সান জু (Sun Tzu) এর “The Art of War” বইটা আমার খুব প্রিয়। যখনই আমার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় তখনই এই বই এর কিছু উক্তি আমি অনলাইন থেকে পড়ি। বই আছে আমার কাছে। নীলক্ষেত কপি। কিন্তু বই থেকে না পড়ে “গুড রিডস” থেকে উক্তি পড়তেই বেশি ভালো লাগে।হঠাৎ করে মনে হল এসব উক্তি থেকে আমার ভালো লাগার পাঁচটি উক্তি (হ্যা, মাত্র পাঁচটি উক্তি, নিজেকে শুক্রবারের হাটের ক্যানভাসারের মতো শুনালো এক মুহুর্তের জন্য) নিজের মতো করে বাংলায় অনুবাদ করি।যেহেতু নিজের মতো করে অনুবাদ সেহেতু ভাবানুবাদ।বিষয়ের ভাব আর নিজের ভাব মিলিয়ে অনুবাদ। নিজের ভালো লাগার উক্তির অনুবাদ সবাইকে পড়ালে তাদের কেমন লাগবে তা ভাবার সাহস হয় নাই। বেশি খারাপ লাগবে না ভেবে শেয়ার করলাম। বেশি খারাপ লাগলে বিচার দিতে পারেন।
যাই হউক এতো কথা না বলে অনুবাদে হাত আর মাথা দেই।আরেকটা কথা মনে পড়ে গেল। এখন মানুষের করা অনুবাদের অতো দরকার হয় না। “গুগল অনুবাদ”, “গ্রামারলি” এসবের মতো ব্যাপার থাকায় অনুবাদ করা এখন হাতের ময়লার বিষয় (ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন, করোনাকে দূরে রাখুন)।আগে গুগল অনেক “অংভং” করতো অনুবাদ করতে। ঠিকঠাক মতো হত না। কিন্তু সময় বয়ে গেছে অনেক। এখন গুগল বলা যায় তুখোড় অনুবাদক। বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এলগোরিদম এসব ব্যাপারের কারনে গুগলের অনুবাদের গুনগতমান অন্য বিষয়ের পাশাপাশি বেশ ভালো হয়েছে বলতেই হবে।অংভং শব্দটি হুমায়ুন আহমেদের একটা নাটকের সংলাপ থেকে নেয়া। আপনারা অনেকেই দেখে থাকতে পারেন। “মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন” নাটকের নাম।
যাই হউক আসল কথা বলতে গিয়ে আমি অনেক এদিকে সেদিকে কথা বলি। এটা আমার বদভ্যাস।অভ্যাস টা বদলাতে হবে।“Atomic Habits” বইটা পড়তে পারেন বদভ্যাস ভেঙ্গে নতুন ভালো অভ্যাস গঠন করার জন্য। আমি পড়েছিলাম। কাজ হয় নাই মনে হয়। কাজ হলে এই এদিক সেদিক কথা বলার বদভ্যাসটা বদলে যেত। কিন্তু আপনাদের বেলায় কাজ করতেও পারে। তাই চেষ্টা করায় দোষ নাই। চেষ্টাই সার।আবারও যাই হউক। এবার অভ্যাসে ফেরা যাক। নিচে পাঁচটি অনুবাদকৃত উক্তি দেয়া হল-
১-“আপনি যখন দুর্বল অবস্থা এবং অবস্থানে আছেন তখন ভান করেন আপনি অনেক শক্তিশালী”
মন্তব্যঃ এই বইয়ে যুদ্ধে ভান করার, কলাকৌশলের আশ্রয় নেয়ার পক্ষে কথা বলা হয়েছে। আপনি ভেবে চিন্তে এসব অনুসরণ করবেন।আপনার ভালো-মন্দ জ্ঞানের সাথে মিল নাই যার তা মেনে চলার দরকার নাই বলে আমি মনে করি।
২-“শত্রুর সাথে যুদ্ধ না করেই শত্রুকে বশে আনাই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় কৌশল।“
মন্তব্যঃ যুদ্ধ না করে আবার বশে আনব কেমনে?কূটনীতি, সন্ধি এসবের কথা বলেছে সান জু মনে হয়। আপনাদের কি মনে হয়? প্রশ্ন করা আমার মানায় না। উত্তর দিলে কিভাবে জানব!
৩-“আপনি যদি নিজেকে আর আপনার শত্রুকে ভালো করে জানেন এবং চিনেন তাহলে যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে আপনার ভাবনা চিন্তার কিছু নাই।“
মন্তব্যঃ এটা জানা কথা সবার। নিজের শক্তি আর দুর্বলতা যেমন জানতে হবে তেমনি শত্রুপক্ষের ভালো মন্দ দিকও জানতে হবে। যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে তাহলে চিন্তার কিছু নাই মানে আপনিই জয় লাভ করবেন, এই আর কি।
৪-“বিজয়ী যুদ্ধারা আগে যুদ্ধ জয় করে তারপর যুদ্ধে যায় আর পরাজিত যুদ্ধারা আগে যুদ্ধে যায় তারপর জয়ী হওয়ার চিন্তা করে”।
মন্তব্যঃ আমি অনেক দিন এই কথাটার মানে বুঝতে পারি নাই। যুদ্ধে না গিয়ে আগেই যুদ্ধ জিততে হবে। মানে হল আপনাকে পরিকল্পনা, বিকল্প রাস্তা, কি কি হতে পারে যুদ্ধে, সব চিন্তা ভাবনা করে মাষ্টার প্ল্যান নিয়ে যুদ্ধে যেতে হবে। আপনি জিতেই আছেন। শুধু এগুলা প্রয়োগ করে জিতে আসতে হবে। আর যারা পরাজিত হবে তারা এসব ভেবে চিন্তে যায় না। তারা ধরো তক্তা মারো পেরেক ভাব নিয়ে যায় , ভাবে খেলা হবে আর জিত হবে, তারপর পরাজয়।এতো জ্ঞান নিয়ে আমি কয়টা যুদ্ধ জিতেছি তার সুদুত্তর আমার কাছে নাই।
৫-“সবচেয়ে ভালো তরবারিকেও লবনাক্ত পানিতে চুবিয়ে রাখলে তাতে মরিচা পড়ে যায়”
মন্তব্যের আর কি দরকার। অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস। আপনাকে চর্চায় থাকতে হবে। অলসতা করা যাবে না। অনেক জ্ঞান দিয়ে দিচ্ছি সুযোগে। আমি এসবের তেমন কিছুই মানি না। কিছু কিছু মানি।
সবাই শুধু বোনাস দেয়। আমিও বোনাস দিচ্ছি। ঈদ বোনাস বা বাংলালিঙ্ক বোনাস টক টাইম না। একটা বোনাস উক্তি। বোনাসে সবাই খুশি হলেও বোনাস উক্তিতে আর যাই হউক কারও খুশি হওয়ার কথা না। তারপরও দিলাম।এই প্রথম মনে হয় যে বোনাস দিচ্ছে সেই খুশি আর যারা বোনাস পাচ্ছে তারা ব্যাজার। দুঃখিত।
বোনাস উক্তিঃ “দীর্ঘকালীন যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে কোন জাতি লাভবান হয়েছে এরকম নজির কোন ইতিহাসে নাই”।
মোদ্দাকথা, যুদ্ধ খুব খারাপ জিনিস। সহজ সরল বলা। যুদ্ধ না করাই ভালো। যুদ্ধ না করেই জিতে যাওয়া আরো ভালো। আবার একাই জিততে হবে তা নয়। win-win অবস্থা হলে আরো ভালো। ভালোর শেষ নাই। কিন্তু যুদ্ধের শেষ হওয়া উচিত।
“যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা” লেখা পছন্দ না হলেও অবহেলা কইরেন না। অবহেলা করলে যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেব তা না। আমি যুদ্ধের বিপক্ষে। শান্তির পক্ষে।