হুমায়ূন আহমেদ এক বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিলেন। একটি বাচ্চা এসে তারস্বরে চেঁচিয়ে জানাল : ‘আব্বু, হাগু করেছি’। বাড়ির মালিক ‘আব্বু’ বিব্রত হলেন। ছেলেকে বিনয়ের সুরে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। গল্প শুরু হলো। কিছুক্ষণ কর ছেলেটি দ্বিগুণ উৎসাহে আবার সংবাদ দিল : ‘আব্বু হাগু করেছি!’ লোকটি আবারো বিব্রত হলেন। ছেলেকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। গল্প চলতে থাকলো। ঘরের লোকজন মনে হয় অন্য কাজে ব্যস্ত। ছেলেকে খেয়াল করেনি। তিন চার মিনিট পর ছেলেটি টি-টেবিলে কী একটা রাখতে রাখতে জানাল : ‘আব্বু, হাগা নিয়া আইছি!’
অসুস্থ বিকারগ্রস্ত লোকজন এই দেশে শুধু হেগে শান্তি পায় না। বারবার মিডিয়ায় বলেও তাদের মন ভরে না। এরপর এদের লিখতে হয়। টাকার গরমে ‘মজনুকাহিনি’ লিখে ‘গুস্তক’ প্রকাশ করেন। তারপর গু-স্টলে বসে থাকেন অটোগ্রাফ মারানিদের জন্য। একুশের বইমেলা রূপান্তরিত হয় ‘নটিপাড়ায়’! টানবাজারের প্রিন্সেস বলাকারা যেমন খদ্দের ধরার জন্য উরু আর বুক খোলে বসে থাকে এখনকার নাপিতরূপী লেখিয়েরা বসে থাকে পাঠককে গু খাওয়ানোর জন্য। কতিপয় পাঠকরূপী গু-খেকোরা সেখানে যায়, শেলফি তোলে তারপর ‘হাগা নিয়া’ বাসায় ফেরে!
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ আজ তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। রাজনীতি, ধর্ম, ব্যবসা, সমাজ, সংসার সব চলে গেছে মোস্তাকদের পকেটে। গতকাল বইমেলায় যারা স্লোগান দিচ্ছিল তাদের অনেকেই ‘ষোড়শী-প্রিয়া’ হারানোর শঙ্কায় উত্তোলিত বলে মনে হলো। মোস্তাকরা পুরো সমাজ খেয়ে দিচ্ছে। গতকালের ঘটনায় তরুণদের অভিব্যক্তিতে প্রবল সংক্ষুব্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। এই তরুণরা মাঠে নামলে অনেক কিছুই দখলমুক্ত হতো!
একুশের বইমেলায় একসময় বসে থাকতেন শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, নির্মলেন্দু গুণেরা। স্টলে বসে আড্ডা দিতেন, পাঠককে অটোগ্রাফ দিতেন। লেখকে-পাঠকে অন্তরঙ্গ মিলন হতো বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে! অথচ আজ কবি নেই, লেখক নেই, আমাদের জাতির বিবেকরা আজ আর কেউ নেই। এখন সময় মোস্তাকদের, সময় এখন কিং খানদের!
একসময় বইমেলা মানেই ছিল হুমায়ূন আহমেদ। সেটিকে বইমেলা না বলে হুমায়ূনমেলা বললেও অত্যুক্তি হয় না। পাঠকরা দলবেঁধে যেতেন তাঁর সাইনকরা বই কেনার জন্য। মাঝে মাঝে মেলায় আসতেন তিনি। বসতেন আগামী, অন্যপ্রকাশ, কাকলিতে। একবার তিনি এলেন। মুহূর্তেই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো হুমায়ূন আহমেদ মেলায় এসেছেন! পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লো। বাংলা একাডেমি বিশেষ নিরাপত্তায় হুমায়ূনকে মেলা থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেন। না, সেদিন কোনো পাঠক তাঁকে তাড়া করেননি। ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকারও করেননি। হুমায়ূনকে একনজর দেখতে বহু যুবকই হিমু সেজে গৃহত্যাগী হয়েছে। সেটি আরেক ইতিহাস।
হুমায়ূন আহমেদও অসম বয়সের এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন। শাওনকে উচ্চকিত করেছিলেন নানা লেখায়। তবে শাওনও নিজগুণে কম উচ্চকিত নন। মানুষ হিসেবে হুমায়ূনের এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তবে বিয়ের পর তারা মিডিয়ায় আসেননি। হুমায়ূন চলে গিয়েছিলেন নিভৃতে। সৃষ্টি করেছিলেন অসামান্য কিছু সাহিত্য। অসম বিয়ে আমাদের ধর্মে, সমাজে অহরহ। তবে সবকিছুর পরিমিতি থাকতে হয়। মোস্তাক-তিশা সেই পরিমিতিকে লঙ্ঘন করেছেন। এরা নিজেরা ‘হেগে’ হাগা নিয়ে গেছেন বাংলা একাডেমিতে! একাডেমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী! তারা লেখকের স্বাধীনতাকে সানন্দে গ্রহণ করেছেন।
এ জাতির যে অবস্থা তাতে দেশে একবার হলেও জাতীয় মানসিক চিকিৎসামেলা হওয়া প্রয়োজন! বইমেলার কোনো এক ফাঁকে এটি করা যায়। বইমেলার সময় এ জাতির মাথা বেশি আউলাইয়া যায়!
পরিশেষ, আমার এক ছাত্রের মন্তব্যের সাথে সুর মিলিয়ে বলি, বইমেলা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন রূপকথার গল্প!