বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচন আদতে লোক দেখানো নির্বাচন হয়েছে। এভাবে লোক দেখানো নির্বাচন করে যারা ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় থাকতে গেলে পুলিশকে ব্যবহার করা ছাড়া তাদের হাতে আর কোন উপায় ছিল না। প্রশাসন এবং পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার বাংলাদেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
গণ আন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নজিরবিহীনভাবে পুলিশ ছাড়া দিন কাটাচ্ছে বাংলাদেশ। এ যেন পুলিশহীন রাষ্ট্র।
থানাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে, আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোথাও কাজ করেনি পুলিশ। বাংলাদেশ যেন রাতারাতি পুলিশি রাষ্ট্র থেকে পুলিশহীন রাষ্ট্র হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা হতে থাকে। নির্বিচারে আক্রমণ হতে থাকে থানায়। এতে অনেক পুলিশ নিহত হয় এবং আহত হয় প্রচুর পরিমাণ পুলিশ সদস্য।
এসব হামলায় বহুসংখ্যক পুলিশ হতাহত হলে অন্যরা নিরাপদে সরে যেতে থাকেন। এতে করে এমন নজিরবিহীন অবস্থা তৈরি হয়েছ বলে জানিয়েছন পুলিশ কর্মকর্তারা।
জীবন বাঁচাতে আত্মগোপন করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ বেশিরভাগ সদস্য। যে কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে থানাগুলো ছিল পুলিশ শূন্য ও অরক্ষিত। থানায় ফিরতে জীবনের নিরাপত্তা চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। এই দাবিতে কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন তারা।
এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা নিরাপত্তা শঙ্কায় পরিবারসহ আত্মীয়-পরিজনদের বাড়ি গিয়ে উঠেছেন। পুলিশের আবাসিক এলাকার বাসা ছেড়েছেন অনেক কর্মকর্তা ও সদস্য।
ঢাকায় পুলিশ সদস্যদের অনেকে বিভিন্ন থানা থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে জড়ো হয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সদস্যরা জড়ো হয়ে পুলিশ লাইনে অবস্থান করছেন। কেউ অন্য জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে এতদিনে ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের এই অবস্থার জন্য শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়ী করছেন তারা।
একজন পিবিআই সদস্য তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:
”নির্দেশদাতা সিনিয়ররা মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের মৃত্যুর মুখে দাঁড় করিয়ে যার যার মত আত্মগোপনে চলে যায়৷ দয়া করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করবেন না৷ এরা হুকুমের গোলাম মাত্র। যারা হুকুম দিয়ে কাজগুলো করিয়েছেন তাদের খুঁজে বের করুন। যদি কোনো পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে কাজ করে থাকে তাকে বিচারের আওতায় আনুন। বাহিনীর সকল সদস্য তাতে সাধুবাদ জানাবে৷”
রাজনৈতিক অপব্যবহার পুলিশকে আজকে এই অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে।