পানির উপর ভাসমান একটি বাজার দেখেছেন কখনও? বাংলাদেশে ভাসমান পেয়ারার বাজার রয়েছে। এই ভাসমান বাজারের ধারণা কখন শুরু হয়েছিল তা কেউ জানে না, তবে এটি শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য। এখানে প্রতিদিন অনেক কৃষক ও পাইকার ভিড় জমায়। শুধু পেয়ারা নয়, অন্যান্য ফলও বিক্রি হয় এই বাজারে।

বাজারের অবস্থান
ধান, নদী, খাল—এই তিনে বরিশাল। উক্তিটি সত্যিই বেশ অর্থবহ। বরিশাল জুড়ে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত এবং বিভিন্ন স্থানে প্রবাহিত নদী ও খাল দেখা যায়। ভাসমান পেয়ারার বাজারটি বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠির কীর্তিপাশা খালে অবস্থিত। এটি দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার সিংহভাগ উৎপাদিত হয় এ অঞ্চলে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পেয়ারার জন্য বিখ্যাত, যা বাংলাদেশে “বাংলার আপেল” নামে পরিচিত। বিশেষ করে ঝালকাঠি সদর উপজেলা এবং পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বানারীপাড়া উপজেলায় কৃষকরা পেয়ারা চাষের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। জীবনের এমন বৈচিত্র্য দেশের অন্য জায়গায় পাওয়া কঠিন।

ঘুরে আসার উত্তম সময়
জুলাই মাস থেকে পেয়ারা উঠতে শুরু করে এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে বিক্রির ভরা মৌসুম। তাই, পাইকারিভাবে পেয়ারা বিক্রির কাজ দেখতে জুলাইয়ের শেষের দিকে ঘুরতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়।

ভাসমান পেয়ারা বাজারের সৌন্দর্য
পেয়ারা ভর্তি ছোট ছোট শত শত নৌকা এখানে জড়ো হয়। কৃষকরা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে ভাসমান বাজারে নিয়ে আসে। আপনি পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করার মাধ্যমে আপনার সফর শুরু করতে পারেন।

হয়তো আপনি সরাসরি কৃষকের পেয়ার সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখতে পাবেন।

কিন্তু ভীমরুলীতে পৌঁছলে ভাসমান বাজারের দৃশ্যকে কোন কিছুই হার মানাতে পারবেনা। পেয়ারা ভর্তি নৌকা; খালের দুই ধারের সবুজ, আপনার মনে হবে আপনি স্বর্গের এক টুকরোতে প্রবেশ করেছেন, এমনকি বছরের সবচেয়ে আর্দ্র সময়েও!

“খাল থেকে দৃশ্যটি খুব সুন্দর, খালের দুপাশে গাছগুলি এমন একটি পথ তৈরি করে, মনে হয় আমি আমাজন বনে আছি!” খালের উপর দিয়ে বাজারে ঢুকতে কেমন লাগে জানতে চাইলে ইসরাত জাহান নামের এক পর্যটক এই কথা বলেন।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সময় নিয়ে একটি ছোট নৌকায় করে বাজার ঘুরে দেখেন কারণ এটি ধীরে ধীরে চলবে, আপনাকে একটি শান্ত পরিবেশে বাজারের ব্যস্ততা অনুভব করার সুযোগ করে দেবে।

নীচের ভিডিওটি দেখুন, একজন লোক বাজারে বিক্রি করার জন্য পেয়ারা নিয়ে যাচ্ছেন:
স্বরূপকাঠির ভিমরুলি গ্রামটি গত কয়েক বছর ধরে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আপনি যদি অনন্য কিছু অনুভব করতে চান, তাহলে বেরিয়ে পড়ুন এবং ভিমরুলি ভাসমান বাজার থেকে ঘুরে আসুন!

উপর থেকে বাজারের চিত্র:

যেভাবে যাবেন
“আপনি যদি অন্তত দু-এক দিনের সফরের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে রাতের লঞ্চ ভ্রমণই ভালো হবে। রাতে সদরঘাট থেকে বরিশালের লঞ্চ পাবেন। বরিশাল সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে সিএনজি বা অটো নিয়ে বানারীপাড়া লঞ্চ ঘাটে চলে যাবেন। সেখান থেকে ভীমরুলীর জন্য ট্রলার বা নৌকা ভাড়া করতে পারেন,” বলেন ইসরাত জাহান।
পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সুবাদে আপনি ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে বাসে করে পিরোজপুর যেতে পারবেন। সুতরাং, আপনি যদি খুব ভোরে রওনা হন, আপনি দুপুরের দিকে বাজারে পৌঁছাতে পারবেন। ভাসমান পেয়ার বাজার ঘুরে আবার রাতে ফিরে আসতে পারবেন, এক দিনেই ভ্রমণ সম্পন্ন করা সম্ভব! আগে এটি অকল্পনীয় ছিল, কারণ ফেরি দিয়ে পারাপার ছাড়া আগে কোন উপায় ছিল না। তাছাড়া নদীর স্রোত এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে ভ্রমণ আরো বেশি সময়সাপেক্ষ এবং বিপজ্জনক হতো।
বরিশাল রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে যেতে চাইলে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ধানসিঁড়ি পরিবহনে উঠে পড়ুন। বাস সুপারভাইজারকে ঝালকাঠির কীর্তিপাশা মোড়ে নামিয়ে দিতে বলুন। সেখান থেকে অটো রিক্সা নিয়ে ভিমরুলী পৌঁছে যেতে পারবেন।
বাজারের কাছেই রেস্টুরেন্ট আছে, চাইলে সেখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। বাজারের কাছাকাছি থাকার জন্য পিরোজপুরের বোর্ডিং হাউসে থাকতে পারেন অথবা বরিশালের হোটেলে থাকতে পারেন এবং সেখান থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারেন।