রোকেয়া ছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি ডিসি বা জজ ছিলেন না। সুফিয়া কামালকে বলা হয় ‘জননী সাহসিকা’। তিনি এসপি বা ইউএনও হতে পারেননি। রোকেয়া, সুফিয়া কামালরা উপরিউক্ত পদধারিণী হলে তাঁদের মনোজাগতিক পরিচয় স্পষ্ট হতো।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলজুড়ে বাংলার নারীরা এখন অগ্রগামী ভূমিকায় আছে। কর্মক্ষেত্রে তারা দুর্দান্ত, দুর্মর। তবু আমার এক দুষ্টু সহপাঠা কর্মক্ষেত্রে নারী সম্পর্কে তার মূল্যায়ন করে এভাবে :
“মাধবীরা হেসে এসেই বলে- যাই!”
তার ওপর নারী জাতির লানত পড়ুক।
নারীত্বে মমতাময়ী মায়ের একটা স্পর্শ থাকা উচিত। সেটা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অনেক নারীর মাঝেই আমি দেখিনি। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় তারা আজকাল ‘স্যার’ ডাক শুনতে মরিয়া। বাংলার নারী পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বাইরে যেতে পারেনি। মেঘনাদের স্ত্রী প্রমিলা ইউরোপীয় ভাবধারায় পুষ্ট হলেও মাইকেল বাঙালিয়ানার বাইরে যেতে পারেননি :
“রাবণ শ্বশুর মম
মেঘনাদ স্বামী
আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে?”
একদিকে স্বামীর বীরত্ব অন্যদিকে শ্বশুরের আশ্রয় ছিল প্রমিলার নির্ভয়ের কারণ। বাংলার রাজনীতির আকাশে যে দুটি ধ্রুবতারা জ্বলছে তাঁদের মাথার ওপরেও আছে পুরুষের ছায়া কিংবা কায়া!
রোকেয়া স্বামী শব্দের পরিবর্তে অর্ধাঙ্গ শব্দ ব্যবহারের কথা বলেছিলেন। একালে ‘স্যার’ শব্দের পরিবর্তিত কী রূপ হতে পারে বলে মনে করেন? আমি চাই নারী পুরষতান্ত্রিক শব্দগুলো বর্জন করে নিজেরা জ্বলে উঠুক অপার বিস্ময়ে।
বি.দ্র. আমার সেই সহপাঠা বন্ধু বলে রোকেয়া যদি এখন এসে বাংলার নারী জাগরণের এইরূপ দেখতেন তিনি নিশ্চিত বলতেন :
“তোমরা আমাদের ভুলে যাও
পায়ে ধরি ভুলে যাও!”
বন্ধুর ওপর দ্বিতীয়বার উভয়লিঙ্গের লানত!