আদ্রিক আর হৃদ্যতা দুই ভাইবোনের শখ- গল্প শোনা। যখন যাকে কাছে পায় তার কাছেই গল্প শুনতে চায়। একবার হলো কি, তারা দাদুর বাড়ি গেল। তারা দাদা কে দাদু ভাই আর দাদু কে দিদিমা বলতো। তো তারা দাদুর কাছে গল্প শোনার বায়না ধরলো। দাদু ভাই শাহ্ আজিজ স্যারও অবসরে তখন। তিনিও ভাবছিলেন নাতিদের সাথে কীভাবে ভাল সময় কাটানো যায়। মিলেগেল দাদু নাতিদের ভাবনা। দাদু গল্প বলতে শুরু করলেন।
জানো দাদু ভাইয়েরা, আজ তোমাদের বন্ধুত্বের গল্প শোনাব।
হৃদ্যতা বললো- আচ্ছা দাদু, বন্ধুত্ব মানে কী?
দাদু: শুনো তোমরা, বন্ধুত্ব শব্দটা মাত্র দুৃই অক্ষরের হলেও এর গভীরতা কিন্তু অনেক। কারণ, মানুষের জীবনে একটা বড় উপহারের নাম- বন্ধুত্ব।
আদ্রিক বললো- কেন, কেন, কেন..?
দাদু : কারণ, ভাল বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। বন্ধুত্ব মানে হলো বিশ্বাস আর আস্থার সম্পর্ক। একে অপরের নি:স্বার্থ সহযোগী হবে তারা। বিপদের সময় পাশে থাকবে। সুখে-দুঃখে সমসময় পাশে থাকবে যে সেই হলো প্রকৃত বন্ধু।
আদ্রিকের প্রশ্ন- নকল বন্ধু কি হতে পারে?
দাদুঃ না, বন্ধুর নকল হয়না। তবে কেউ কেউ বন্ধু সেজে নকল বা ছলনাকারীর ভূমিকা নিতে পারে। এ বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
এবার হৃদ্যতা কঠিন প্রশ্ন করে বসল। তাহলে দাদু আমাকে বলো- কেমন বন্ধু বানানো উচিত?
দাদুঃ সুন্দর প্রশ্ন করেছ তুমি। তোমাকে ধন্যবাদ। শুনো, জীবনে এমন বন্ধু বানানো উচিত, তা যেন হয় আয়না আর ছায়ার মতো।
দাদুর জবাব শুনে পাল্টা প্রশ্ন করলো আদ্রিক। বুঝলামনা দাদু ভাই। আয়না আর ছায়ার সাথে বন্ধুত্বের কী সম্পর্ক।
দাদু: বুঝিয়ে বলছি শুনো, আয়না কখনো মিথ্যা বলেনা। মানে তুমি যেমন সে তোমাকে ঠিক তেমনিই দেখায়। আর ছায়া কখনো তোমাকে ছেড়ে যায় না। একারণে বলা হয়, বন্ধুত্ব হলো আয়না ও ছায়ার মতো। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত নির্বাক কমেডি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, ‘আয়না হচ্ছে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কারণ আমি যখন কাঁদি সে তখন হাসেনা।’
দারুণ উদাহরণ দিয়েছ দাদু ভাই, বললো আদ্রিক ও হৃদ্যতা।
খানিক ভেবে দাদু বললেন, বন্ধুত্ব নিয়ে একটি চমৎকার গল্প শোনবে?
শুনব, শুনব বললো আদ্রিক ও হৃদ্যতা।
দাদু: তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিলো। শত্রুপক্ষের দিক থেকে হঠাৎ একপশলা গুলি ছুটে এল। একজন সৈন্য কোনভাবে নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারলেও তার বন্ধুর গায়ে গুলি লেগেছিলো। সে তার লেফটেন্যান্টের কাছে অনুমতি চাইলো আহত বন্ধুটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু লেফটেন্যান্ট বললেন, ‘তুমি যেতে পারো, তবে আমি মনে করি না এটা উচিত হবে। তোমার বন্ধু হয়তো গুলি খেয়ে মারা গেছে। তাছাড়া তাঁকে আনতে গেলে তোমার জীবনের ঝুঁকি আছে। লেফটেন্যান্টের সতর্কবাণী শুনেও সে তার বন্ধুর কাছে ছুটে গেল এবং তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে ফিরে আসলো। লেফটেন্যান্ট তখন তাকে বললো- আমি আগেই বলেছিলাম তোমার ওখানে যাওয়া উচিত নয়। সে হয়ত মারা গেছে। তোমার যাওয়াটা অর্থহীন।
সৈনিকটি তখন বললো, ”না, আমার যাওয়া অর্থহীন ছিল না স্যার!”
-‘তোমার বন্ধুটি মারা গেছে, তাই তোমার যাওয়াটা অর্থহীন।”
সৈনিকটি তখন বললো, ”জী না স্যার, আমি যখন তার কাছে পৌছালাম তখনও সে জীবিত ছিলো। তাই আমি তার শেষ কথা শোনার পরিতৃপ্তি পেয়েছি।
লেফটেন্যান্ট জানতে চাইলেন, সে এমন কী কথা বলেছে!
জবাবে সৈনিক বললো, সে আমাকে বলেছিল, ”জিম…আমি জানতাম তুমি আসবে।”
দাদু: বুঝলে আমার দাদু ভাইয়েরা- এটাই হলো বন্ধুত্বের নিদর্শন।
আদ্রিক ও হৃদ্যতদা বললো- হুমমমমমমমম।
আদ্রিক বললো- আচ্ছা দাদু, বন্ধুত্ব কার কার সাথে হতে পারে।
দাদু: ভাল বন্ধুত্ব হতে পারে সহপাঠির সাথে। হতে পারে প্রতিবেশি, আত্মীয় বা পরিবারের কেউ।
হৃদ্যতার প্রশ্ন- ভাই বোনের মাঝে বন্ধুত্ব হয়না?
দাদু: হয়, ভাই বোন খুব ভালো বন্ধু হয়।
আদ্রিক : আর বাবা, মা?
দাদু: হ্যাঁ, বাবা-মা’র সাথে বন্ধুত্ব হলে খুব খুব ভাল হয়।
আদ্রিক ও হৃদ্যতা: আচ্ছা দাদু ভাই, ভাল বন্ধু কেমন বন্ধু?
দাদু: যে বন্ধু খারাপ কাজে উৎসাহ দিবেনা, নিজেও খারাপ কাজ করবেনা। যে তোমাকে বিপদে ফেলবে না, তুমি যদি কোনো কারণে বিপদে পড়, সে তোমার পাশে থাকবে। ভয়ে বা নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালাবে না। তোমরা তো জানো, দুধ গরম করার জন্য তার সাথে অল্প পানি মেশাতে হয়। গল্পটা তা নিয়েই। পানি দুধের সাথে বন্ধুত্ব করল। তাই সে নিজের স্বরূপ ত্যাগ করে দুধের সঙ্গে মিশে গেল।
হৃদ্যতা: বুঝলাম না।
আদ্রিক: আরে গাধা তাও বুঝলে না। পানি দুধের সাথে মিশে গেলে পানির অস্তিত্ব থাকে না। সে মিশে গিয়ে দুধের রূপ ধারণ করে।
হৃদ্যতা: হুমমমমমমমমমমম।
দাদা: দুধ পানিকে বলল, “তুমি যেভাবে শুধু বন্ধুত্বের কারণে নিজের স্বরূপ ত্যাগ করে আমার সাথে মিশে গেলে, আমিও আমাদের বন্ধুত্ব পালন করব। আজ থেকে তুমিও আমার দামেই বিক্রি হবে !” তার মানে দুধের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে পানির দাম বেড়ে গেল।
দুধকে যখন আগুনে ফোটানো হয়, তখন পানি বলে- এবার আমার বন্ধুত্ব পালন করার পালা। তাই তোমার আগে আমি মৃত্যু বরণ করবো ! তাই গরম তাপে শোষিত বাষ্প হয়ে পানি আগেই শেষ হয়ে যায় ! দুধ তার বন্ধু পানিকে এভাবে মৃত্যু বরণ করতে যখন দেখে, দুধ তখন যন্ত্রণায় উথলে উঠে আগুনকে নেভানোর চেষ্টা করে। আর তখন কিছু পানির ফোঁটা ছিটিয়ে তার বন্ধুকে উথলানো দুধের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হলে দুধ আবার শান্ত হয় ! বুঝলে, বন্ধুত্বের ব্যাপারটা কেমন!
আদ্রিক ও হৃদ্যতা হাততালি দিয়ে বললো দারুণ গল্প শেখালে প্রিয় দাদু ভাই। দুধ এবং পানির মতো আমরাও তোমার বন্ধু হতে চাই।