এই মুহূর্তে কিছু লেখাই বিপজ্জনক মনে হয়। একটা লেখার একেকজন একেকরকম অর্থ করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। সময়ই এখন এমন। অস্থির সময়ে সবকিছুতেই সন্দেহ, অস্থিরতা ও অবিশ্বাস। একদিন সবই স্বাভাবিক হবে। আমরা সবাইকে বিশ্বাস করতে শুরু করবো। সেদিনের অপেক্ষায় আছি।
বিশ্বজয়ী অলরাউন্ডার সাকিব ক্রিকেটের পরাশক্তিকেও তটস্থ করেন। মাঠ যেদিন সাকিবের পৃথিবীটা সেদিন বাংলাদেশের। এই বিস্ময় বালক দিনে দিনে পরিণত হয়েছেন ক্রিকেটের সৌন্দর্যে ও শিল্পে। বহু রেকর্ডের মালিক সাকিব নানা সময় জন্ম দিয়েছেন বহু বিতর্কের। হয়েছেন আলোচিত, সমালোচিত। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অহঙ্কারী, উত্তাপপ্রিয়, অর্থের মোহ অস্থিমজ্জায় বলেই আমার ধারণা। তাকে অপছন্দ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কখনো তাকে মানতে পারিনি। কেন পারিনি আমি জানি না। তার সাথে আমার কখনো দেখাও হয়নি। অনেকসময় তাকে বেয়াদব মনে হয়েছে। নানা ইস্যুতে সবসময়ই থাকেন আলোচনায়, সমালোচনায়। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা বলেই পরিচিত। সাকিব নিজেকে ‘ভদ্রলোক’ পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন অনেকবার।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাকিব বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছেন। মাঠে সব বলে চার ছক্কা না মারলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বলটি তিনি খেলেছেন গত নির্বাচনে। বাঙালি কখনো বুঝতে চায় না সবার রাজনীতি করার দরকার নেই। বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। জগতে যার যার জায়গা নির্ধারিত। ঐ জায়গা ছেড়ে অন্যত্র গেলেই বিপত্তি। সাকিব কি একজন এম.পির চেয়ে কম জনপ্রিয় ছিলেন? বিগত সরকারের সব টোপকে তিনি গিলে ফেলেছেন। বড় ভুলটা হয়েছে ওখানেই। পতিত সরকার চেয়েছিল সকলকে একই ছায়ায় নিতে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। সবাইকে এক করতে হয় না। সমালোচনার জন্য হলেও বিরোধীকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সেটা তারা চাননি। সমালোচনা তাদের ভালো লাগতো না। তার চেয়ে বরং বাতাবি লেবুর চাষ ভালো ছিল। সেই লেবু একদিন গলে গেলো। সারাদেশ দুর্গন্ধময় হলো। দুর্গন্ধ দূর করতে প্রয়োজন হলো বিপ্লবের। জনবিপ্লবে বাতাবিলেবুর বাগান ধ্বসে গেলো। লেবুগুলো রয়ে গেলো নর্দমায়।
উপমহাদেশের রাজনীতি অনেকাংশে প্রতিহিংসাপরায়ণ। এখান থেকে বের হতে সময় লাগবে। একজন নোবেলবিজয়ী যেমন এখানে তুচ্ছ, হিংসার বিষে জর্জরিত তেমনি হয়তো বা সবই। গুণীকে চিনতে আমাদের সময় লাগে। আসল মানুষ চিনে নিতেই বেলা বয়ে যায়। অসূয়াবিষ আমাদের গ্রাস করেছে। গত সরকারের অনেক কুকর্মের ভার সাকিব-মাশরাফিকে বইতে হবে। যেহেতু তারাও সরকারের অংশ ছিল। আমি আন্দোলনের এক সময় বলেছিলাম : মাশরাফি, সাকিব কেন ছাত্রদের পক্ষ নিচ্ছে না? ফেরদৌস তো পর্দায় কতো খলনায়ককে নাস্তানাবুদ করে। এখন সে চুপ কেন? বাংলায় আরেকবার মহানায়ক হওয়ার সুযোগ তাদের ছিল। তারা তা হননি। সাকিব তখন আমেরিকায় ছুটি কাটাচ্ছিলেন। মাশরাফিকে দেখা যায়নি। ফেরদৌস গেছেন বিধ্বস্ত বাতাবিলেবুর বাগানে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে! আমি বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীকে আপনারা বুঝান। প্রয়োজনে এমপিত্ব চলে যাক। তারা যাননি।
এখন তাদের নামে মামলা হচ্ছে। নীরব থাকার অপরাধে মামলা। সাকিব খুন করার লোক না। অন্তত গার্মেন্টস কর্মী খুন করবেন সেটা অনেকেরই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি কয়েকবার ‘খুন’ করেছেন কোহলীকে, গেইলকে, শেন ওয়ার্নকে। সেসব খুনে ফাঁসি হয় না, বিশ্বরেকর্ড হয়। বিশ্বক্রিকেটে সাকিব এখনো বিস্ময়।
বহু আগে পাকিস্তান দল বাংলাদেশে এসেছে। মিরপুরে খেলা। সাকিব তখন কেবল জাত চেনাচ্ছেন। ইনজামাম এসেছেন পাক- অধিনায়ক হয়ে। সাকিব সেদিন খেলায় নেই। ইনজামাম তার অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলেন। জানলেন, সেদিন তার এইচএসসি পরীক্ষা। তাই খেলবেন না। ইনজামাম বিরক্ত হলেন। বললেন : ‘ওর আবার পরীক্ষা দেওয়া লাগে? তোমরা ওকে একটা সার্টিফিকেট এমনি দিতে পারো না?’
ইনজামাম আমাদের পড়ালেখার নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতেন না। সার্টিফিকেট নীলক্ষেতে কিনতে পাওয়া গেলেও পরীক্ষা ছাড়া আর অটোপাশ ছাড়া আমরা কাউকে সার্টিফিকেট দেই না। এদেশে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট জাল হলেও পরীক্ষাহীন সার্টিফিকেট দেওয়ার নিয়ম নাই বস। একথাটা তাকে সেদিন কেউ বুঝায় নি!
আমার ব্যক্তিগত মত হলো, ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ফাঁসির আসামীকেও ক্ষমা করেন। সাকিবের বহু ভুল হয়তো আছে। মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাজাও হয়তো পাবেন। কিন্তু আশঙ্কা হলো আদালত চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে। সাকিব কি অক্ষত থাকবেন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো পর্যন্ত? তাই বলি কী সাকিবকে মামলাগুলো থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া যায় কি না? সে শুধু ক্রিকেটটাই খেলুক। তাকে আর রাজনীতিতে আনার প্রয়োজন আছে কি? বাংলাদেশে বহু এমপি আসবেন কিন্তু সাকিব আল হাসান শতাব্দীতে একজনই আসেন।
আমরা কি তাকে এমনিই একটা সার্টিফিকেট দিতে পারি না যে, তিনি নিরপরাধ???