প্রথম পাতা » গল্প » রক্ত লাল ফুল

রক্ত লাল ফুল

helicopter shooting

ঐশীদের বাসাটা দোতলায়। মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে। রাস্তার পাশে হওয়ায় সারাক্ষণ বাসা থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা যায়। ঐশী আর ওর ছোট ভাই রাকিব সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ইংরেজি ভার্সনে পড়ে। ঐশী ক্লাস এইটে আর রাকিব ক্লাস সিক্সে।

রাকিব মোবাইলে গেমস খেলতে খুব পছন্দ করে। স্কুল থেকে ফিরে এসে প্রতিদিন বিকেলে ব্যালকনিতে পেতে রাখা চেয়ারটাতে বসে গেমস খেলে। আর ঐশী ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করে। সে ক্রেয়নে, জলরংয়ে, তেলরংয়ে এঁকে যায় বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের অপরূপ সব দৃশ্য। ঐশী নিজের দেশ বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসে। ছবি আঁকতে আঁকতে সে গান গায়:

সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তে তুমি,
ও আমার বাংলাদেশ, প্রিয় জন্মভূমি।

জুলাই মাস। একদিন স্কুল থেকে ফিরে ঐশী ও রাকিব ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ তারা শুনতে পেলো রাস্তায় কোলাহলের শব্দ। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র মিছিল নিয়ে যাচ্ছে আর স্লোগান দিচ্ছে:

কোটা না মেধা
মেধা,মেধা।

ঐশী আর রাকিব তাকিয়ে তাকিয়ে মিছিলটা চলে যেতে দেখলো। পরের দিন ক্লাসে রাশেদ স্যার বললেন, দেশে এখন খুব গন্ডগোল হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের পরে এখন তাদের নাতিপুতিরাও বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা সুবিধা পাচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা। ফলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে।  তাই এসব সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা কোটা প্রথা বাতিল চাচ্ছে। কিন্তু সরকার নিজের স্বার্থ রক্ষায় ছাত্র ছাত্রীদের এই সকল ন্যায্য দাবি মানছে না। শুনে ঐশী খুব দুঃখ পেলো। ওঁরাও তো একদিন বড় হবে। তখন এই কোটা প্রথার খপ্পরে পড়ে ওরা বেকার হয়ে রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াবে। সামনে থাকবে অন্ধকার ভবিষ্যৎ। ঐশীর মনে আতঙ্ক আর ভাবনা জেগে উঠলো।

এলো ১৬ জুলাই। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে মারা গেলো। দুদিন পরেই মারা গেলো মীর মুগ্ধ। নিষ্ঠুর ও বেপরোয়া সরকার  দেশের মানুষকে, ছাত্র জনতাকে দলে দলে মারতে পুলিশ লেলিয়ে দিলো। প্রতিবাদে রাজপথে মানুষের ঢল নামলো। মানুষ ফুঁসে উঠলো । ঐশী ও আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না । সে তার বান্ধবীদের সাথে প্রতিবাদ জানাতে স্কুলের গেটে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। এক সময় অন্যান্য স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা দলে দলে এসে তাদের সাথে যোগ দিলো।

ছাত্রদের প্রতিবাদী স্লোগানে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠলো। ঐশীর ভাই রাকিব ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলো। এই সময় আকাশে নাক জাগালো একটা কালো রঙের হেলিকপ্টার। ওমা! কি ভয়ংকর ব্যাপার! হেলিকপ্টার থেকে ঐসব ছোট ছোট, বাচ্চা ছাত্রদের উপর গুলি চলতে থাকলো। গুলির আওয়াজে এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। চারিদিকে আর্তনাদ, হৈ -হট্টগোল।

হঠাৎ একটা গুলি এসে লাগলো রাকিবের কপালে। রাকিব আর্ত চিৎকার করে উঠল। কপালটা রক্তে লাল হয়ে গেলো। যেনো রক্ত লাল একটি ফুল। নিচ থেকে ঐশী শুনতে পেলো তার ভাইয়ের আর্তনাদ। সে দৌড়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে  বাসায় ঢুকলো। ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো বাবা মা কাঁদছে। রক্তের সাগরে যেনো ভাসছে রাকিব। ঐশী স্তব্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। দেশের মুক্তির জন্য রক্ত গঙ্গায় ভেসে এভাবে কতো ছাত্র জনতা প্রাণ দিলো । তারপর একদিন স্বৈরাচারের পতনের পর দেশ মুক্ত হলো । ঐশী ও তারমতো অনেক ছেলে মেয়েরা মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারলো । কিন্তু ঐশীর মনটা থেকে থেকেই রাকিবের জন্য হুহু করে কেঁদে ওঠে।
 
** খিলগাঁও, ঢাকা থেকে।

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *