প্রথম পাতা » গল্প » সতেরো বছর পরে

সতেরো বছর পরে

একটা কাজে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অফিসে গিয়েছিলাম, ভাবলাম নিজের কলেজের আনাচে কানাচে একটু ঘুরে যাই। ঘুরতে ঘুরতে প্রায় ১৭ বছর আগের নানান স্মৃতি মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠতে থাকল। কলাবাগান থেকে রিক্সায় করে নামলাম আনন্দ সিনেমা হলের সামনে। রিক্সা এর চেয়ে বেশি যায় না। ঢাকায় আসার পর ২০০৬ সালের দিকে হলে গিয়ে প্রথম সিনেমা দেখি বলাকা সিনেমা হলে। হুমায়ুন আহমেদের “নয় নম্বর বিপদ সংকেত”। আনন্দ সিনেমা হলেও একবার দেখেছিলাম, সিনেমার নাম পরিচয় এত বছর পর আর মনে নাই। বর্তমানে আনন্দ সিনেমা হলের মাথা “দিন দ্যা ডে” এর পোস্টার দিয়ে ঢাকা। রিক্সা থেকে নেমে ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ালাম সেজান পয়েন্টের সামনে। কলেজে পড়াকালীন সময়ে একটু সময় পেলেই এই সেজান পয়েন্টেই একটু আধটু ঘুরাফেরা করার জন্য যেতাম, আর যেতাম বাটনওয়ালা মোবাইল ফোন নষ্ট হলে সার্ভিসিং করানোর জন্য। সেজান পয়েন্ট তখন ছিল ফার্মগেটের একমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমল। বিনামূল্যে এসির বাতাস খাওয়ার জন্যও মাঝেমাঝে চলে যেতাম আমরা।

ফার্মগেটের আইকনিক ফুটওভার ব্রিজ এখন আর নাই। থাকলে সেটা দিয়ে পাড় হয়ে ঐপাশে যেতাম। এখন সেখানে লম্বালম্বা পা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেট্রো রেলের লাইন। আমি রেললাইনের নিচ দিয়ে পাড় হয়ে ঐপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আল রাজী হসপিটাল আগে যেখানে ছিল তার সামনে গিয়ে। আল রাজী হাসপাতালের জায়গাটা বর্তমানে খালি, নানারকম আগাছা আর কলাগাছে ভর্তি। পাশের বড় বিল্ডিং এর উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে আল রাজী হাসপাতালের সাইনবোর্ড ঝুলছে। এই বিল্ডিংকে আমরা চিনতাম ওমেকা কোচিং সেন্টারের দালান হিসেবে। এটার নিচ তলায় একটা সাইবার ক্যাফে ছিল, ঢাকায় তখন ইন্টারনেট ব্যবহারের অন্যতম উপায় ছিল এই সাইবার ক্যাফেগুলো। রাজধানীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এসব ক্যাফেগুলো। আমি আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর বুয়েটের ফলাফল দেখেছিলাম এরকম এক সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে। কিন্তু ফার্মগেটের ফুটপাতের সিডি আর ডিভিডির দোকানের মতোই এসব সাইবার ক্যাফেও এখন আর নাই। সিডি ডিভিডির দোকানের জায়গায় এখন মোবাইল ফোনের ব্যাক কাভারের দোকান। কলেজে যখন পড়ি, আমি ছুটিতে পাকুটিয়া যাওয়ার সময় অনেকগুলো ইংরেজি মুভির ডিভিডি কিনে নিয়ে যেতাম, চল্লিশ টাকা করে প্রতিটা। দামাদামি ঠিকঠাকভাবে করতে পারলে আর বেশি করে কিনলে আরও কমেও পাওয়া যেত। এসব পাইরেটেড মাল।

আরেকটা ব্যাপার চোখে পড়ল, সেজান পয়েন্টের সামনে ইস্পাহানী চক্ষু হাসপাতালের পাশে যে পার্কটি ছিল তা আর নাই। এই পার্কের একটা নাম ছিল এখন মনে পড়ছে না। সেখানে দেখলাম একটা ফ্যাকাশে লাল ইটের দালান আর মেট্রো রেলের লাইন দেখে মনে হলো এর পাশেই একটা স্টেশন হবে। দাঁড়িয়ে থেকে মাথা এদিকে সেদিকে উপরে নিচে ঘুরিয়ে আশপাশটা দেখে হাঁটা ধরলাম। তেঁজকুনি পাড়া যাওয়ার রিক্সার স্ট্যান্ডে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম, সাথে ছাতা ছিল বলে রক্ষা, তাই এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে এসব পাগলামি করতে পারলাম। চান্দিফাটা রোদ যাকে বলে, মাঝেমাঝে মৃদুমন্দ বাতাস আসে তাই একটু স্বস্তি। কলেজের হোস্টেলে উঠার আগে আমি তেঁজকুনি পাড়ায় এক চাচার বাসায় থাকতাম। এই রিক্সা স্ট্যান্ড থেকে হেঁটেহেঁটে গলি দিয়ে চলে যেতাম বাসায়। দীর্ঘ সতেরো বছর পরে কলেজ জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত আর সংগ্রাম থাকা সত্বেও এসব ছোটছোট স্মৃতি মনকে বিষন্ন করার বদলে প্রচ্ছন্ন আনন্দ দিতে লাগলো।

হলিক্রস কলেজের সামনে দিয়ে হেটে যেতে যেতে দেখলাম আশপাশটায় অনেক পরিবর্তন চলে আসছে। রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য অনেক দোকানপাট ভেঙ্গে পেছন দিকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের অতি পরিচিত বই বিচিত্রা দোকানটা চোখে পড়তে তাই অনেক সময় লেগে গেলো। বইয়ের দোকানটার সামনের আর ভেতরের অংশে বড় পরিবর্তন হয়েছে। ছোট্ট যে দোকান থেকে আমরা অনেকেই মাসুদ রানা বই ভাড়া নিয়ে পড়তাম সে দোকান আর কিছুতেই নজরে এলো না।

কলেজের প্রধান গেটের সামনে এসে দ্বিধায় পড়ে গেলাম আগে অফিসে যাব নাকি হোস্টেলে ঢুঁ মেরে আসব। হেঁটেহেঁটে হোস্টেলের দিকেই রওনা হলাম। বিজ্ঞান কলেজের বর্তমানে দুইটা হোস্টেল। আমাদের সময়ে একটা ছিল। নাম কাজী নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস। আমরা এই তিনতলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাসেই থাকতাম। আমরা থাকতে থাকতেই দ্বিতীয় হোস্টেল ডঃ কুদরত ই খুদা ছাত্রাবাসের কাজ শুরু হয়ে যায়। এখন দুইটা ছাত্রাবাসই পুরোদমে চলছে। কাজী নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ আর কুদরত ই খুদা দ্বিতীয় বর্ষের৷ প্রথম বর্ষে আমি থাকতাম নিচ তলায় ১১০ নাম্বার রুমে। দরজার উপরে লাল কালিতে লেখা ছিল পূর্বাশা। আমরা এই রুমটাকে পূর্বাশা বলেই পরিচয় দিতে থাকি। দ্বিতীয় বর্ষে আমাদের ঠাঁই হয় তিন তলায়। রুম নাম্বার ৩০৩। আজকে আমি কি মনে করে হেঁটেহেঁটে প্রথমে কুদরত ই খুদা হোস্টেল বিল্ডিং এ গেলাম। বিল্ডিং এ ঢুকার সময় একজনকে সেলিম মামা বলে ডাক দিয়েই খেয়াল হলো সেলিম মামা তো বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছে। কলেজের কিছু বন্ধুর মারফত জানতে পেরেছিলাম। সেলিম মামা ডাক শুনে সেলিম মামার মতো দেখতে লোকটি আমার দিকে হেঁটে আসলো। সেলিম মামা তো অনেক আগেই মারা গেছে, আপনার চেহারা সেলিম মামার মতো দেখতে তাই ডাক দিয়েছিলাম। লোকটি সেলিম মামার চাচাতো ভাই, চেহারায় তাই মিল। সেও এই হোস্টেলের ডাইনিং এ কাজ করে। আমি টুকটাক কথা বলে হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে গেলাম। টিভি রুমটা বেশ বড়, ডাইনিং এর টেবিলে অনেকগুলো ডাইনিং কার্ড পড়ে আছে। যারা খাবে না এসব তাদের কার্ড। কার্ড জমা থাকলে ধরে নেয়া হয় সে ছাত্র আপাতত মিল বন্ধ রেখেছে। ঈদের পরপর বলে ছাত্র সংখ্যা একদম কম। এখনও গ্রামের বাড়ি থেকে তেমন কেউ আসেনি। কয়েকজন যারা এসেছে তারাও বিছানার চাদর আর রুম ধোয়া মোছার কাজে ব্যস্ত। বিজ্ঞান কলেজের হোস্টেলে যারা থাকে তাদের ১০০ ভাগই বলা যায় দেশের বিভিন্ন গ্রাম আর মফস্বলের স্কুল থেকে পাস করে আসা। সরকারি কলেজের হোস্টেল, কষ্ট করেই থাকতে হয়। কষ্ট করে থেকেও শুধুমাত্র মনের জোরে এসব ছাত্ররা বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট মেডিক্যালসহ ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়। আমার বেশিরভাগ কলেজের বন্ধুরা ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার। যারা এসব হতে পারেনি তারা নিদেনপক্ষে হলেও প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে এবং বর্তমানে ভালো ভালো চাকরিতে আছে। গর্বই হয় বলতে হবে।

আমাদের সময় ডাইনিং কার্ডের রঙ ছিল হলুদ রঙের। কার্ড নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে তরকারীর বাটি নিতে হতো। সেলিম মামা জানলার মতো চারকোণা জায়গা দিয়ে কার্ড নিয়ে এক হাতে কার্ডে টিক চিহ্ন দিত আর অন্যহাতে খাবার বিলি করতো। জেলখানার ছবি মনে ভেসে উঠলেও কিছু করার নাই। মিল রেট ছিল ১২ টাকার মতো মনে হয়। এখনকার ডাইনিং কার্ডগুলো দেখতে সবুজ রঙের। রঙ বদলালেও নিয়ম সব আগের মতোই আছে। আগের সেই রান্নাঘর, সেই ডাইনিং রুম, সেই লাইনে দাঁড়িয়ে তরকারী নিয়ে টেবিলে দেয়া আনলিমিটেড ভাত আর ডাল খাওয়া, ইচ্ছায় হউক আর অনিচ্ছায় হউক। স্বাদের রহস্য ক্ষুধায়। পেটে ক্ষুধা থাকলে এসব ১২ টাকার মিলের সাথে শুধু একটা তরতাজা কাঁচা মরিচ হলেই হলো। মরিচের মাথায় লবণ লাগিয়ে ভাতের নলার সাথে কামড়। অমৃত। গ্রাম থেকে উচ্চাশা আর দারিদ্র্যের সিল ছাপ্পড় নিয়ে আসা ছাত্রদের কাছে এসব অমৃত না লেগে উপায়ইবা কি। তবে সবার অবস্থা যে এক রকম ছিল তা বলা যাবে না। কারও কারও বাবা মায়ের দিয়ে যাওয়া আঙ্গুর বেদানা হোস্টেলের চৌকির নিচে থেকে থেকে পঁচে যেত, আবার অনেকে জানতই না ডালিমকে যে আনার বলে। ডালিম বলতে কেউকেউ ডালিম কুমারকেই বুঝে আসছে সারা জীবন। হে দারিদ্র্য তুমি বিজ্ঞান কলেজের হোস্টেলের ছাত্রদের করেছ মহান।

কুদরত ই খুদা হোস্টেলের ভেতর দিয়ে হেঁটে কাজী নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাসে যাওয়ার সরু রাস্তা দিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম নিচ তলার ১১০ নাম্বার রুমের সামনে। এই রুমেই আমি কলেজের ফার্স্ট ইয়ার সারভাইভ করার যুদ্ধ করে গেছি আরও তিনজন রুমমেটের সাথে। রুমের নাম আর পূর্বাশা নাই। বর্তমান সময়ের আফজাল, জনি, বুলবুল আর আসিফরা এই রুমের নাম দিয়েছে পাই, অংকের পাই, পাইপাই বা পইপই না। লাল কালির পূর্বাশা লেখাটাও আর নাই। রুমটা তালা দেয়া। ঈদের ছুটির পর এখনো এই রুমের বাসিন্দারা কেউ আসেনি। সব আগের মতোই। সেই সবুজ রঙের দরজা, সেই দঁড়ি লাগানো ছিটকিনি! বাইরের টয়লেটগুলোও আগের মতোই। শুধু টাইলস লাগিয়েছে কিছুদিন আগে মনে হয়, আগের চেয়ে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একদম নতুনের মধ্যে যে ব্যাপারটা চোখে পড়ল তা হলো উপরে উঠার সিঁড়ির পাশে একটা ছোট্ট মুদি দোকান। চা বিস্কিট সাবান এসব বিক্রি করার জন্য। হলগুলোতে যেরকম থাকে। এরকম দোকান আমাদের সময় ছিল না। দুই টাকার একটা শ্যাম্পুর স্যাশে কিনতে হলেও যেতে হতো তেঁজতুরি বাজারে।

সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় চলে গেলাম। ৩০৩ নাম্বার রুমের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভেসে উঠলো দ্বিতীয় বর্ষের আমার রুমমেট মুক্তাদির, মুরাদ আর নিটোল কুমারের চেহারা। মুক্তাদির বসে বসে পড়ে ক্লান্ত হয়ে এখন শুয়ে শুয়ে পড়ছে, মুরাদ চেয়ারে পা তুলে নিবিষ্টমনে পড়ে যাচ্ছে আর নিটোল কুমার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে আনা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটা বই পড়ছে। নিটোলের সুবাদেই আমার প্রথম পরিচয় ঘটে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে অধ্যাপনার এক পর্যায়ে ঢাকায় প্রথম যে কলেজে বদলী হয়ে আসেন সেটা ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজ। সরকারী বিজ্ঞান কলেজের আগের নাম। প্রতিষ্ঠিত ১৯৫৪ সালে। স্যার ঢাকা কলেজে বদলি হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞান কলেজেই ছিলেন, অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন বেশ অনেকদিন। স্যারের লেখা “নিষ্ফলা মাঠের কৃষক” বইয়ে এসব ফিরিস্তি বিস্তারিত লেখা আছে।

তিন তলায় দাঁড়িয়ে আশেপাশে একটু চেয়ে দেখলাম। খানিক দূরেই হলিক্রস কলেজের পেছনের চার্চ। চার্চের ক্রস দেখা যাচ্ছে। আমাদের ছাত্রাবাসের পেছনেই বড় মাঠ, একদিকে বড় বড় নারিকেল গাছ, বাম পাশে শিক্ষকদের থাকার একটা এক তলা পাকা বাসা। গরম আর রোদ একটু বেশি থাকলেও গাছপালা ঘেরা কলেজ হোস্টেলের এরিয়াটা বেশ ছায়া সুনিবিড় মনে হচ্ছিল। উপরের আকাশ শরতের আকাশের মতো স্বচ্ছ।

তিনতলা থেকে নেমে রওনা হলাম কলেজ বিল্ডিং এর দিকে। এবার কলেজের ভেতরটা একটু ঘুরে দেখব আর অফিসের কাজটা সেরে ফেলব। মূল ভবনে ঢুকার মুখেই ডানপাশে অধ্যক্ষের রুম। বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ আইয়ুব ভুঁইয়া। কলেজের ভেতরে ঘুরে বিভিন্ন বিভাগের সামনে দিয়ে হেঁটে অফিসে কাজটা শেষ করে বের হয়ে আসলাম। পরিচিত কোন শিক্ষক শিক্ষিকা দেখলাম না। দেখব বলে আশাও করিনি। সরকারী কলেজের চাকরী মানেই বদলির চাকরি। কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকার কথা অনেকবার করে মনে পড়ল। করবী দত্ত ম্যাডামের কথা বিশেষ করে মনে হল। তিনি আমাদের পদার্থবিজ্ঞান পড়াতেন। কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাসে মমতাময়ী মায়ের মতো কিছু কথা বলেছিলেন, আমি পেছনের বেঞ্চে বসে নিরবে কেঁদে ফেলেছিলাম। আমরা গ্রাম থেকে যারা ঢাকায় গিয়ে কলেজে ভর্তি হই তাদের মন পড়ে থাকে গ্রামে, বাবা মায়ের কাছে। বাবা মায়ের কথা বারবার মনে পড়তে থাকে। শহরের বৈরী পরিবেশে তাই একটু মায়া মমতার ছিঁটেফোটা পেলেই বুক ভেঙ্গে কান্না আসতে চাইত। কেউ একটু মায়া দেখালেই তাকে মনে হতো যাকে বলে মায়ার শরীর।

হোস্টেলে আমরা যারা ছিলাম তারা সবাই কম বেশি রুমে একা একা কান্নাকাটি করেছি। কলেজ লাইফটা এমনিতেই একটু ছোট সময়ের। মাত্র দুই বছরের। এর মধ্যে আবার কয়েকমাস কেটে যায় ভর্তি আর ক্লাস শুরু হতে হতে। তার উপর আমরা যারা প্রথমবারের মতো ঢাকা শহরে এসে কলেজে ভর্তি হই তাদের অনেকটা সময় চলে যায় খাপ খাওয়ানো আর টিকে থাকার লড়াইয়ে। সবাই কম বেশি এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়। কেউ তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেয় আবার কারও কারও একটু বেশি সময় লাগে। তবে একটা সময় পরে বাবা মা যে আশা নিয়ে পড়াতে পাঠিয়েছে তা ভেবে সবাই তার জীবনকে সাজিয়ে ফেলে পড়াকে কেন্দ্র করে। একবার আসল ঘরে মশাল দিতে পারলে বাকি সব ঘর ঠিক হয়ে যায়। ছাত্রদের জন্য আসল ঘর পড়ালেখার ঘর আর পড়ালেখা। এই আসল ঘরে আমি নিজেও যে সব সময় অনেক মশাল দিয়েছি তা নয়, বুঝে না বুঝে ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া দেয়ার মতো ব্যাপারও ঘটে। তবে শেষমেশ সবাই মশাল ঠিকই আসল ঘরেই দেয়। উথাল -পাথাল উঠানামা আর পাকচক্র কাটিয়ে ঠিকই এক সময় সবাই সাগর পাড়ি দেয়, তীর পায়। দুই একটু ব্যত্যয় থেকে যায় তা বলাই বাহুল্য।

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *