প্রথম পাতা » অন্যান্য » জলমহাল কি?

জলমহাল কি?

Jalmahal

আগে সহজ করে বলি। বিল, হাওর, বাঁওড়, নিম্ন জলাভূমি ও নদ-নদীর মৎস্য আহরণের এলাকাকে জলমহাল বলা হয়।

এবার চলুন জেনে নেই বিস্তারিত। জল ও মহাল – এই শব্দ দুটি মিলে তৈরি হয়েছে জলমহাল শব্দটি। জল মানে পানি, এটা আমাদের সবার জানা। মহাল শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে। এর অর্থ জমিদারির অংশ, তালুক, ভূসম্পত্তি, সম্পত্তি প্রভৃতি। সুতরাং, জলমহাল শব্দটির অর্থ আমরা পাচ্ছি- জমিদারের অধিকারভূক্ত জলমগ্ন সম্পত্তি।

জলমহাল প্রধানত দুই প্রকার। যথা:

  1. বদ্ধ জলমহাল এবং
  2. উন্মুক্ত জলমহাল।

বদ্ধ জলমহাল

বদ্ধ জলমহাল বলতে ওই সব জলমহাল যার চারদিক স্থল ভাগ দ্বারা বেষ্টিত। সাধারণত হাওর, বিল, ঝিল, হ্রদ, দীঘি, পুকুর, ডোবা ইত্যাদি বদ্ধ জলমহাল। এ ধরনের জলমহালে সবসময় মাছ ধরা যায় না। কখন মাছ ধরা যাবে তা আইন দ্বারা নির্ধারিত থাকে।

উন্মুক্ত জলমহাল

যে সকল জলমহাল স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত নয় এবং মৎস্য শিকার এর জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট থাকে না বা সারাবছর মৎস্য শিকার করা যায় তাকে উন্মুক্ত জলমহাল বলে। যেমন: খাল, নদী, প্রবহমান স্রোতধারা ইত্যাদি উন্মুক্ত জলমহাল

সরকারি হিসাবে দেশে বিভিন্ন আকারের জলমহালের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৪৪টি।

ইজারা

এসব জলমহালের ইজারার ক্ষেত্রে স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। আবার জলমহাল ইজারা পদ্ধতি প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় রাজস্ববঞ্চিত হয় সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে জলমহালের ইজারা পেতে অনলাইনে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সাধারণত ২০ একরের ঊর্ধ্বে সরকারি জলমহাল ইজারার অনুমোদন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দেয়া হয়ে থাকে। জলমহাল থেকে গত পাঁচ অর্থবছরে প্রায় ৪৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে মন্ত্রণালয়।

প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশবৃদ্ধি এবং মা মাছ সংরক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় জলমহাল অভয়াশ্রম ঘোষণা এবং নির্বাহী আদেশে ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করায় বেশকিছু জলমহাল ইজারাবিহীন রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জলমহাল ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান যেমন দিনাজপুরের রামসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরাসাগর। মাছের অভয়াশ্রম ঘোষিত জলমহালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর।

যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩০/৯/৯৭ খ্রিঃ তারিখে মাননীয় ভূমি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে ২০ একর পর্যন্ত বদ্ধ জলমহাল বা জলাশয়ের ব্যবস্থাপনা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করা হয়।

মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেকার যুব ও যুব মহিলাদের নিকট এগুলোর ইজারা কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

অধিকার

মত্‍স্য চাষের জন্য ২০ একর পর্যন্ত বদ্ধ জলমাহল ইজারা (লীজ) পাবার অধিকার।

মত্‍স্য চাষের জন্য যুব সমাজের সবার আগে সুযোগ পাবার অধিকার।

ইজারার সুযোগ গ্রহণের জন্য সময় পাবার অধিকার।

লঙ্ঘন

যুব সমাজ অথবা মত্‍স্যজীবিকে লীজ প্রদান না করা৷

ইজারার সুযোগ গ্রহণের জন্য সময় না পাওয়া৷ ইজারা সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করার পরও ইজারা (লীজ) প্রদান না করা৷

উপজেলা জলমহাল কমিটির গঠন

স্থানীয় সরকার বিভাগের নিকট ইতোপূর্বে ন্যস্তকৃত ২০ একর পর্যন্ত আয়তনের জলাশয় পর্যায়ক্রমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ন্যস্ত করার বিধান করা হয়েছে যা প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। সরকার ২০ একর পর্যন্ত বদ্ধ জলাশয় মত্‍‌স্য চাষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুব ও যুব মহিলাদের মধ্যে ইজারা প্রদান, ইজারা গ্রহীতাদের কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান তথা সার্বিক তত্ত্বাবধানের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় (সিটি কর্পোরেশন-এর ভৌগোলিক সীমার বাইরে) একটি করে কমিটি গঠন করেছে। কমিটির গঠন নিম্নরূপ:

১) উপজেলা নির্বাহী অফিসার …………………………. আহ্ববায়ক

২) সহকারী কমিশনার (ভূমি) …………………………. সদস্য

৩) উপজেলা মত্‍স্য কর্মকর্তা …………………………. সদস্য

৪) উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ………………………… সদস্য

৫)একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী……………………… সদস্য (যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত)

৬) উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা …………………….. সদস্য সচিব

অনুরূপভাবে সিটি কর্পোরেশনের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে অবস্থিত ২০ একর পর্যন্ত খাস বদ্ধ জলাশয়সমূহ ইজারা ও ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে আহ্বায়ক এবং জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যের আরেকটি কমিটি রয়েছে।

(ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৫/১০/৯৭ খ্রিঃ তারিখের ভূঃমঃ/শা-৭ বিবিধ/৪৭/৯৭ (অংশ)/ ৫৭৬ নং পরিপত্র মতে)

ইজারা নীতিমালার সার সংক্ষেপ:

প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিই ইজারার মূল লক্ষ্য। তাই অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এগুলো ইজারা দেয়া যাবে না।

ইজারা গ্রহণে আগ্রহী যুব ও যুব মহিলাদের অবশ্যই মত্‍স্য চাষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হবে।

জলাশয়সমূহের ইজারা নিবন্ধনকৃত যুব ও যুব মহিলা সমবায় সমিতির মধ্যেই সীমিত থাকতে হবে।

২০ একর পর্যন্ত খাস বদ্ধ জলাশয় এ নীতিমালার আওতাভুক্ত থাকবে।

প্রাথমিক ও পরীক্ষামূলকভাবে জলাশয় সমূহ ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদের জন্য ইজারা দেয়া যাবে

ইজারা দরপত্রে অংশগ্রহণকারী নিবন্ধণকৃত যুব ও যুব মহিলা সমবায় সমিতির মধ্যে সর্ব্বোচ্চ দরদাতা ইজারা পাবে;

কমিটি কর্তৃক কোন জলাশয় ও ইজারাদানের লক্ষ্যে ১লা মাঘের পূর্বে কার্যক্রম শুরু করে ৩০ শে ফাল্গুনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে;

ইজারা লব্ধ অর্থের নুন্যতম অংশ নিলাম প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য খরচ করা যাবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অবশিষ্ট ইজারা মূল্যের ১% অর্থ ভূমি রাজস্ব খাতে জমা করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে এবং বাকি অংশ (ইজারা মূল্যের) স্থানীয় সরকার বিভাগকে প্রদান করতে হবে। (ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৫/১০/৯৭ খ্রিঃ তারিখের ভূঃমঃ/শা-৭ বিবিধ/৪৭/৯৭ (অংশ)/ ৫৭৬ নং পরিপত্র মতে )

এ নীতিমালার বহির্ভূত থাকবে:

  • আদর্শ গ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকাভুক্ত জলাশয়
  • অর্পিত/পরিত্যক্ত সম্পত্তিভুক্ত জলাশয়
  • ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং জেলা প্রশাসক এর কাযালয় সংলগ্ন সরকারী খাস জলাশয়
  • সর্বসাধারণের ব্যবহার্য (পাবলিক ইজমেন্ট সংশ্লিষ্ট) জলাশয়

ইজারা নীতিমালার সার-সংক্ষেপ (২০ একরের বেশী আয়তনের জলমহাল):

২০ একরের ঊর্দ্ধ আয়তনের বদ্ধ জলমহাল সাধারণত ৩ বৎসর মেয়াদে এবং উন্মুক্ত জলমহাল ১ বৎসর মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়।

ইজারার জন্য সীল্ড টেন্ডার নির্ধারিত ফরমে আহ্বান করা হয়। টেন্ডার নোটিশ একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় সংবাদ পত্রে প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা বির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে, ইউনিয়ন পরিষদ সহ সংশ্লিষ্ট অফিসে নোটিস টাঙিয়ে প্রচার করা হয়।

টেন্ডার ফরম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে ক্রয় করা যায় এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে একই দিন ও সময়ে জমা দিতে হয়।

মত্‍স্যজীবি সমবায় সমিতির জন্য টেন্ডার প্রথমে সীমিত রাখা হয় এবং সর্বোচ্চ ডাককারীর নিকট ইজারা দেয়া হয়। তবে এ ডাক পূর্ববর্তী বছরের ডাকের ২৫% বেশি না হলে নতুনভাবে টেন্ডারের ব্যবস্থা করতে হয় এবং এ নতুন ডাকে যে কেউ অংশ নিতে পারে।

কিন্তু উন্মুক্ত ডাকেও যদি ডাকমূল্য পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২৫% বেশী না হয় সে ক্ষেত্রে ৩ এর অধিক বার টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি জারী করতে হবে। চতুর্থবার টেন্ডারের ক্ষেত্রে ২৫% বেশী মূল্যের বিষয়টি আর বলবত্‍ থাকবে না।
(যোগ সূত্র-নঃ-ভূঃ মঃ/ শা-৯-১৮/৯৪/৬১৫ তারিখ ২৮/৯/৯৪ খ্রিঃ) মতে)

ইজারার সাকুল্যে অর্থ চুক্তির শর্ত মোতাবেক পরিশোধে ব্যর্থ হলে ইজরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। (সাধারণতঃ প্রতি বছরের মেয়াদ আরম্ভের ১ মাস পূর্বে সে বছরের টাকা পরিশোধ করতে হবে)।

টেন্ডার কমিটির সুপারিশে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যের জলমহালের বন্দোবস্ত ভূমি সংস্কার বোর্ড অনুমোদন দিয়ে থাকে। টেন্ডার বা ইজারার বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ থাকলে ইজারা ডাকের ১০ দিনের মধ্যে টেন্ডার অনুমোদন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন পেশ করা যাবে। টেন্ডার অনুমোদন কর্তৃপক্ষের আদেশে সংক্ষুদ্ধ পক্ষ আদেশের ১ মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আপিল পেশ করতে পারবেন।

লীজ গ্রহণের পর তা সাবলীজ দেয়া যাবে না। এরূপ সাবলীজ দেয়া হলে লীজ গ্রহীতার লীজ স্বয়ংক্রীয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন ক্রমে প্রতি বছর ১লা মাঘ এর পূর্বে/মধ্যেই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি জারির বিধান রয়েছে।

কোনো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকেল্পর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ছকে আবেদন করা হলে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে উণ্মুক্ত জলমহাল ১ বছরের এবং বদ্ধ জলমহাল ৩ বছরের জন্য প্রকৃত মত্‍স্যজীবি সমবায় সমিতিকে আলোচনা সাপেক্ষে পূর্ববর্তী বছরের ২৫% বেশি মূল্যে ইজারা দেয়ার বিধান রযেছে।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্তে ৪-১০ বছরের জন্য ২০ একর ঊর্দ্ধ আয়তনের জলমহাল মত্‍স্যজীবী সমবায় সমিতির মধ্যে ইজারা দেয়া যাবে।

জেলা টেন্ডার কমিটির গঠন:

ক) জেলা প্রশাসক……………………………… চেয়ারম্যান

খ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)………….. সদস্য

গ) জেলা মত্‍স্য অফিসার……………………… সদস্য

ঘ) জেলা সমবায় অফিসার…………………….. সদস্য

ঙ) রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর…………………… সদস্য সচিব

আন্তঃজেলা জলমহালের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার এ কমিটি গঠন করে থাকেন, কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে।

(ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১২/ঌ/ঌ১ ইং তারিখের ভূঃমঃ/৭/বিবিধ/৫/ঌঌ/৪২৪ নং স্মারকাদেশ মতে)

তথ্য সূত্র: ভূমি আইন প্রয়োগ ও পদ্ধতি লেখক- মো: আব্দুল হান্নান

অন্যান্য থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মোরশেদ আলম
পেশায় একজন শিক্ষক, শখের ভ্রমণকারী এবং অবসরে একজন নেটিজেন।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *