সিদ্ধান্ত পাকা। এখন শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য ছাড়াছাড়ি! সব জায়গায় রাজা সাজতে নেই ভাই। রাজ্য চালানো আর সংসার চালানো এক জিনিস না! সংসারে মাঝে মধ্যে প্রজা, মাঝে মধ্যে বোদাই সাজতে হয়! সংসার সুখের হয় বোকাসোদার গুণে!
তাদের নাকি প্রেমের বিয়ে! হতে পারে সোফির বয়স হয়ে গেছে। ট্রুডো ব্রোর চাই সুইট সিক্সটিন! ট্রুডো ভাইকে আব্বাসীয় শুভেচ্ছা। তিনি যদি আব্বাসীর ওয়াজটা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন তবে বুঝতে পারতেন জীবন খুব সহজ! এক দুই তিন চার! সাতদিন করে চার ঘরে আটাশদিন! বেচারা আলমগীর সাব কী সুন্দর ভাবেই না চার সতীনকে টেকেল দিয়েছিলেন। আমার এক বন্ধুর কাছে কালিজিরা, খাঁটিমধুর সন্ধান আছে। প্রিপেইডে অনলাইন ডেলিভারি। বিফলে মূল্য ফেরত!!
বাঙালিরা অবশ্য সাপোর্ট করছে ট্রুডোকে। সোফির দোষই বেশি। এটা নিজেদের টাইমলাইনে তারা লিখছে। কিন্তু বিষ্যুদবার রাতের কেস অন্য। ধরেন, ভাইয়ের নাম জাস্টিন না জাকির। ভাবির নাম সোফি না, সোফিয়া। তাহলে ইনবক্সগুলো চেক করলে পাবেন বাঙালি পুরুষের অসহায়ত্ব, দুর্দশার ভয়াবহ চিত্র। এরা প্রত্যেকেই ভীষণ একা। জীবনে একটি বিয়ে তারা করেছে তা-ও ভুলে। দুই একটা বাচ্চা হয়েছে কোম্পানিগুলোর হেঁয়ালিতে, অথবা বড় রকমের ভুল বুঝাবুঝির কারণে। এরা বৌয়ের জ্বালায় অতীষ্ঠ। বৌয়ের কাছে মায়ের আদর না পাওয়া এতিম যুবকেরা সোফিয়ার দুঃখে আজ রাতে বালিশ ভিজাবে নয়নের জলে-
ইনবক্সের নমুনা:
-ভাবি, আপনার জন্য খুব খারাপ লাগছে। হীরার মূল্য সে দিতে পারেনি। তবে ভাবি আপনি জিতবেন, অবশ্যই ভালো কিছু হবে।
– এগুলো বইলেন না ভাই। মনটা খুব খারাপ!
– ভাবি, আপনি কার জন্য মন খারাপ করবেন? যে একটা ফুলকে ছুঁড়ে ফেলে দিল তার জন্য ? ভাবি, আপনার সাথে এগুলো যায়? চোখ মুছে ফেলেন ভাবি। আপনাকে হাগতে হবে।
* সরি। কারেকশন : হাসতে
– ভাই, এখন রাখি। ঘুমাবো। ঘুমের ওষুধ খাব
– ভাবি, প্লিজ। আমি ফোন দেই? অডিও?
– না না থাক
– ভাবি, এ কাজটা করবেন না। আপনাকে বাঁচতে হবে। আপনি কার জন্য নিজেকে শেষ করবেন? বলেন। আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হবে। আমি আজ একটি কবিতা লিখেছি বলব ভাবি? আপনার মন ভালো হবে
– না, আরেকদিন
– আজই প্রথম লিখেছি এমন না। আপনাকে নিয়ে লেখা এটা আমার ১২২ নম্বর কবিতা। একদিন যদি সুযোগ দেন, আপনার চরণে একটু অর্ঘ্য বিরচন করব। দিবেন?
– আমার আর কী আছে? বলেন
– ভাবি, আপনি যে কী নিজেই জানেন না। আপনার জন্য একটা দুইটা জন্ম নিঃশেষ করে দেয়া যায়। ট্রাস্ট মি, বিলিভ মি
– হুম! দেখলাম তো! জীবন! নিঃশেষ!!!
– ভাবি, সবাইকে এক পাল্লায় মাপবেন না। একবার সুযোগ দিয়ে দেখেন। ‘গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়!’
– এখন রাখি। ঘুমাবো। ভালো লাগছে না।
– ভাবি, কী খাইছেন? যা গরম!! ইজি কিছু পরে শুয়ে থাকেন। কী পরছেন ভাবি? শাড়ি? শাড়িতে যা লাগে আপনাকে
– শাড়ি না
– তাইলে? বলা যাবে? না বলতে চাইলে থাক। আমি মেয়েদের বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করিনা। এটা আমার পছন্দ না। তবে গরমে নাইটি ভালো। তাই না ভাবি? পাতলা টাতলা আছে
– ভাবি?
– ভাবি??
– কী হলো???
-???????????
-আপনাকে খুব দেখতে মন চাইছে। একটা পিক হবে? নরমাল????
উইকেন্ড রাতে ভাবির কোনো সাড়া না পেয়ে অন্য ভাবিদের কে কে জেগে আছে তা-ই দেখে বেড়ায় বাংলার এতিম দেবরেরা!!!