প্রথম পাতা » জীবনযাপন » ঘোড়ারোগ

ঘোড়ারোগ

ambition

তীব্র গরমে ভয়ানক স্বাস্থ্য সংকটে আমাদের শিশুরা, বৃদ্ধরা। কেমন আছে যুবসমাজ? বর্তমানে মৃত্যুর হার বেশি এই প্রজন্মের মধ্যে। সংসার-সমাজ, আর্থ-সামাজিক চাপে দিশেহারা যুবসমাজ। সঙ্গতকারণেই স্ট্রোকে মৃত্যুহার বেশি যুব সম্প্রদায়ের জীবনে। গত কয়েক মাসে পরিচিত অপরিচিত মিলে কতজনকে অকালে চলে যেতে দেখলাম! ছোটো ছোটো দুধের বাচ্চাগুলো রেখে তারা চলে গেলেন অনন্তের পথে। একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি হলো চলে-যাওয়া লোকটির প্রিয়তমা স্ত্রী, সন্তানদের জন্য!

আমাদের তরুণ প্রজন্ম চলে গেছে নষ্টের শেষ সীমায়। তারা যে কী ভয়ঙ্কররূপে বিনষ্ট হচ্ছে তার খবর প্রতিদিন পাচ্ছি। এই প্রজন্মকে নিয়েই তো চলছি তাই বুঝতে পারছি সামনে কেমন ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। এদের পড়ালেখা নেই, পরীক্ষা নেই, পাশের চিন্তা নেই, জীবনে সুস্থ বিনোদন বলেও কিছু নেই। এন্ড্রয়েড মোবাইল এদের চিন্তার জগত, চরিত্রবৈশিষ্ট্য সব খেয়ে ফেলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন আর যেতে হয় না। কোচিং এর ‘ভাইয়া’ সম্প্রদায় এদের জীবনের পাথেয় এবং আইডল। দেশের কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এই প্রজন্মকে পাবেন না। এদের মাঠেও পাবেন না। এদের জন্য পরিকল্পিত কোনো মাঠও যে আছে তা-ও না। এদের পাবেন গলির চিপায়, লেনের লনে, সরণির মোড়ে, রূপসীর রেলিং এ, প্রেয়সীর বাস্তুভিটার সামনে, চায়ের দোকানে, গার্লস স্কুলের সামনে, কলেজের পেছনে, কিশোর গ্যাঙ এর গ্যাঞ্জামে, চিলেকোঠার ওপরে, লাল নীল ভিসিডিতে- দেশি-বিদেশির কালেকশনে! মোবাইলের কল্যাণে শিক্ষার আলো অনলাইন ছেড়ে , বাথটাবে, টয়লেটে একেবারে কাঁথার নিচেও। এদের রাত হয় ভোরে, সকাল হয় ১২ টায়, দুপুর ২ টায় সকালের নাস্তা! এরা আঁধারে নয়, আলোতে ভয় পায়! এদের ধর্ম নাই, কর্মও নাই। আগামীর বাংলাদেশকে আজকের হাফপ্যান্ট ও বালাপার্টি নেতৃত্ব দেবে পুরাতন আমাশয়ের রোগীর মতন! না, আমি নিজ বয়সের মোহে তরুণ প্রজন্মকে অবজ্ঞা করছি না। আপনারা মিলিয়ে দেখুন। সত্যতা পাবেন। কোনো বেয়াদবি দেখলে একবার শাসনের স্বরে কথা বলে দেখবেন- আপনার শিক্ষাসফর কমপ্লিট হবে।

বাজারের কোন খাদ্যটা নিরাপদ? আপনার আমার শিশুর জন্য জেনেও প্রতিদিন কত বিষ কিনে আনছি! বলার জায়গা নেই, দুঃখ কাকে বলব? কে আছে আমাদের? শখ করে আম আনি, লিচু আনি, তরমুজ আনি! চোখের সামনে ছেলেগুলো বিষ খাচ্ছে! বিচার দিব কার কাছে? কার কাছে যাব? কোথায় যাব?

দেশের অলিতে গলিতে সেক্রেটারি, সভাপতির ছড়াছড়ি। কেবল শিক্ষক নেই, গবেষক নেই, রাজনীতিক নেই, নৈয়ায়িক নেই, বিচারক নেই, বিবেক নেই, মানুষও নেই! এতো এতো সেক্রেটারি, সভাপতি লইয়া আমরা কী করিব? আমাদের দরকার ছিল কর্মী, দরকার ছিল ধ্যানী। অথচ চারিদিকে শঠতা, ভন্ডামি, নখরামি, ইতরামির বিষবাষ্পের ছড়াছড়ি! শোবিজ অঙ্গন হয়েছে রাজনীতিময়, রাজনীতির ময়দান যাত্রার মঞ্চ। সবাই আরেকজনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। নিজের কাজটা কেউ ভালোভাবে করছে না কেন? অর্ধেক নডি, অর্ধেক গৃহিণী নিয়ে চলছি কেন আমরা? পুরোপুরি নিবেদিতপ্রাণ কর্মী কোথায় আমাদের?

যারই টাকা আছে এসি ডিসি ওসি কিনে ফেলছে! এতো তাপ তো এদেশে থাকার কথা ছিল না! এমন আগে ছিল না তো! প্রতিটা গ্রামে, মহল্লায়, পাড়ায় হাজার হাজার অটোরিক্সা, ভ্যান চলছে। এতগুলো যানবাহনের জন্য প্রয়োজন প্রচুর বিদ্যুৎ। বাঙালি এখন আর হাঁটতে পারে না। অবস্থা দেখে মনে হয়- সাইকেল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে! গ্রামগুলিকে শহর বানাতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে। গ্রামে এখন ফুটানিরোগ বাসা বেঁধেছে। গেদা সব ধান বিক্রি করে পাকা পায়খানা বানিয়েছে! বাড়ির লোকজন এখন হাগিবে কী খাইয়া তাহাই লইয়া দরবার করিতেছে!

যত্রতত্র এসির ব্যবহার বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ মনে করি। অনিয়ন্ত্রিত অটোরিক্সার চলাচল বিদ্যুৎ ঘাটতির ভয়াবহ কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া চোরে চোরে বেয়াইয়ালারা তো আছেই!

আপনি যতই বলেন বেহেশতে আছি কিংবা কানাডায় আছি, আমরা আসলে এখনো বাংলাদেশেই আছি। কেবল ফুটানিগিরি করে দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষকে টেনে আনছি। এ রোগের নাম ঘোড়ারোগ।

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *