প্রথম পাতা » মতামত » লেখক-পাঠকের মিলনমেলা

লেখক-পাঠকের মিলনমেলা

Book Fair

বাংলা ভাষা যেমন বাঙালীদের প্রাণের ভাষা। মায়ের মুখের মিষ্ট মধুর ভাষা। তেমন বাঙালীদের
দেহের শিরা-উপশিরার সমস্ত রক্তকণিকায় ওতো-প্রোতো ভাবে যে মিশে আছে বাঙালীদের বাংলা সাহিত্য। আর বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির যে উৎসব মেলা তার নাম বইমেলা।

কেননা বাঙালীদের প্রাণের বইমেলা-টিই হলো বাংলা ভাষা বা- বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে বইমেলা ঢাকা সোহরাওয়ার্দী   উদ্যনটি হলো এমন এক ময়দান বা-জায়গা। যে জায়গাটি দেশ-বিদেশের সকল জ্ঞানী-গুণী প্রবীণ জোয়ান উদীয়মান কবি- লেখক কিম্বা পাঠক ভক্তদের একত্রিত হওয়ার একটা মিলন মেলা।
আর সেজন্য….

বইমেলার পাশাপাশি যদি কবি সাহিত্যিক লেখক পাঠকের মিলন মেলা বলি সেক্ষেত্রেও অযৌক্তিক হবে বলে আমার মনে হয় না। কেননা…

বলা যায়,প্রতিটা কবি-লেখক পাঠক পুরো একটি বছর চাতক পাখির মতো সুদীর্ঘ অপেক্ষায় থাকে বইমেলার জন্য। মনে মনে ভাবে..কবে শুরু হবে নতুন বছর? কবে আসবে বইমেলার সে প্রতিক্ষিত ফেব্রুয়ারী মাস?
যখন আবার আমরা সকল উইপোকা, বই প্রেমি, সাহিত্য অনুরাগী কবি- লেখক পাঠক দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাবো বইমেলার কাংক্ষিত সেই মিলন মেলায়। যেখানে গেলে হয়তো দেখা হবে কোনো কবি- লেখকের শুভাকাঙ্ক্ষী পাঠক ভক্তের সাথে। অথবা কোনো ভক্ত পাঠকের অতি প্রিয় লেখকের সাথে। যে পাঠক তার প্রিয় লেখকটির একটা অটোগ্রাফ পাওয়ার জন্য বহুদিন প্রতিক্ষায় ছিল। বইমেলায় সে তার সেই প্রিয় কবি কিম্বা লেখককে সামনাসামনি একটু দেখতে পাবে। তার মুখের দুই-চারটি কথা শুনতে পারবে। একটা অটোগ্রাফ নিতে পারবে। সেই আশাতেই সে ছুটে এসেছে বহুদূর থেকে। যেখানে সকল বইপোকা পাঠক লেখকদের সাথে হবে দেখা। হবে নিত্য নতুন বই নিয়ে নানান কথা। হবে একে- অন্যের সাথে সাহিত্য বিষয় নিয়ে মত- বিনিময়।

ফেব্রুয়ারী মাসের বইমেলা নিয়ে লিখতে গিয়ে আবার আমার মনে পড়ে গেলো বাংলা ভাষা-আন্দোলনের রক্ত ঝরা দিনের কথা। সেই, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর ৮ই ফাল্গুন ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা। ভাষা আন্দোলনের হৃদয়বিদারক অবিস্মরণীয় সে দিনটির কথা। যেদিন আমার দেশের সব বাঙালী ভাইয়েরা। নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মায়ের মুখের বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল এই বাংলার জমিনে। আর এজন্যই উপরে আগেই বলেছি যে। বাঙালীদের প্রাণের বইমেলা-টি হলো বাংলা ভাষা বা বাঙালীদের বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির ঐতিহ্য। কেননা….

এই বইমেলার নতুন নতুন বইয়ের মাধ্যমে প্রতিটা বাঙালী নতুন প্রবীণ কবি-লেখকেরা তাদের নিজেদের বাংলা মাতৃ ভাষায় নানান ছড়া, কবিতা, নাটক, ছোট গল্প, উপন্যাস, নিবন্ধ, প্রবন্ধ আরো নানান লেখনীর মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদের মনের নিজস্ব ভাব প্রকাশ করে।

প্রকাশ করে হাজারো পাঠকদের মনের না বলা সব কথা গুলো। যেসব লেখনীর মধ্যে কিছুটা অলৌকিকতা বা- কাল্পনিক থাকলেও। তাতে অধিকাংশ থাকে বাস্তবতা মিশে। তাদের সেসব লেখনীর মধ্যে ফুটে ওঠে মানুষ, মাটি দেশ, প্রকৃতি ফুল, পাখি জীবনের বাস্তবতা। সেটা হউক দেশের রাজনৈতিক কিম্বা খেটে খাওয়া হতদরিদ্র
মানুষের বাস্তবিক কর্ম জীববের চিত্র । মানুষের বিবেক-বুদ্ধির উন্নতি কিম্বা অবনতি অবক্ষয়কে তুলে ধরা দিকগুলো।মানুষের ন্যায়, অন্যায়, কাজ  প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিম্বা প্রেম ভালোবাসা বিরহ, বিচ্ছেদ নিয়ে।

মূলত সার- কথা হলো এই যে, একজন সাহসী কলম যোদ্ধা কবি-লেখকের লেখনীতে যেমন থাকবে মহান স্রষ্টার সৃষ্টির কথা। থাকবে মানুষের জীবন বোধের কথা। থাকবে শোষিত জনতার পক্ষে শাসকের শোষণ অত্যাচার নির্যাতনের গর্জন তুলা বলিষ্ঠ হস্তের দ্রোহী কথা। আরো থাকবে বঞ্চিত সকল অসহায় মানুষের প্রাপ্য অধিকারের কথা। থাকবে সমাজের মন্দ  দিকগুলো তুলে ধরে ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার বা- পরিবর্তনের সঠিক দিকনির্দেশনা।

এককথায় অন্ধকার দূর করে এ সমাজ, দেশ, বিশ্ব, সকল দেশের মানুষের জীবন আলোকিত করার কথা। থাকবে সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ধর্ম, অধর্মের কথা। কেননা, মনুষ্য জীবনের  এসব কিছুকে নিয়েই যে আমাদের সকলের পথচলা। আর তাই আমরা বাঙালী হিসেবে সাহিত্যের মধ্যে এসব কিছুকে ঘিরেই আমাদের বইমেলা। আমি মনে করি উপরোল্লিখিত নানান বিষয় যেমন একজন কবি- লেখক তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে তুলে ধরতে
চাই। ঠিক তেমনি একজন পাঠকও লেখকের লেখা বইয়ের মধ্যে এমনটাই আশা করে।৷ যেটা পুরো বাংলার বাঙালীদের বাংলা ভাষার সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্পর এক ঐতিহ্য ।

** ঝিকরগাছা যশোর থেকে।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *