২০০৫ সালে রোমে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক সম্মেলন থেকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার চালু করা হয়। নেদারল্যান্ড ভিত্তিক শিশু অধিকার সংগঠন ‘কিডস রাইটস’ এই পুরস্কার প্রদান করে। প্রতিবছর একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পুরস্কারটি হস্তান্তর করেন।
এ বছর ‘শিশুদের নোবেল’খ্যাত এই পুরষ্কারটি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কিশোর সাদাত রহমানকে দেওয়া হয়েছে। ১৭ বছর বয়সী সাদাত নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ‘সাইবার টিনস’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করার মাধ্যমে সাইবার বুলিং থেকে শিশুদের রক্ষা করার প্রয়াসের জন্য তাকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার নেদারল্যান্ডসে ছোট্ট পরিসরে আয়েজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অনুষ্ঠানটি অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাদাতের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালে এই পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই পরের বছর জয় করেছিলেন নোবেল।
সাইবার বুলিং মানে অনলাইনে হয়রানির শিকার হওয়া।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর (১৫) আত্মহত্যার পর কাজে নামেন সাদাত। তিনি তাঁর বন্ধুদের সহায়তায় ‘নড়াইল ভলেন্টিয়ারস’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন শুরু করেন। এ সংগঠন বেসরকারি সংস্থা একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ–২০১৯’–এ বিজয়ী হয়ে তহবিল পায় এবং তহবিলের মাধ্যমে তারা ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেন।
এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর–কিশোরীরা জানতে পারে কীভাবে তারা অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে পারে। অ্যাপ্লিকেশন সাইবার টিনসের মাধ্যমে, তরুণরা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবী একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গোপনে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ দায়ের করতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিশোর–কিশোরী এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। এই অ্যাপের মাধ্যেম ৬০টির বেশি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এবং ৮ জন সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে।
পুরস্কারের সঙ্গে এক লাখ ইউরো পাচ্ছেন সাদাত, যে অর্থ তিনি তার এই কাজে ব্যয় করতে পারবেন।
এবিএন আম্রো, একটি ডাচ ব্যাংক ২০০৬ সাল থেকে পুরষ্কারের মূল স্পনসর।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি তিনটি তরুণ-তরুণীর মধ্যে একজন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। সাইবার বুলিংয়ের কারণে উদ্বেগ, বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদে নিদ্রাহীনতা, নিজের ক্ষতি করা বা এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।