হুমায়ুন আহমেদের ভূত রাশেদের মাথায় অনেকদিন আগেই চেপে বসেছে৷ স্কুল কলেজ পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও মাথা থেকে সে ভূত আর নামেনি৷ লেখকের সব বই পড়ে শেষ করে ফেলেছে রাশেদ৷ হুমায়ুন আহমেদ “নৃপতি” নামে যে নাটকটি লিখেছে ১৯৮৬ সালে সেটাও পড়েছে৷ এই বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা- “যে হও রসিকজন, সে লও সন্ধান” কথাটা রাশেদের খুব প্রিয়। রাশেদ নিজেকে একজন রসিকজন মনে করে।
রাশেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে এখন বড় মাপের একটা সরকারী চাকরি করে৷ কিন্তু বইপড়া আর কবিতা লেখার প্রতি রাশেদের বড় বেশি ঝোক৷ মুহূর্তের মধ্যে কবিতা লিখে ফেলে৷ কবিতা যেন রাশেদের মনে খেজুর রসের মতো টুপটুপ করে পড়তেই থাকে৷ রাশেদ তার ফেসবুকে নিজের নাম দিয়েছে রাশেদ রাইমার৷ ইংরেজি Rhymer যার বাংলা করলে দাড়াঁয় ছড়াকার বা কবি৷ রাশেদের ফেসবুক টাইমলাইনে অসংখ্য স্বরচিত কবিতার ছড়াছড়ি৷ খুব সুন্দর নরম গলায় গানও গাইতে পারে রাশেদ৷ গান গাওয়ার সময় চোখ বন্ধ হয়ে যায় রাশেদের, মনে হয় যেন গানদের মনের গহীন থেকে সতর্কতার সাথে ধরে ধরে গলায় আনছে৷ আর পারে চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করতে৷ এই রাইমার রাশেদের মাথায় কবিতা আর গানের বাইরে সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে আছে হুমায়ুন আহমেদ৷ মাঝেমাঝেই খাতা কলম নিয়ে বসে যায় নিজের ছোটবেলার স্মৃতি লিখে রাখার জন্য৷ হুমায়ুন আহমেদের বলপয়েন্ট, ফাউন্টেন পেন, হিজিবিজি বইয়ের মতো তারও ইচ্ছা নিজের জীবনের তুচ্ছ, সহজ সরল ঘটনা গল্প করে তোলা৷ রাশেদের মনে হয় তার লেখা হয়ে উঠে হুমায়ুন আহমেদের মতো৷ কিন্তু এসব কথা রাশেদের একান্ত নিজের কথা, নিজের অনুভূতি৷ নিজের কথা সহজ সরল করে অকপটে বলতে গেলে সবাই হুমায়ুন আহমেদ হয়ে যায়৷ রাশেদ তাই মনে করে৷ আমিও তাই মনে করি৷
শৈশব আর কৈশোরে বছরে একবার হলেও জ্বর আসতো আমার৷ জ্বর আসলেই মাথায় পানি ঢালা ছিল প্রথম চিকিৎসাপত্র৷ খাটে শুইয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে একটা পলিথিন বালতিতে লাগিয়ে মগ দিয়ে পানি ঢালতো আমার আম্মা বা নানী৷ পানি দেয়ার সময় শরীর শিরশর করে উঠতো আর ভেজা চুল থেকে একটা বিশ্রী রকমের গন্ধ নাকে আসতো৷ জ্বর আসলে পানি তিতা লাগে আর পানির গন্ধটাও বিস্বাদ লাগে৷ গলা অনেক শুকিয়ে গেলেও পানি খেতে ইচ্ছা করতো না৷ পানি খেলেই বমির ভাব হয়৷ তাই চিনি আর লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে দিত আম্মা৷ কিন্তু পানির তৃষ্ণা শরবতে মিটে না৷ মনে মনে ভাবতাম জ্বরটা সেরে গেলে চাপকলে মুখ লাগিয়ে খায়েশ মিটিয়ে পানি পান করবো৷ পানি যে এতো মজার জিনিস তা জ্বর আসলেই উপলব্ধি করতাম৷ পানির স্বাদ নাই তা বেঠিক কথা৷ জ্বর পুরোপুরি সেরে গেছে তা বুঝতাম যেদিন পানি খেতে গিয়ে আর বিস্বাদ লাগতো না, শরীর গুলিয়ে আসতো না৷ জ্বর কিছুটা কমলে একদিন স্কুলে গিয়ে ভয়ে ভয়ে চাপকলে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে নিলাম৷ পানির স্বাদ ফেরত এসেছে৷ জ্বর একেবারে চলে গেছে৷ কিছুটা জ্বরজ্বর ভাব থাকলেও আমি স্কুলে যেতাম৷ সামান্য জ্বরে স্কুল কামাই দেয়ার মানে হয়না৷ আমার তো আর কোন মরণব্যাধি হয় নাই৷ জ্বর আসা এখন মরণব্যাধি৷
জ্বর আসলে নাপা প্যারাসিটামল যে খেয়েছি তাও মনে হয় খাইনি৷ শুধু এক ধরণের মিষ্টি সিরাপ খাওয়ার কথা মনে আছে৷ কিছুদিন গেলে জ্বর এমনিতেই চলে যেত৷ আমার জ্বর আসলে পানি খেতে পারতাম না এটাই ছিল প্রধান বিপদ৷ আর বমি৷ তাছাড়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে আমার ভালই লাগতো৷
একবার জ্বর আসলে বিছানায় শুয়েশুয়ে একটা বই পড়লাম৷ সিলেবাসের বাইরের বই৷ অসুখ বিসুখ হলেই এসব আউট বই কিছুটা পড়া যেতো৷ এই পড়াকে অপড়া মনে করা হয়৷ পাঠ্যবই হলো পড়ার জিনিস৷ বইটার নাম ছিল “অসুখের পরে”৷ লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়৷ কয়েক পাতা পড়ে আর পড়িনি ৷ অসুখের মধ্যে অসুখ নিয়ে পড়ার কোন মানে হয়না৷ কষ্টের মধ্যে আনন্দ খুঁজতে হয়, অসুখের মধ্যে সুখ৷ সুখের তেমন কোন বই পেলাম না৷ আমাদের বাসায় যে অনেক বই ছিল তা নয়৷ যা অল্প কিছু বই ছিল তা রাখা থাকতো শোকেসের ভেতরে৷ গ্রামের বাড়িঘরগুলোতে এই শোকেস জিনিসটা বলা যায় প্রধানতম আসবাব৷ এই আসবাবের পরেই স্থান হলো স্টিলের লম্বা আলমারীর৷ শোকেসের কাঁচের মধ্য দিয়ে বাইরে থেকে বইয়ের টাইটেল পড়া যেত৷ বিছানায় শুয়েশুয়ে বইয়ের টাইটেল দেখতাম আর কল্পনা করে নিতাম কি লেখা থাকতে পারে বইয়ের ভেতরে৷ জ্বর হলে অসুখের পরে বইটার টাইটেল চোখে পড়লো৷ অসুখ নিয়ে কিছু একটা থাকবে তাই ভেবে এই জ্বরের সময় বইটা বের করে পড়তে শুরু করেছিলাম৷
বই যে আমাদের বাসায় একদম কম ছিল তাও না৷ কিন্তু কমে যায় আস্তেধীরে৷ আমিও বড় হতে থাকলাম আর বইয়ের সংখ্যাও কমতে থাকলো৷ শোকেস থেকে হারিয়ে গেলো চানক্য সেনের “পিতা পুত্রকে”, সমরেশ মজুমদারের “কালপুরুষ” সহ আরো অনেক বই৷ অসুখের পরে বইটা সবার আগে গায়েব হয়ে যায়৷ আমার অনেক মহাপুরুষ আত্মীয় স্বজনেরা বাড়িতে কখনো সখনো দেখা করতে আসলে হাতে করে দুই একটা বই নিয়ে যেতো৷ এই মহাপুরুষেরা যে অনেক বই পড়ে আর বইকে অনেক তোয়াজ করে ব্যাপারটা তা না৷ আমাদেরকে বই পড়া থেকে বঞ্চিত করাই তাদের আসল উদ্দেশ্য বলে আমার মনে হতো তখন৷ এখনো খানিকটা তাই মনে হয়৷ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ভাবতে পারেন৷ আমার এক ফুপাতো বোনের জামাই পিতা পুত্রকে বইটা নিয়ে গেল আর বলল তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ফেরত দিয়ে দেবে৷ তাদের বাড়িতে আজ পর্যন্ত আমার যাওয়া হয় নাই৷ এখন গেলে যে বইটা ফেরত পাব তার কোন আশ্বাস আছে বলে আমার মনে হয়না৷ বইটা উনি অবশ্যই হারিয়ে ফেলেছে৷
এরকম করে বুকশেলফের মধ্যবর্গীয় সংস্করণ শোকেজের বাম পাশের পাঁজর খালি হতে থাকে৷ আমি কিছুটা বড় হয়ে সাটুরিয়া বাজার থেকে কিছু বই আস্তেআস্তে কিনে পাঁজরটা কিছুটা পূর্ণ করি৷ পূর্ণ পাঁজরে তারপর থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম৷ চাবি থাকতো আমার কাছে৷ মামলা ডিসমিশ আসামী খালাশ৷ এই বুদ্ধি আগেই করলে অতোগুলো বই হারিয়ে যেতো না৷
শুধু বই না৷ আমাদের বাসা থেকে হারিয়ে গেছে আরও অনেক পুরাতন জিনিস৷ এসব জিনিসের বর্তমানে আর্কাইভাল মূল্য আছে বলে আমি মনে করি৷ একটা পুরাতন যাকে বলে এন্টিক একটা মাঝারী সাইজের ছুরি ছিল৷ লোহা আর কাঁসা দিয়ে তৈরী৷ একটা বাটন ছিল নিচের দিকে৷ ঐ বাটনে ক্লিক করলে ভাজ হয়ে পেটের ভেতরে লুকিয়ে থাকা চাকুর ধারালো অংশ বের হয়ে আসতো একটা ছ্যাত শব্দ করে৷ পাকিস্তান আমলের মাটির ব্যাংকভর্তি পয়সা ছিল৷ এসব পয়সা ঝাড়ুর শলা দিয়ে খুচিয়ে বের করে পয়সা খেলতাম৷ এদের যে একটা মূল্য থাকতে পারে তা পোলাপানের বুঝার কথা না৷ পয়সা খেলে আবার মাটির ব্যাংকে ঢুকিয়ে রাখতাম৷ অনেকগুলো পাইলট কলম ছিল৷ এসব কলমে কালি রিফিল করা যেত৷ একটা পুরাতন মাটির তৈরী মাঝারী আকারের বিড়ালের পুতুল ছিল৷ পেছনের পায়ে বসে সামনের দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ দিঘুলিয়া গ্রামের পালপাড়ার এক কুমার নিয়ে গেল আর ফেরত দেয়নি৷ বলেছিল এটার আদলে আরো কয়েকটা বানাবে৷ তারপর এটা ফেরত দেবে৷ কথা রাখেনি৷ আমার আব্বাও উচ্চবাচ্চ কিছু করেনি৷ আব্বাও ভেবেছে কি আর এমন জিনিস এইটা৷ দুইটা হরিণের শিং ছিল৷ আমার দাদার সংগ্রহ৷ কিভাবে এগুলো বাড়িতে আসলো তা আর জিজ্ঞাসা করা হয় নাই কখনো দাদাকে৷ দাদা এখন পরলোকগত৷
আরও অনেক কিছু ছিল৷ কি কি ছিল সেটাও আজ ভুলে গেছি৷ কোনটা কে কবে কিভাবে নিয়ে গেছে তা আর মনে নাই কারও৷ সেগুলো হারিয়ে গেছে৷ থাকলেও যে এগুলো বিশাল ধন সম্পদ হতো তা না৷ বাড়ির একটা পাচঁ টাকা দামের দশ নাম্বারি সুইঁ হারিয়ে গেলেও খারাপ লাগে৷ এটা হারানোর খারাপ লাগা৷ নিজের আর নিজেদের জিনিস হারানোর খারাপ লাগা৷ অসুখের পরে বইটা থেকে একটা লাইন মনে পড়ে গেলো৷ “মানুষকে ধরে রাখা যে কত কঠিন তা বন্দনার মত আর কে জানে? কেউ মরে যায়,কেউ চলে যায়। কী যে একা আর ফাঁকা লাগে তার! ” এই কথাটা বস্তু বা জিনিসের বেলায়ও খাটে৷ যা কিছুই হারাক না কেন তা একটা ফাঁকা জায়গা, শূন্যস্থান রেখে যায়৷ আগে হউক পরে হউক সে শূন্যস্থানের কথা মনে পড়বেই৷ আমার যেমন মনে পড়ছে প্রায় ২৫ বছর পরে৷
যাই হউক অসুখ বিসুখ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের কি ছিল আর কি হারালো তার এক ফিরিস্তি দিয়ে দিলাম৷ জ্বর ছাড়া আর একটা অসুখ আমাকে অনেক ভুগিয়েছে শৈশবে আর কৈশোরে৷ গ্রামে এই অসুখকে বলে সাপের বাতাস লাগা৷ এই জিনিসটা আসলেই কি তা আমি আজও জানি না৷ গুগলে বাংলায় সাপের বাতাস লিখে সার্চ করেছিলাম একদিন৷ একটা সাইটে সাপের বাতাস নিয়ে এই ব্যাখা পেয়েছিলাম৷ ব্যাখাটা বিজ্ঞানসম্মত মনে হয়েছিল কিছুটা৷
“এই পৃথিবীতে বহু প্রজাতির সাপ আছে, তার মধ্যে বিষাক্ত সাপের সংখ্যা সীমিত।যে সাপের মাথায় দুটি লম্বা দাগ থাকে ওই সাপই বিষাক্ত সাপ।এটাই বিষাক্ত সাপ চেনার সব চাইতে সহজ উপায়। সাপের বিষে থাকে Zinc sulfide যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিছু প্রজাতির সাপ আছে যাদের শরীরে Zinc sulfide-এর পরিমান বেশি হয়ে গেলে তা ফেলে দেয় অর্থাৎ সাপটি যদি বিষ কোন কিছুতে প্রয়োগ করতে না পারে তবে বিষ শরীর থেকে বের করে দেবে।সেটা কোন প্রাণি-দেহে দংশন করে হতে পারে আবার খোলা পরিবেশে ছুড়ে ফেলেও হতে পারে।এখন যদি ওই বিষের নির্যাস মানুষের নাকে আসে তাহলে সে অসুস্থ হতে পারে।
কিছু ফুল আছে যাদের গন্ধ মানুষকে অসুস্থ করে দেয়। তাহলে সাপের বিষের নির্যাস মানুষ বা অন্য কোন প্রাণিকে অসুস্থ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।”
সাপের বাতাস ছাড়াও আরও এক ধরণের বাতাস আছে৷ বাঘা বাতাস৷ নাম যেমন কাজও তেমন৷ সাপের বাতাসের চেয়ে শক্তিশালী৷ সাপের বাতাস লাগলে মাথা ঘুরায়, বমি হয়, খাবার আর পানীয় বিস্বাদ লাগে৷ যাই খেতাম তাই বমি হয়ে বের হয়ে যেত৷ সাপের বাতাস লাগলে আমার নানী আমাকে নিয়ে যেত বাছেদ নামে এক কবিরাজের কাছে৷ বাছেদকে পাওয়া না গেলে নিয়ে যেত গণী নামে আরেক কবিরাজের কাছে৷ কবিরাজ মানেই ঝাড়ফুঁক৷ বাছেদ কবিরাজ আমার মাথা থেকে ঝাড়তে ঝাড়তে পায়ের পাতা দিয়ে বিষ বের করে মিশিয়ে দিত মাটিতে৷ তারপর মাটিতে একটা দাগ কেটে দিত আংগুল দিয়ে যেন বিষ আবার শরীরে না ফেরত যেতে পারে৷ ঝাড়াঝাড়ির পর এক চিমটি লবণ মিশিয়ে এক গ্লাস পানি দম ধরে এক নিশ্বাসে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে খেয়ে ফেলতে বলত বাছেদ দাদা৷ আমরা উনাকে দাদা ডাকতাম৷ ঝাড়ফুঁক দিয়ে বিষ নামতো নাকি লবণ পানিই বিষ পানি করতো তা আমার জানা নাই৷ আদৌ এটা বিষের ব্যাপার কিনা সেটাও বলতে পারব না৷ তবে ঝাড়ফুঁক আর লবণ পানির চিকিৎসার পরে আমি ভালো বোধ করতে শুরু করতাম৷ মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখাও থাকতে পারে৷ সেটাও আমার স্পষ্ট জানা নাই৷ কিন্তু মাঝেমাঝে ঝাড়ফুঁক শেষে বাসায় ফেরার পর আবার মাথা ঘুরাতে আর বমি হতে শুরু করতো৷ আবার ফেরত যেতে হতো বাছেদ দাদার কাছে৷ বিষ আবার ফেরত এসেছে৷ সহজে নামতে চাইছে না৷ বিষাক্ত সাপের বিষ৷ রাসেল ভাইপার, চন্দ্রবুড়া সাপও হতে পারে৷ আবার ঝাড়তে হবে আর লবণ পানি খেতে হবে৷ প্রায় সময়ই একবারের চেষ্টায়-ই বিষ নেমে যেত৷ দ্বিতীয়বার যেতে হতোনা আগ-বাদালিয়া গ্রামে৷ বাছেদ দাদার বাড়ি এই গ্রামেই। অসুখ বিসুখ নিয়ে কম লেখাই ভালো৷ পানি হইল বিষ, লেখা হইল শেষ৷