প্রথম পাতা » জীবনযাপন » বনমালী, তুমি পরজনমে হইও ড্রাইভার…!

বনমালী, তুমি পরজনমে হইও ড্রাইভার…!

Syed Abed Ali Jibon

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ ! মনে আছে আপনাদের? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যোগ্য মালিকের গাড়ি চালক আবদুল মালেক শতকোটি টাকার সম্পত্তি ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ হাজির হয়েছিলেন গণমাধ্যমে। প্রচলিত আইনে তার সাজা হয়েছিল ৩০ বছর। তবে তাকে জেলে থাকতে হবে ১৫ বছর। তিনি এখনো জেলে আছেন কি না জানি না।

একজন ড্রাইভার কী উপায়ে শতকোটি টাকার মালিক হতে পারে তা জানে কেবল মালেকের মালিক ! ঘটনাটি তখন বেশ হৈচৈ ফেলেছিল। এরপর বুড়িগঙ্গায় কতো জল গড়াল ! মালেকরা চাপা পড়লো হাজার কোটি টাকার লুটপাটের নিচে। তারপর এলো বেনজির, মতিউর, ফয়সাল, এনামুল, ইজ্জতউল্লাসহ আরো কতো হাজার কোটি টাকার মালিকেরা ! হাজার কোটির নিচে হারিয়ে গেছে শতকোটির মালেকের নাম।

দেশের তরুণরা যখন আন্দোলন করছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তখনই বেরিয়ে এলো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মতো এক খবর খোদ পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই জড়িত প্রশ্নফাঁসের সাথে ! তরুণদের একটা আশার বাতি জ্বলছিল আগারগাঁওয়ে। গতকালের খবরে সেটিও নিষ্প্রভ হলো এই ভয়াবহ সংবাদে। প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। এই সৈয়দ আবার সুবে বাংলার হাঁটুরে সৈয়দ নয়, তার পূর্বপুরুষরা সম্ভবত এসেছিলেন আরব্য উপকূল থেকে। সেই অর্থে তিনি শক্তিশালী সৈয়দ বংশের সন্তান। লেখার সুবিধার্থে তাকে সৈদালি বলে সম্বোধন করছি। গুস্তাখি মাফ করবেন।

সৈদালির যোগ্য উত্তরসূরী, তার বীজের ধারক সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম একটি দলের ঢাকা মহানগরের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ! সে পড়ে ইনডিপেনডেন্ট ভার্সিটিতে। এই ছেলেটি শিলিগুঁড়ির বিখ্যাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েছে। ঠিক কবে কখন কোথায় সে রাজপথে ছাত্র রাজনীতির মিছিলে গিয়েছিল সে কথা কেউ জানে না। অবশ্য সৈদালির পোলাদের মিছিলে যাওয়া লাগে না। আরব্য রজনীর মতো তারা এমনিতেই বৈদেশ থাকলেও দলে পদ পদবি পায়। সৈদালিদের জন্য দেশের অনেক কিছুই রিজার্ভড থাকে। সৈদালিদের ইচ্ছা হলেই তারা তা নিতে পারে। সৈদালির ফেসবুক পেইজ ঘুরে দেখলে আপনি ভিঁড়মি খাবেন। বাদশাহ হারুণের চেয়ে তার ক্ষমতা কোনো অংশে কম নয়। বহু দেশীয় সিংহাম তার ভাই বেরাদর হিসেবে আছেন বহাল তবিয়তে। সৈদালির পোলা এলাকায় মানবতার ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালা হলেও দুই বাপপুতের একজনও কিন্তু লেইস ফিতার কারবার করে না। এই ফেরিওয়ালাদের ব্যবসা কুয়াকাটার হোটেল মোটেল রিসোর্টে। সৈদালির পোলার ভাবসাব দেখলে মনে হবে সে ড্রাইভারের পোলা না, সে টাটা কোম্পানির মালিকের ছেলে! বাপের ধনে পোদ্দারি করে সে এলাকায় অনেকের ‘পিয় অভিবাবক’ বনে গেছে।

সৈদালি পোলার কাছে আদর্শ পিতা। সৈদালি ওয়াক্ত নামাজ মিস করে না। সে নিজেই মসজিদ করে দিয়েছে একটা। বহু দান খয়রাত করে এলাকায় হাজি মুহসিন হিসেবে পরিচিত। ডাসার উপজেলা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন : ডাসার জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে তিনি দুইবার ভাববেন না। ডাসাবাসী এরকম সৎ, নির্ভীক, কর্মঠ ও ডাসাপ্রেমিক চেয়ারম্যান পেয়ে উৎফুল্ল।

সৈদালির নুরানি চেহারায় লোকজনের মায়া লাগে। পুত্র সিয়ামের মায়া সবচেয়ে বেশি৷ পিতা কী ঝকমারি জীবন দিয়েছে একটা। এই দেশের কয়জন অফিসার এরকম পারে যেমনটা পেরেছে ড্রাইভার সৈদালি? এরকম ফেরেশতার মতো বাপ আছে কয়জনের এইদেশে? দেশের প্রথম শ্রেণির কতো অফিসারের নুন আনতে পানতা ফুরায় ! অথচ কী রাজকীয় জীবন তাদের। আসলে সবই সৈয়দ বংশের রহমত আর বরকত। সৈদালি এজন্যই নামাজ ছাড়ে না।

প্রশ্মফাঁস করে কতো সাধারণ ছেলেদের পুটু মেরে দিয়েছে সৈদালি তার হিসাব জানে না। সৈদালি জানে না তার এহেন কর্মে কতো মায়ের চোখের জল, নাকের জল একাকার হয়েছে ! কতো সন্তানের বাবা অঝোরে কেঁদেছে ছেলের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায়। সৈদালির পোলা জানে না তার বাবার কারণে দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে লুণ্ঠিত। সে জানে না কী করে তার বাপ দিনের পর দিন একটি প্রতিষ্ঠানকে রেপ করেছে। সৈদালির পোলা দেখেছে জীবনের জৌলস আর বাপের নামাজ কাজা না হওয়া। সে দেখে নাই হাজারো মেধাবী তরুণের হৃদয়ার্তি ! বাইশটা বছর ঢাকায় থেকে হোটেল শেরাটনের বারান্দা দেখি নাই। সৈদালির পোলা প্রতিদিন সেখানে যায় সন্ধ্যার নাস্তা করতে ! সৈদালির পোলা স্ট্যাটাস দেয় তার বাবা মেহনতি মানুষ ! হারামজাদা, একদিনও কি জিজ্ঞেস করেছিস : আব্বা, তুমি ড্রাইভার হয়ে এতো টাকা কামাইছো কেমনে? তোর বাপ কি গাড়ি চালানোর পাশাপাশি * দিতো?

যাই বলেন, বাংলাদেশে সৈদালিরাই সফল। পুত্রের কাছে সফল, কন্যার কাছে সফল, স্ত্রীর কাছে সফল। সবচেয়ে বড় সফল এদেশের জনগণের কাছে। সৈদালিদের জয় হোক। পরজনমে বেনজির, মতিউর না হতে পারি, অন্তত সৈদালি যেন হৈতে পারি খিজ দিয়া দোয়া করেন।

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *