প্রথম পাতা » মতামত » এমন দেশটি কোথাও খোঁজে পাবে নাকো তুমি…

এমন দেশটি কোথাও খোঁজে পাবে নাকো তুমি…

Bangladesh Public Service Commission

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও ‘বংশমর্যাদাপূর্ণ’ সম্প্রদায় আন্দোলনে নেমেছে। কোটাবিরোধী বা কোটাসংস্কার আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের ‘প্রত্যয়স্কিম’ বিরোধী আন্দোলন একসাথে চলছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে অবশ্য কারো মাথাব্যথা নেই। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় দুই চার ছয় মাস বন্ধ থাকলেও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই। কারণ স্মার্ট হওয়ার সাথে লেখাপড়ার কোনো সম্পর্ক নেই, টিকটকগুলো তো তাই প্রমাণ করেছে। আমাদের যতগুলো ভিশন এবং মিশন আছে তার সবই বাস্তবায়ন সম্ভব আর কোনোদিন যদি ওগুলো না-ও খোলে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন কিছু তৈরি করতে পারেনি যা না থাকলে বাংলার মানুষ একদিনও চলতে পারবে না। সুতরাং শিখা অনির্বাণ নিভিয়ে দিলেও পল্লি বিদ্যুতের বাম্পার ফলনে অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। জয় হো…!

আগুনে ঘি ঢালার মতো একটা তথ্য ফাঁস করেছে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের সাংবাদিক ইমরান। সাধারণ ছাত্ররা যখন ‘পড়ালেখা বাদ দিয়ে সময় নষ্ট করছে রাস্তায় রাস্তায়’ তখনই তারা আরেকটা হতাশার খবর পেলো। গত বারো বছর ধরে পিএসসির প্রশ্ন নিয়মিত ফাঁস করছে একটি শক্তিশালী চক্র। গত ৪৬ তম বিসিএসের প্রিলির প্রশ্নও তারা ফাঁস করেছে। সদ্য অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬ টি পদের বিপরীতে প্রশ্ন বিক্রি হয়েছে ৭০০ জনের কাছে ! বেইমান আর গাছে ধরে? প্রশ্ন কিনেও যখন নিরাপত্তা নাই সেদেশে আর কী আশা করা যায়? সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো জালিয়াতে জালিয়াতে হয়েছে কম্পিটিশন ! সাধারণ পোলাপান যে পরীক্ষা দিছে তা বেহুদা।

ওদিকে ছাগলনাইয়ার প্রান্তিক কৃষক ছলিমদ্দির পোলায় পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাপ তার কবেকার অন্ধকার আত্মার প্রেতাত্মা। কালির অক্ষর নাই বুকে। দাদা করে নাই মুক্তিযুদ্ধ। নানা ছিল কেরায়া নায়ের মাঝি। হাইকোর্টে কোটা হইল পুনঃস্থাপিত। দাদা আর নানারে ছলির পোলা একসাথে গালি দেয় : শালারা আছিল কই একাত্তরে?

দিন রাত লাইব্রেরি সেমিনার রিডিং রুম বুকড করে পড়ে মাইনুদ্দি। রাত তিনটায় যখন শুইবার যায় ছারপোকায় স্বাগত জানায় চুম্মা দিয়া। শিরশির করে ওঠে পীঠটা। আব্বায় ফোন দিছিল রাত এগারোটায়। প্রতিদিন একই প্রশ্ন বাবা চাকরির পরীক্ষা কবে? চাকরিটা মাইনুদ্দির চেয়ে তার বাপেরই দরকার আগে ! ছলিমের যক্ষ্মায় দিছে টান। ডাক্তারে কয় কিছু না। নিয়মিত চিকিৎসায় সাইরা যায়। বাপটা কাশে খুকখুক। মাঝে মাঝে রক্ত আসে মুখ ভইরা। চাকরিটা তার খুব দরকার। পোলার ভবিষ্যতটা দেখে মরতে চায় ছলিম। শান্তির একটা মরণও কি সে চাইতে পারে না? জীবনে তো ভোগ বিলাস চোখে দেখলো না। পোলাটা পড়ে ভালো জায়গায়। একটা ভালো চাকরিতো পেতেই পারে।

ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের লাস্ট গ্রেডের ছাত্র কাম পাতিনেতা লত্তু এবার কেমনে কেমনে মাস্টার্স শেষ করলো। বাপের টাকাপয়সা অনেক। ব্যবসা বাণিজ্য করবে। তবে সামাজিক পরিচয়ের দরকার আছে। ভালো একটা বিয়েথা করতে হলে সরকারি চাকরির বাজারদর বেশ ! দেখুক না টিরাই কইরা। এদেশে টাকা হইলে শালারে বাপ ডাকান যায় ! টাকার গরমে পিএসসির সামনে দিয়ে পাজেরো হাঁকিয়ে যায় লত্তু। একদিন পরিচয় হয় পিএসসির পিওন খলিলের সাথে। এই খলিল ৩৩ তম বিসিএসের সময় প্রশ্নফাঁসে জড়িত ছিল। পুলিশের হাতে ধরাও খেয়েছিল। তবু তার চাকরি যায়নি। বহাল তবিয়তে সে আরো শক্তি সঞ্চয় করেছে। বড় সাবগো সাথে সম্পর্ক করেছে। নিয়মিত প্রশ্ন ফাঁস করছে। লত্তু তাকেই খুঁজে পায়। বন্দোবস্ত পাকা। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, চন্দ্রিমা উদ্যান ঘুরেফিরে লত্তু দিন কাটায়। পরীক্ষার দিন খুব সুন্দর পরীক্ষা দিয়ে লত্তু ফুরফুরা মেজাজে দৌলতদিয়ায় এক চক্কর ঘুরে আসে। জীবনটা খারাপ না।

রেজাল্ট হলো। ছলিমের পোলা মাইনুদ্দি ফেল মারছে। লত্তু পাশ ! ছাগলনাইয়ার পাতিনেতা লত্তু বিরাট অফিসার হলো। চারটা গরু জবাই করে এলাকায় কাঙালিভোজ হলো। ছলিমুদ্দি ফোঁপাতে ফোঁপাতে পোলারে ফোনে জিগায় : ঢাকায় বইসা তুমি বা.. ফালাও? মাইনষের চাকরি হয় আর তুমি ধ..ফুটায়া ঘুইরা বেড়াও?

গল্পটি কাল্পনিক হলেও গত বারো বছরে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে এই দেশে। তরুণদের শেষ বিশ্বাসের জায়গাটিও আজ দেওলিয়া হলো ! আমাদের তরুণ প্রজন্ম আর বাঁচবে কোন আশায়? হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট হয়েছে, হচ্ছে এসব তো প্রতিদিনই প্রকাশ পাচ্ছে। তবুতো একটা আশার আলো জ্বলছিল আগাওগাঁওয়ে! আজ সেটিও নিষ্প্রভ হলো। আমাদের আর রইল কী?

ডি. এল. রায় কবি ছিলেন। তিনি সম্ভবত ভবিষ্যত দেখতে পেরেছিলেন। আর তাই তিনি এই গানটি লিখেছিলেন : এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি…! সত্যি, এমন অভাগা দেশ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। এ দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও বাকি নেই যেখানে ক্যারাপশন নেই।
ডি এল রায়ের গানের প্রথম লাইনটি ছাড়া আর সব মিথ্যা, বানোয়াট।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *