প্রথম পাতা » ভ্রমণ » দারুচিনি দ্বীপ আমাদের

দারুচিনি দ্বীপ আমাদের

Saint Martin Island

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই সমুদ্র দেখার প্রথম সৌভাগ্য হয় আমার। আমি প্রথম যেদিন সমুদ্র দেখি সেই বিস্ময়কর স্মৃতি আজ আর মনে করে বর্ণনা করতে পারবো না। আমি স্তব্ধ হয়ে কেবল তাকিয়ে ছিলাম ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের কুবেরের মতো এক অস্ফুট আর্তনাদ মুখবিবর গড়িয়ে পড়েছিল : ‘এই তাহলে সমুদ্দুর!’ এতো বিস্ময় বিধাতা সমুদ্রে আর পাহাড়ে রেখেছেন যে যতবার এসব জায়গায় গিয়েছি প্রথমবারের মতো নতুন নতুন বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিলাম।

আমি প্রথম সমুদ্র দেখি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে। হুমায়ূন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ উপন্যাস আগেই পড়া ছিল। পরে তৌকির আহমেদ এই নামেই সিনেমা বানালেন। সেই সিনেমা দেখে অনেকের মতো আমাদেরও মাথা খারাপ হলো। সমুদ্রে যাওয়ার একটা নেশা তৈরি হলো। মনে হচ্ছিল দারুচিনি দ্বীপে না গেলে আমরা মরে যাব নিশ্চিত। একদিন সিনেমার মতো আমরাও সত্যি সত্যি চলে গেলাম দারুচিনি দ্বীপের ভিতর! কক্সবাজার, টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ- বাংলাদেশের শেষ লোকালয়। সেখান থেকে ছেঁড়াদ্বীপেও গিয়েছি।

Saint Martin Island

সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্যরকম ভালো লাগা সেখানে রাত্রিযাপন। রাতের সমুদ্র না দেখলে আদিমাতা সিন্ধুর পূর্ণ পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়। কক্সবাজারেও রাতে সমুদ্র দেখা যায় তবে সেটাতো বাজারই! সুনসান নীরবতা, চাঁদের আলোয় সমুদ্রের গর্জন, আলো আঁধারে মেশা এক ভিন্নরকম আবেশের ভালোলাগা হৃদয়কে স্পর্শ করে সেখানে। সেখানে একাও ভালো লাগে, প্রিয়জন কাছে থাকলেও ভালো লাগে। আমরা আড্ডা দিয়েছি সারারাত। এরপর আরো দুবার সেখানে গিয়েছি। কখনো ফিরে আসতে মন চাইতো না। যেন এক অন্য বাংলাদেশ সেটি। জল জোছনায় কী মায়াবী আকর্ষণ সেই আড্ডামুখর সন্ধ্যা, নিশুতি রাতের কান্না, ভোরের বেলাভূমি কী অপূর্ব! রূপসী বাংলাকে অনুভব করতে একবার হলেও আপনাকে যেতে হবে জীবনানন্দের দারুচিনি দ্বীপে, আমাদের সেন্টমার্টিনে।

আমাদের গ্রিন পাসপোর্ট নেই। লাল পাসপোর্ট তো কোনোদিন স্বপ্নেও দেখিনি। আমাদের নায়াগ্রা নেই, টরেন্টো নেই, এডেন নেই। আমরা অতি দরিদ্র বাঙালি। আমাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়। আমরা সেন্টমার্টিনে দিন কাটাবো, রাত কাটাবো, যখন খুশি তখন যাবো। আমাদের বাধা দিয়েন না। এমন কোনো আইন করবেন না যে, আমাদের দুঃখ আর সুখের ঠিকানাটাও বন্ধক রাখতে হয়!

ভ্রমণ থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *