পৃথিবী একটা নাট্য মঞ্চ। যেখানে মঞ্চস্থ হতে পারে হাসি, কান্না, চিৎকার, নিরবতা, আসা, যাওয়া, ভাংগা, গড়া, মিলন, বিচ্ছিন্ন, উন্নয়ন, ধ্বংস, ইত্যাদি ইত্যাদি। যার মধ্যে দুটি দিক থাকে — ভালো আর মন্দ। পৃথিবী নাট্য মঞ্চ হলেও মানুষের কল্যাণে, মানুষের গতি বিধি নিয়ন্ত্রণে আইন বা বিধিমালা আছে।
এই সব বিধিমালা মেনে চলার দায়িত্ব আমাদের। এসব বিধিবিধান তৈরির পর থেকেই মানুষ পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিতে থাকে। ব্যাখ্যার কোনো শেষ থাকে না। দলে দলে ভাগ হয়ে যায় পর্যালোচনা। ভুল ব্যাখ্যার পিছনেও কম মানুষ দৌড়ায় না। তারা নিজেরাই বিশাল পন্ডিত বনে খেতা কম্বল নিয়ে আরামে নিদ্রা দেয়।
যেখানে ধর্মীয় আইন রক্ষা পায়নি, ভেঙ্গে খান খান হয়েছে সেখানে অন্যান্য আইন, বেআইনী হতে বিলম্ব হয়নি।
কোনো আইনে কি লিখা আছে ছাত্র অন্যায় করলে মাস্টার কর্তৃক তাকে খাটাস মারার মতো মারধর করতে হবে? ছোট্ট সময়ে গল্প শুনতাম দাদি নানির মুখে।
অংকের মাস্টার সকালে মাঠে যেতেন গরু লাঙ্গল নিয়ে জমি চাষ করতে। বাড়ি ফেরার সময় মাস্টার সাহেবের মেজাজ থাকতো কড়া। তারপর গরু ঠিক ভাবে কথা শুনতো না। যদি বলতো : কুলু কুলু ডানে যা, গরু যেতো বাঁয়ে। গরুর এই অংক ভুল হওয়াতে, নামতা শেখাতে গরুকে বেদম প্রহার করতেন মাস্টার সাহেব।
বাড়ি ফিরে খাবার পছন্দ সই না হলে স্ত্রীকে সাত তালাক দিয়ে সতেরো ঘরের নামতা শেখাতেন। তাই দেখে কলে থাকা দুই বছরের মেয়ে ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে মাস্টার সাহেব তার হাত ধরে ছুঁড়ে মারে চাচির দিকে। চাচি বিড়বিড় করে মেয়েকে নিয়ে সাত পাঁচের নামতা পড়তে পড়তে ঘরে চলে যান।
মাস্টার সাহেব পায়জামা পরিধান করিয়া পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে রাস্তায় চলে এলেন। হাটতে হাটতে পাঞ্জাবি গায়ে লাগিয়ে স্কুলে চলে এলেন।
মাঠ থেকে শুরু হওয়া মিলিটারি মেজাজ এখন প্রাইমারী স্কুলে।
গত সপ্তাহে একটা ভিডিও দেখে গা শিহরিত হয়ে উঠেছিল। মাদ্রাসা শিক্ষক কি ভাবে তার ছাত্রকে পেটালেন। ছাত্র মারার তো একটা তাল থাকে, একটা সুর থাকে, একটা ছন্দ থাকে, একটা পদ্ধতি থাকে। সেদিনের মারার মধ্যে কোনো কিছুই ছিলো না।
একটা মঞ্চে উঠে আমি নাচলে দর্শকরা নিশ্চয় ডিম ও চেয়ার নিক্ষেপ করবে গায়ে। কারণ, আমার নাচ কোনো নাচই না। সেদিন মাদ্রাসা শিক্ষক যে ভাবে তার ছাত্রটিকে পেটালেন। সেটা কোনো পেটানোই না, গোয়ার গোবিন্দ। গোয়ার গোবিন্দ শিক্ষকের পেটানোর মধ্যে ছিল না কোনো ছন্দ, ছিল না কোনো তালের পদ্ধতি। এই শিক্ষকের প্রতি দেশের মানুষ পচা ডিম ছুঁড়ে মেরেছে, চেয়ার নিক্ষেপ করেছে, ভর্ৎসনা জানিয়েছে।
যে শিক্ষক ড্রাগ পান না করেও মাতাল হতে পারেন, হেদায়েত জ্ঞান হারাতে পারেন, হুশ হারিয়ে বেহুঁশ হতে পারেন সেই শিক্ষ জাতির মেরুদণ্ড তো দূরের কথা লোম হওয়ারও যোগ্যতা থাকে না।
ছাত্র নির্যাতন শুধু মাদ্রাসায় হয়েছে তা কিন্তু নয়। প্রাইমারী, হাইস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র নির্যাতনের কাহিনী মাঝে মধ্যে সংবাদ শিরোনাম হয়। এমনকি গৃহ শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র নির্যাতনের সংবাদ শুনেছি। তবে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র নির্যাতন বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয় না। কিছু শৃঙ্খলা ভঙ্গ শিক্ষক বিশৃঙ্খলার মধ্যে প্রবেশ করার ফলে উলাট পালাট চাপের বোঝা বহন করতে হয় অনেকের।
যারা মাদ্রাসা বিরোধী তারা এরকম সুযোগ পেলে পুরো মাদ্রাসা তুলে ফেলতে চায়! তারা যেমন চায় না অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়, অথবা পাপীকে ঘৃণা কর, প্রতিষ্ঠানকে নয়। তখন তারা এ বাক্যটাও ভুলে যায়। মাদ্রাসায় যদি কোনো ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে সেখানে মাদ্রাসার আইন বা ইসলামের আইন দায়ী নয়! বিকৃতিহীন ইসলাম কখনোই সমাজে অশান্তি আনতে পারে না, মানুষকে কষ্ট দিতে পারে না। যদি কেউ ভুল পথে হাঁটে তবে তার জন্য দায়ী সে বা সেই পথের দল।
মূলত মানুষের কল্যাণের জন্য যে আইন করা হয় সেই আইন বিভিন্নভাবে বিভিন্নজনে বিকৃতি ঘটায় বা ব্যবহার করে। তখনই উল্টাপাল্টা কথা শুরু হয়, সমাজে অশান্তি শুরু হয়। আইনের ব্যবহার সঠিক চাই।