সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে চারজন ব্যক্তির একটি টকশোর ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে উপস্থিত ছিলেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার, কাজী ওমর ফয়সাল এবং পলিটিকা টিভির তানভীর আহমেদ। বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে সাইয়েদ আব্দুল্লাহর একটি মুহূর্ত, যেখানে তাকে হাতে হারপিক ধরে থাকতে দেখা যায়।
কী ঘটেছিল টকশোতে?
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে সাইয়েদ আব্দুল্লাহ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হারপিক তুলে দেখান। এরপর এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
৫ আগস্টের পর ‘আওয়ামী দালাল’ নামে পরিচিত এই আইনজীবি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পলাতক অবস্থান থেকে সম্প্রতি এক টকশোতে অংশ নেন তিনি। সেখানে সহ-আলোচক ছিলেন ইউসিসি’র শিক্ষক সাইয়েদ আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নিঝুম মজুমদারকে টয়লেট ক্লিনার হারপিকের বোতল উঁচু করে দেখান সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।
কে এই নিঝুম মজুমদার?

নিঝুম মজুমদার পেশায় একজন ব্যারিস্টার এবং সলিসিটর। তিনি প্রথমে আইন পেশায় যুক্ত হন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি নিউজিল্যান্ড হাইকোর্টে ব্যারিস্টার এবং সলিসিটর হিসেবে এনরোলড্ হন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁর বাবা অ্যাডভোকেট গোলাম সারওয়ার মজুমদার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রবীণ আইনজীবী এবং মা মনওয়ারা সারওয়ার একজন গৃহিনী । নিঝুম মজুমদার লিখতে ও পড়তে ভালোবাসেন। তাঁর লেখালিখির প্রিয় বিষয় আইন, ইতিহাস ও রাজনীতি । বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে তাঁর তিনটি গবেষণামূলক আইনি গ্রন্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, (১) একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে মুসলিম আইডেন্টিটির অপব্যবহার ( ২০১৮), আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: বিবাদী পক্ষের অদ্ভুত সাক্ষীগুলো (২০২০), আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: প্রোপাগান্ডা ও উত্তর (২০২১)। তাঁর স্ত্রীও পেশায় একজন ব্যারিস্টার। পুত্র ইথান, কন্যা ফিওনা এবং স্ত্রী লিসাকে নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন।
কেন হারপিক মজুমদার?
ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে এটি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই পোস্টটির প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করে কন্টেক্সট তুলে ধরেছেন। সাইয়েদ আব্দুল্লাহ নিজেও তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেন এবং ২০২০ সালে ভাইরাল হওয়া একটি ঘটনার উল্লেখ করেন।
যেখানে কথিত প্রেমিকার সাথে ভয়েজে তাকে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে শোনা যায়। নিঝুম মজুমদার মিস আয়ারল্যান্ড প্রিয়তিকে নিজের প্রেমের জালে ফাসাতে গিয়ে তাঁকে বারবার ব্ল্যাকমেইল করেন। এই ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়েই তিনি হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে প্রিয়তিকে জানান। যদিও ভাইরাল হওয়া ওডিওটির সত্যতা যাচাই করা হয়নি। ওই ঘটনার পর থেকেই তাকে কটাক্ষ করে ‘হারপিক মজুমদার’ নামে অবিহিত করে থাকেন নেটিজেনরা।
সাইয়েদ আব্দুল্লাহ এর আগে একবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছিলেন, ‘একবার ঢকঢক করে হারপিক গিলে খেয়ে (I’m not joking, it literally happened) তার মাথাটা ওই যে আওলায়ে গিয়েছিলো, সেখান থেকে আর কোনদিনই পুরোপুরি সুস্থ হতে পারে নাই সে। আইসিসি-র চিফ প্রসিকিউটরের কাছে স্রেফ অভিযোগ দায়ের করে এসে প্রচার করে বেড়াচ্ছে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ‘মামলা দায়ের’ করেছে, আর আপনারাও ওইটা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যাচাই-বাছাই না করেই! অন্তত এইটা তো যাচাই করে নিবেন যে হারপিকখোর ওই ব্যক্তিটি মানসিকভাবে আদৌ সুস্থ কিনা!’
পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের দালালি করায় নিঝুম মজুমদারকে হারপিক দেখিয়ে যথাযথ জবাব দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নেটিজেনদের কেউ কেউ।
বিতর্কিত অতীত এবং বর্তমান আলোচনার ধারা
নিঝুম মজুমদার একজন আইনজীবী, যিনি বিভিন্ন আলোচিত-সমালোচিত বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করে থাকেন। ইভ্যালি ডট কমের মামলা পরিচালনার মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়েও সক্রিয় থাকেন।
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে কিছু ব্যবহারকারী তার কথোপকথনের ধরন ও ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। অনেকেই মনে করেন, একজন আইনজীবীর ভাষা ও আচরণ আরও সংযত হওয়া উচিত।