প্রথম পাতা » গল্প » দোস্তি হলো ইঁদুর

দোস্তি হলো ইঁদুর

Cat and Rat

ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মেসে খানার সময় প্রায়ই একটি বিড়াল আসতো।  বিড়ালটি দেখতে বেশ  চমৎকার,  সাদা কালো রঙের মানানসই চেহারা। বিড়ালটি কিছু দিন থেকে বেশ ভারি ভারি মনে হচ্ছে। সম্ভবত বাচ্চা দিবে। মেসের সদস্যরা খানা খেতে গেলে দৌড়ে পায়ের কাছে এসে লেজ নেড়ে নেড়ে আদর করে। মনে হয় কিছু খানার দরকার তাই জানান দেয় আদর করে। মিনতির স্বরে আবার ম্যাঁও ম্যাঁও বলে, মানে মাছের কাটা দাও জলদি। অনেকেই কাটা দেয় আদর করে, কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে তাড়িয়ে দেয়। কেউ কিছু কাটা দিলে মচমচ করে খেয়ে নিরাপদে গিয়ে ঘুমায়।

বিড়ালটির জামাই  হুলো সাহেব, সে কোথায় থাকে কি করে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। সে মাঝে মাঝে এসে মাদি বিড়ালটিকে দাঁত খিচিয়ে শাসন করে যায়। মাদি বিড়ালটি হুলো সাহেকে খুব ভয় পেয়ে দৌড়ে পালায়। হুলো সাহেব স্ত্রীকে কড়া শাসন করে আবার তার নিরুদ্দেশ ঠিকানায় তরতর করে চলে যায়।

মেসের পশ্চিম পাশে এক পুকুর আছে, পুকুরের পূর্বপারে নারকেল, আম ও কাঠাল গাছ রয়েছে। গাছগুলির গোড়াতে  আগাছার ছোট ছোট ঝোপ আছে সেই ঝোপের ভিতরে গর্ত করে ইঁদুর দম্পতি বসবাস করে। মাদিটির পেটে বাচ্চা আছে, মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি প্রসাব করবে। তাই ইঁদুর গিন্নী বাহিরে তেমন আসে না, তার জামাই কুট্টুস সাহেব রাত হলে মেস থেকে ফেলে দেয়া খাবারের উৎশিষ্ট সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে নিজে খায় এবং গিন্নীকে খেতে দেয়। এভাবেই তাদের জীবন চলছিলো। এদিকে হুলোর বউয়ের বাচ্চা প্রসবের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু হুলো সাহেবের কোনো খোঁজ খবর নেই। তাই সে নিজের ভারি শরীর নিয়েই একা একা ইঁদুরের গর্তের পাশেই শুকনো খড় পাতা দিয়ে গাছের গোড়াতে বিছানা তৈরি করে। মাদি বিড়ালটির এমন কাজ দেখে ইঁদুর দম্পতির শরীর থেকে ভয়ে ঘাম ঝরা শুরু করে দেয়! দু’জন মিলে পরামর্শ করে এখন কি করা যায় বিপদতো গর্তের মুখে চলে এসেছে! কিছুক্ষণ চিন্তা করে কুট্টুস সাহেব বউকে বলে তোমার যে অবস্থা বিড়ালটারও তো একই দশা। তার মধ্যে বিড়ালটি শুধু একা, আর আমিতো তোমার সাথেই আছি। হুলোকে তো একবারও আসতে দেখিনি। বিড়ালটি কি এই দুরাবস্থার মধ্যে আমাদের জন্য কি ভয়ঙ্কর হবে? কুট্টুস বধু বলে তা হয়তো এখন হবে না, তুমি তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে দেখো আমারতো এমন অবস্থা দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে। তুমি জলদি যাও বিড়ালের কাছে।

কুট্টুস সাহেব খুব আস্তে আস্তে বিড়ালটির বাসার কাছে গিয়ে চুপ মেরে কিছু সময় বসে থেকে গতিবিধি জানার চেষ্টা করছে। এদিকে বিড়ালটি কাতরাচ্ছে আর বলছে কইগো আমার হুলো সাহেব! আমি এখন একা একা কি করব! কে আমার খানার ব্যবস্থা করে দিবে গো হুলো সাহেব। এসব বলছে আর কাঁদছে। সব শুনে এবার কুট্টুসের মনটা  চাঙ্গা হলে সে বিড়ালটির কাছে গিয়ে বলে কিগো মাসি মা? কি হয়েছে তোমার? আমি অনেক সময় তোমার অসহায়ত্বের কান্না শুনে আর ঠিক থাকতে পারলাম না তাই ছুটে এলাম তোমার কছে। কিন্তু তোমার ভয়ে শরীর থেকে ঘামও কম ঝরেনি মাসিমা ।কারণ তোমরাতো আমাদের চিরশত্রু! এবার বিড়ালটি খুব নরম গলায় বলে সব সময়তো এক অবস্থা থাকে না রে কুট্টুস। আমিতো খুব বিপদে আছি একা একা। এদিকে আমার হুলো সাহেবও নেই কি করি বুঝতে পারছি না হয়তো প্রসব করার পর না খেয়েই মরে যাবনে! যাক তুই যেহেতু খুব মহব্বত করে এসেছিস, তবে আমার একটা অনুরোধ রক্ষা করবি। আমি তোদের আর কিছুই করব না। মনে করবি এখন থেকে তুই আমার দোস্ত। কুকুর কেতো কখনো বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ ঐ ভুকভুক  বড় প্রাণী, তারপর সে আমাদের চোদ্দগুষ্টির শত্রু। অনেকেই  আপোষ করে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বড় এবং খুব শক্তিশালী তাই অহঙ্কারের শেষ নেই। কাউকে পাত্তাই দেয় না। কথা দিয়েও রাখে না, যা তাই থাকে। শুনিস না মানুষেও বলে কুত্তার লেজ সোজা হয় না। এর পর বিড়াল বউ বলে আমি যা বলি কান পেতে শুনে নে। ভুকভুক ঘুণাক্ষরেও যেনো টের না পায় আমি যে এখানে আছি। আর আমার হুলো সাহেবও যেনো না জানে আমি এখানে তোর সাহায্যে আছি। কারণ ঐ হুলোটা খুব পাঁজি এবং বদমেজাজি। তোদের দেখলেই ঘাড় মটকে কড়মড় করে খেয়ে ফেলবে তখন আমার করার কিছুই থাকবে না। এসব শুনে কুট্টুস বলে, ‘না না মাসি মা, কেউ জানবে না আমাদের দু’জনের এমন চুক্তির কথা। এবার বিড়ালটি বলে মেসের অনেক উৎশিষ্ট খাবার পিছনে ফেলে দেয় সেগুলি তুই রাতে নিয়ে এসে আমাকে কিছু দিয়ে বাকি সব তোরা দু’জন খাবি কোনো সমস্যা হবে না। তারপর আমার বাচ্চা হলে সেগুলি বড় হওয়ার সাথেই আমি লোকালয়ে চলে যাব। আর তোরা দু’জন বাচ্চা নিয়ে এখানেই বসবাস করতে পারবি। আমাদের এই মধুর সম্পর্ক সারা জীবনই থাকবে। এবার কুট্টুস খুশি হয়ে বলে এই জন্যইতো তোমাকে ভক্তি করে মাসিমা ডাকি। এই বলে কুট্টুস নাচতে নাচতে বাসায় চলে যায়।

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মো. আশতাব হোসেন
গ্রাম: ইসলামাবাদ, ডাকঘর: বলদিয়া; ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *