সেদিন বাজারে গিয়েছি। বৌ বলে দিয়েছে দেখে-শুনে ভালো পানির ভালো মাছ নিয়া আসবা। ‘ভালো পানির ভালো মাছ’ আমি কোনোদিনই কিনতে পারি নাই। ভবিষ্যতে পারব বলেও মনে হয় না। একটা বড় মাছ কিনব মনস্থির করলাম। বড় ছেলেটা বড় মাছের মাথা খুব পছন্দ করে।
মাছের বাজারে গিয়ে একটা বড় বোয়াল মাছ দেখে থ মেরে গেলাম! এই মাছ বাড়িতে নিয়ে গেলে পোলাপাইন আনন্দ পাবে নিশ্চিত। পকেটে হাত দিলাম। কতো? বিক্রেতা পানখাওয়া মুখে কী বলল ঠিক বুঝলাম না। পকেটে হাত দিলাম। অন্ধকারেও বাম হাতের দুতিনটি আঙুল জানান দিলো নোট বেশি নাই। এই মাছের আশা বাদ দেও বাপু। তবু আশা। আবার জিজ্ঞাসা। শুনলাম মাছ বিক্রি হয়ে গেছে! আল্লাহ বাঁচাইছে। দাম কতো? শুনে চমকে উঠলাম- খাইছে আমারে! পাঁচ হাজার টাকায় একটা বোয়াল? সারা মাস কি ওলকচু খায়া পার করমু? আমি ‘ভালো পানির ভালো মাছ’ খোঁজার বাহানা নিয়ে কেটে পড়লাম। দেখলাম : আমার পরিচিত একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মাছটা কিনেছে। এই লোকটি নব্য জমিদারি স্টাইলে চলে। সারাদিন সে এরে ওরে ‘স্যার’ ডাকে। কিন্তু চারটার পর থেকে সে সবার ‘স্যার’! ধনে, মানে, অর্থে সে একজন আধুনিক জমিদারই বটে। বাজারের বড় বোয়াল তার বাড়িতেই শোভা পায়। আমাদের মতো ছা-পোষা ফার্স্ট ক্লাস অফিসারদের ‘ভালো মাছ’ খুঁজতে খুঁজতেই দিন গুজরান। আমাদের প্রিয় মাছ মলা-ঢেলা-পুঁটি, আর প্রিয় মাস ফেব্রুয়ারি। সব মাস যদি ২৮ দিনে হতো!!! অপেক্ষা! আহা অপেক্ষা!!!
আসপিয়া পুলিশের চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু তার নিজের বাড়ি নেই বলে স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়। এদেশে বহু আসপিয়াদেরই মাথাগুঁজার ঠাঁই নেই। ঢাকায় এক লক্ষ মানুষ আজ রাতেও রাস্তায়, ফুটপাতে ঘুমাবে। অথচ এদেশে আলাদিনের চেরাগের জোরে কত মানুষ আঙুল ফুলে ‘বটগাছ’ হয়ে ওঠে রাতারাতি। কতোশত আসপিয়া এদেশে প্রতিদিন অপেক্ষা করে থাকে দিন বদলের, নিশ্চিত আবাসের।
বি.দ্র. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আসপিয়ার সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছে শুনেছি। তাকে সরকারি জায়গায় বাসস্থান ও চাকরির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।